শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

খাইরুল ইসলাম পাখি’র কিচিরমিচির-এগারো

মৃত্যুপুরী নিউইয়র্ক এবং আমাদের বেঁচে যাওয়া

খাইরুল ইসলাম পাখি

প্রকাশিত: ০১:৩২, ২৩ মার্চ ২০২৪

মৃত্যুপুরী নিউইয়র্ক এবং আমাদের বেঁচে যাওয়া

খাইরুল ইসলাম পাখি

আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে  পেন্ডামিকের সেই বিভীষিকাময় সময়কাল। বিশেষ করে আমরা যারা নিউইয়র্কার। কেননা সেই সময়টাতে জগৎবিখ্যাত এই নগরী যেন হয়ে উঠেছিল মৃত্যুপুরী। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি তখন। প্রতিদিন নিউইয়র্কবাসী হারিয়েছিল শত সহস্র আপনজন। হাসপাতালগুলোতে কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। মরদেহ রাখার স্থান হয়ে উঠেছিল ট্টাক আর লরি। কবরস্থান আর দুর্গম স্থানে বড় গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দিয়ে গনকবর দেয়ার দৃশ্য আমরা প্রত্যক্ষ করেছি প্রতিদিন।

উৎকন্ঠা আর আতঙ্ক গ্রাস করেছিল গোটা নগরীকে। এই শহরে আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি তারা নিছক ভাগ্যবান। এই বেঁচে থাকা আমার কাছে লটারির মতন মনে হয়!  এখনো মনে হয় কি করে বেঁচে গেলাম! একেই হয়তো বলে দৈবক্রমে বেঁচে যাওয়া।
এভাবে গোটা বিশ্বই হয়ে উঠেছিল মহাতংকে মোড়া এক নতুন ও অচেনা বিশ্ব। যে বিশ্ব আগে আমরা দেখিনি।

কি অবাক, এ মহামারী বা অতিমারি শুধু মানুষকে আঘাত করলো! মানুষের প্রতি প্রকৃতির এ কোন মহা আক্রোশ? প্রকৃতি যেন মহা ক্ষুব্ধ মনুষ্য জাতির উপর।

‘ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়’। পেন্ডামিক বিষয়টা যেন এ প্রবাদের মতই। আমরা মানুষেরা প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে নানাভাবে আঘাত করছি তো করছি। তাই কি পৃথিবীও ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের লক্ষ্য করে পাটকেল ছুঁড়ে মারছে সময় সময়? এই যে পৃথিবী ও প্রকৃতি ক্ষেপে গেল, হঠাৎ এমন কেন হলো? কি এমন অনিয়ম করি আমরা?

কি করি না আমরা? মন চাইলো, পাহাড়ের পর পাহাড় কাটলাম। মন চাইলো, নদী জলাশয় ভরাট করা শুরু করলাম। মনের আনন্দে পশুপাখি কীটপতঙ্গ হত্যা করলাম। মনের আনন্দে ধোঁয়া গ্যাস ইত্যাদি দিয়ে আকাশকে বিষাক্ত করলাম, শষ্যরাজি সবুজ ধ্বংস করলাম।

এই যে আমাদের ইত্যাকার কা- জাগতিক সুখের লাগি, আর কত সইবে পৃথিবী। এই যে স্বেচ্ছাচারিতা, এর তো কোন শেষ নেই। এসব অনাচার সহ্য করতে না পেরেই পৃথিবী হয়তো ফুঁসে ওঠে সময় সময়। আমাদের জানান দেয়, সাবধান করে ধ্বংসযজ্ঞ থামানোর। মানবজাতিকে হয়তো বলে স্বার্থপরতা কমাতে। কেননা এই পৃথিবীতে অন্যান্য যাদের বসবাস তাদেরও তো অধিকার আছে ওসবে। তারাও বাঁচতে চায়।

আমরা কি কখনো এমন ভেবেছি যে কোভিড ১৯-এ কেন শুধুমাত্র মানুষই আক্রান্ত হলো? এটা কিন্তু বিরাট প্রশ্ন? আমাদের সাথেই তো সহস্র প্রাণীকুলের বসবাস। কত সহস্র বৃক্ষরাজি। সাগরতলে আরো কত কি। সবাইকে ছাপিয়ে শুধুমাত্র মানুষই আক্রান্ত হল? কি জানান দিল প্রকৃতি?

আমরা কি বুঝেছি, প্রকৃতি যদি ক্ষেপে যায়, তবে মানুষ যে কত অসহায় প্রকৃতির কাছে? কত তুচ্ছ ঠুনকো আমাদের জীবন! তবুও কেন আমরা অবুঝ হই নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে। কবে আমরা শুধরাবো? কবে আমাদের বোধে আসবে এ ধরিত্রীটা শুধুমাত্র মানুষের একার নয়।

কবে আমরা আগামী দিনের কাছে, আগামী প্রজন্মের কাছে, জল স্থল আর অন্তরীক্ষের কাছে এমন শপথ নিব-“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ অঙ্গীকার”। এ বসুন্ধরা হোক সবার, হোক শান্তিধাম। লেখক: অভিনেতা।

শেয়ার করুন: