শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি!

হাবিব রহমান: সিনিয়র সাংবাদিক

আপডেট: ২১:২৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি!

ফাইল ছবি

কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে একটা নিউজ দেখেছিলাম। তা ছিলো এমন-“সরকার বিজয়ের সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদের নাম উচ্চারণ করেনি’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি!’

আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে -মায়ের চেয়ে নাকি মাসিদের দরদ অনেক বেশি হয়। মাসিদের দরদ থাকা কিন্তু দোষের কিছু নয়। মাসিদের দরদ থাকে এবং তারা সময়ে সময়ে মায়েদের চেয়েও বেশি কান্নাকাটি করেন। যদিও তা মায়ের মতো হয় না। কারণ মায়ের কান্নাকাটিটাই খাঁটি বস্তু। মা কিন্তু অনেক সময় কাঁদতেও পারেন না; শোক অল্প হলে কাতর থাকেন, বেশি হলে পাথর বনে যান। ওই জ্ঞান থেকেই, মাসিরা কান্নাকাটি করলে মায়েদের মনে সন্দেহ দেখা দেয় যে মাসিরা হয়তো ভান করছেন।

কথাটা হঠাৎ মনে পড়লো এজন্য গত সপ্তাহে ফেসবুকে কিছু কমেন্ট চোখে পরায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রবাসী ‘ভাস্কর’ আখতার আহমেদ রাশার ‘শিকড়ে প্রোথিত, ভালোবাসায় প্রসারিত’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনী। গাছের ডালপালা, শিকড় ও কা-ের মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা শিল্পকর্ম এই প্রদর্শনীতে স্থান পায়।

উল্লেখ্য, নীলফামারীর সন্তান আখতার আহমেদ রাশা প্রায় তিনদশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র হয়েও ২০০২ সালে তিনি ড্রিফটউড সংগ্রহ ও তা নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রবাসেই হয়েছে তার শিল্পকর্মের একাধিক প্রদর্শনী। রাশার তৈরি ভাস্কর্যে ফুটে উঠেছে ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ থেকে কভিড-১৯ মহামারীর সময়ও। এছাড়া শীতের ভোরে খেজুরের রস, টোকাই, রোহিঙ্গাও আছে তার শিল্পকর্মে।

এই প্রদর্শনীর পর বাংলাদেশের একজন শ্রদ্ধেয় শিল্পীর কন্যা সামাজিক মাধ্যমে তাঁর মায়ের শিল্পকর্ম নকল এবং চুরির অভিযোগ তোলেন প্রমাণাদিসহ। যা পরবরিতীতে নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় ছাপা হয়। তারপরই দেখলাম নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন অতি চেনা মুখ নবযুগ পত্রিকা এবং তার সম্পাদককে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। যার একটি অংশ ছিলো এমনঃ

“নবযুগ পত্রিকায় শিল্পী আখতার আহমেদ রাশা সম্পর্কে একটি নেগেটিভ নিউজ দেখে অবাক হলাম এবং কষ্ট পেলাম। এই খবরটি ছাপাবার আগে কি নবযুগ শিল্পী আখতার আহমেদ রাশার সাথে কথা বলে নিয়েছিলেন? বিজ্ঞাপন না দিলে তো কোন খবরই আসে না পত্রিকায় আর এমন রসালো খবর বিজ্ঞাপন ছাড়াই স্থান করে নিল পত্রিকার প্রথম পাতায়!”

প্রিয়জন সম্পর্কে কোন নেতিবাচক সংবাদ চোখে পড়লে কারো খারাপ লাগা দোষের কিছু নয়। বরং একজন সুস্থ মানুষের জন্য এটাই অতি স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু একটি সংবাদপত্রকে আক্রম করে তিনি পরবর্তীতে যা লিখেছেন তা আমার কাছে শোভনীয় মনে হয়নি বলেই আমার এ লেখার অবতারণা।

তিনি ঢালাওভাবে অভিযোগ করেছেন বিজ্ঞাপন না দিলে কোন খবরই আসে না পত্রিকায়। এটাও নিশ্চয়ই আলোচনার দাবী রাখে। তিনি নিজে একটা বড় সংগঠনের অধিকর্তা। তাহলে কি এটাই বলবো যে যে তার সংগঠনের যেসব নিউজ বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয় তা নিশ্চয়ই তিনি বিজ্ঞাপন দিয়েই ছাপান?

আবার যদি অন্যদিক দিয়ে বলি আপনারা যারা সিটি বা সমাজের বিভিন্ন সহৃদয় মানুষের অনুদানে সংগঠন পরিচালনা করেন, যে সব সংবাদ মাধ্যম আপনাদের সংবাদ প্রচার করে সহযোগীতা করে তাদের প্রতি কি আপনারা কি ন্যুনতম দায়িত্ব পালন করেন? একটা সংবাদপত্রকে ঘর ভাড়া দিতে হয়, সংবাদকর্মীদের বেতন দিতে হয়, প্রেসসহ আনুসাংগিক অনেক খরচ আছে। তারা যদি কমিউনটির রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কাছে বিজ্ঞাপনের দাবী জানান তাকি খুবই অযৌক্তিক বলে মনে হবে?

দ্বিতীয়ত: কোন সংবাদ পত্রিকার কোন জায়গায় ছাপা হবে তা নির্ধারণ করবেন পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। তা না হয়ে সেটাও কি বাইরে থেকে কেউ নির্ধারণ করে দিবেন?

আমি আখতার আহমদ রাশাকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না। এর জবাব দেয়ার যদি প্রয়োজন হয় নিশ্চয়ই নবযুগ কর্তৃপক্ষ দেবেন। আমার প্রশ্ন হলো সংবাদটা যেহেতু রাশাকে নিয়ে। সংবাদ প্রকাশের পর তিনি যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হন তবে তারই সবার আগে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত। হয়তো প্রতিবাদলিপি পাঠাবেন সংশ্লিষ্ট পত্রিকায়। তাতে সন্তুষ্ট না হলে সংবাদ সম্মেলন করবেন বা এমনি অনেক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম জনাব রাশা চুপচাপ অপরদিকে তৃতীয় পক্ষ সরব-এটা কি মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হয়ে গেলোনা!

আসুন না আমরা একটু অপেক্ষা করি। জনাব রাশা ফিরে আসুক। তার বক্তব্য কি শুনি। যার কাজ তাঁকেই করতে দিন না!

এ বিষয়ে নিউইয়র্কের একজন প্রবীন সাংবাদিক, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক, শ্রদ্ধেয় নাজমুল আহসানের একটি বক্তব্য উদ্বৃত করার লোভ সামলাতে পারলাম না। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি মন্তব্য করেছেন সোস্যাল মিডিয়ায়। তা হলো:

“সাংবাদিকতার নীতিতে কারো ‘বিরুদ্ধে’ খবর ছাপা হয়, তাঁর মতামতটিও প্রকাশ করা প্রয়োজন-এমন রীতি সাংবাদিকতার কোন বইয়ে লেখা আছে জানি না। সম্পাদক যদি ‘মনে’ করেন খবরটি তথ্যনির্ভর এবং পাঠকদের তা জানা দরকার, তখন তিনি তা ছাপাতে পারেন। অভিযুক্ত লোক প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পাঠাতে পারেন। সম্পাদক প্রতিবাদ ‘যথোপযুক্ত’ মনে করলে ছাপাতে পারেন, আবার নাও পারেন। অভিযুক্ত লোক তাতে সন্তুষ্ঠ না হলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।

আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি এবং নবযুগের রিপোর্টেও উল্লেখ রয়েছে, পত্রিকার পক্ষ থেকে আখতার আহমেদ রাশার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, তিনি রেসপন্স করেননি।

তাছাড়া ফুলেশ্বরী বেশ কিছুদিন ধরে নিউইয়র্কে আখতার আহমেদ রাশার জানাশোনা আছে, এমন কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর অভিযোগ জানাতে চেয়েছেন, কেউই সাড়া দেয়নি।

তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেছে নিয়েছেন। নবযুগ বাংলাদেশের একজন শ্রদ্ধেয় শিল্পীর কন্যার অভিযোগ দায়িত্ব নিয়ে প্রমাণসহ ছেপেছে মাত্র। আখতার আহমেদ রাশার গুণগ্রাহীর উদাহরণ টানা হয়েছে। খুব জানতে ইচ্ছে করছে আখতার আহমেদ রাশার গুণগ্রাহীর সংখ্যা কি নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের চাইতে বেশি?”

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক, নিউইয়র্ক।

শেয়ার করুন: