
সাহিত্য একাডেমি নিউইয়র্ক এর যুগপূর্তি অনুষ্ঠান
নিউইয়র্কে হয়ে গেলো সাহিত্য একাডেমির যুগপূর্তি অনুষ্ঠান। গত ২৫ ও ২৬ নভেম্বর গুলশান ট্যারেস ও জুইশ সেন্টারে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিকার মুমু আনসারী ও আনোয়ারুল হক লাভলু। লেখক রানু ফেরদৌসের পরিচালনায় যুগপূর্তির কেক কাটেন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ এবং তরুণ প্রজন্মের সাফওয়ান নাহিন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, সাহিত্য একাডেমির এই যুগপূর্তি একটি বিরাট অর্জন। এই প্রবাসে নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বদেশীয় ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে যাওয়াটা খুব সহজ নয়। মান্না দে’র বিখ্যাত ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানের লাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সাহিত্য একাডেমি যেন দীর্ঘজীবী হয়। আমরা যেদিন থাকবো না সেদিনও যেন সাহিত্য একাডেমির সাহিত্য আসর বহাল থাকে। উত্তর আমেরিকার লেখক, সাহিত্যপ্রেমী তথা সকল বাঙালি সাহিত্য একাডেমির কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। লেখকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্ণবাদ, প্রবাসীদের জীবন সংগ্রাম এবং আদিবাসীদের কথা যেন তাদের সাহিত্যে উঠে আসে।
লেখক ফেরদৌস সাজেদীন বলেন, প্রচলিত একটি কথা আছে, সময় ও স্র্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না, কিন্তু মাঝেমধ্যে এর উল্টোটাও হয়, কখনো কখনো সময় থমকে যায়। পুরনো কোনো অঞ্চলে হঠাৎ করে গেলে চেনা রাস্তা সময়কে থমকে দেয়। পুরনো অ্যালবাম, পুরনো দৃশ্য দেখলে সময় থমকে যায়। আজকে সাহিত্য একাডেমির এই যুগপূর্তিতে আমাদের সময় আগামীতে কোন একদিন থমকে যাবে। আর এই থমকে যাওয়ার অংশীদারত্বে আমরা সকলে থাকবো। এদিন কন্ঠশিল্পী শাহ মাহবুব, ম্যারিষ্টলা আহমেদ শ্যামলী, রুপাই, আলভান চৌধুরী ও সবিতা দাসের দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীতসহ অন্যান্য গানগুলো উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠানে কবি মিশুক সেলিম ও রওশন হাসানের সঞ্চালনায় বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও ২০২২ এ প্রকাশিত লেখকদের বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সাহিত্যে সংকট ও সম্ভাবনা বিষয়টি নিয়ে কবি এবিএম সালেহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন লেখক হাসান ফেরদৌস, সাংবাদিক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান ও পলি শাহীনা।
কবি বেনজির শিকদারের সঞ্চালনায় স্বরচিত কবিতা পাঠ প্রথম পর্বের সূচনা বক্তব্যে কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, রসায়ন শাস্ত্র কিংবা পদার্থ বিজ্ঞানের মতো কবিতার যদি নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা থাকতো, খুব ভালো হতো। এও ঠিক নির্দিষ্ট সংজ্ঞা থাকলে কবিতা বিষয়ে পরস্পর বিপরীতধর্মী অনেক কিছু জানা হতো না। যেমন, সাঁত্রে বলেছেন, কবিতায় কোন অর্থ খুঁজতে যেও না, অর্থ খুঁজতে গেলে অনর্থ বাঁধবে।
আবৃত্তিকার পারভীন সুলতানার সঞ্চালনায় কবিতা আবৃত্তির সূচনা বক্তব্যে আবৃত্তিকার মিথুন আহমেদ বলেন, বারো বছর একটি দীর্ঘ সময়। দীর্ঘ পথ সাহিত্য একাডেমি সাহিত্য নিয়ে কাজ করছে। তাদের কাজ, তাদের পথচলা, সাহিত্য এবং সাহিত্যের জায়গাটি তৈরি করবার প্রতি এই অভিবাস জীবনে তাদের নিষ্ঠা দেখেছি, শুনেছি।
আবৃত্তিকার নজরুল কবীরের উপস্থাপনায় স্বরচিত কবিতা পাঠ দ্বিতীয় পর্বের সূচনা বক্তব্যে কবি ফকির ইলিয়াস বলেন, লেখালেখির পাশাপাশি যে বিষয়টা আসে সেটি হচ্ছে সাধুসঙ্গ। যারা সাধনা করতে চান তারা সাধুসঙ্গ নেন। সাহিত্য একাডেমি হলো লেখকদের জন্য সাধুসঙ্গের মতো আশ্রম। একটি কবিতার যদি দুই-চারটা লাইন ঘাই না দেয়, কিংবা মননে, চেতনায় যদি কবিতাটি অনুরণন সৃষ্টি করতে না পারে, তাহলে সেটিকে কবিতা মনে করি না। কবিতার ঈর্ষণীয় শক্তি রয়েছে।
লেখক, সাংবাদিক মনজুর আহমদ বলেন, ২০০১ সালে প্রথম এই দেশে এসে যখন একটি পত্রিকার দায়িত্ব পাই তখন সাহিত্য পাতাটি বের করতে পারিনি। না কবিতা, না গল্প, না গদ্য, কোন লেখাই খুঁজে পেতাম না। আজও একটি পত্রিকার দায়িত্বে আছি। আজ এত লেখা পাই যে এখন সাহিত্য পাতার জন্য লেখা বাছাই করতে হয়। প্রবাসে সাহিত্য চর্চায় বাঙালিদের একটি বড় উত্তরণ ঘটেছে। কবি শামস আল মমীন বলেন, হাঁটি হাঁটি পা পা করে সাহিত্য একাডেমি বহুদূর এসেছে। আজ থেকে বারো বছর পর সাহিত্য একাডেমি নিশ্চয়ই আরো ভালো করবে।
সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বলেন, কবিতা যেমন কখনো প্রৌঢ় হয় না, তেমনি সাহিত্য একাডেমিও আজীবন তরুণ থাকবে। সকলের কবিতা শুনেছি, খুব ভালো লেগেছে। সাহিত্যের প্রতি সকলের আগ্র দেখে আপ্লুত হলাম।