
ফাইল ছবি
গাড়ি প্রস্তুতকারক নিশান ও কিয়া তাদের চালকদের ‘যৌন কার্যক্রম’ এবং ‘যৌন জীবন’ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং তৃতীয়-পক্ষ বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে ওইসব তথ্য বিক্রি করতে পারে বলে ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ করেছে ইন্টারনেট প্রাইভেসি নজরদারি প্রতিষ্ঠানের একটি জরিপে।
ফায়ারফক্স ওয়েব ব্রাউজার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মজিলা ফাউন্ডেশন ২৫টি কার ব্র্র্যান্ডের ওপর প্রাইভেসি যাচাই করে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
ফাউন্ডেশনটি জানায়, বেশির ভাগ গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি গাড়িচালকদের তাদের স্মার্টফোনকে গাড়ির সংযুক্ত সার্ভিসের সাথে সংযোগ করার পর সেগুলো থেকে নানা ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে।
মজিলা ফাউন্ডেশন জানায়, ‘ওয়েব অব সেন্সর, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা এবং ফোন, অ্যাপস, গাড়ির সাথে থাকা পরিষেবাগুলোর সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে গাড়ি নির্মাতারা আগ্রাসীভাবে তথ্য সংগ্রহ করে।’
তারা জানায়, গাড়ি নির্মাতারা এরপর এসব তথ্য দালাল, বীমা কোম্পানি এবং অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিতে পারে।
মজিলা ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র কেভিন জাওয়াকি বলেন, ‘গাড়ি কোম্পানিগুলো কিভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করে তা নিয়ে অনেক অস্পষ্টতা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভোক্তাদের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব যে কিভাবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।’
জাওয়াকি বলেন, মজিলা ফাউন্ডেশন তথ্য সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি জানার জন্য নিশানের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু তারা তাতে সাড়া দেয়নি।
মজিলা ফাউন্ডেশনের মতে, ২৫টি কার ব্র্যান্ড পর্যালোচনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিশানের গোপনীয়তার নীতি ‘হলো সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ, আতঙ্কজনক, দুঃখজনক, নানা গোপনীয়তার আবরণে মোড়া। আমরা এমন কিছু অন্য কোথাও দেখিনি।’
ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ‘এ কারণেই বলছি : তারা হতবাক করা কাজ করছে। বলা যায় যে তারা আপনার যৌন কার্যক্রম, স্বাস্থ্য তথ্য, জেনেটিক তথ্য এবং আরো অনেক স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে সুনির্দিষ্ট বিপণনের উদ্দেশ্যে।’
জাপানভিত্তিক কোম্পানি নিশানের অফিসিয়াল ওয়েব পেজে তাদের গোপনীয়তা নীতিমালা প্রশ্নে জানিয়েছে যে তারা চালকদের ‘লাইসেন্স নম্বর, জাতীয় বা রাজ্য শনাক্তকরণ নম্বর, নাগরিকত্বচ মর্যাদা, অভিবাসন মর্যাদা, বর্ণ, জাতীয় উৎস, ধর্মীয় বা দর্শনগত বিশ্বাস, যৌন ধারণা, যৌন কার্যক্রম, নিখুঁত ভূ-অবস্থান, স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং জেনেটিক তথ্যসহ স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে।’
কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের ‘তথ্য সংগ্রহের উৎসের’ মধ্যে রয়েছে ‘ব্যবহারকারী এবং নিশান নিয়োগকারীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ।’
জাওয়াকি বলেন, ‘ব্যবহারকারী এবং নিশান নিয়োগকর্তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের’ মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ¯্রফে ‘জবাবের চেয়ে প্রশ্ন বেশি সৃষ্টি করে।’
অন্যদিকে কোরিয়ান অটো জায়ান্ট কিয়া তাদের ওয়েবসাইটে স্বীকার করেছ যে তারা ‘বর্ণগত বা জাতিগত উৎস,’ ‘ধর্মীয় বা দর্শনগত বিশ্বাস,’ ‘স্বাস্থ্য, যৌন জীবন বা যৌন অবস্থানের’ মতো ‘স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য’ সংগ্রহ করে থাকে।
এক বিবৃতিতে কিয়ার এক মুখপাত্র জানিয়েছে, “আমরা ক্যালির্ফোনিয়া কনজুমার প্রাইভেসি অ্যাক্ট অব ২০১৮’ অনুযাযী ‘স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য’সহ সুনির্দিষ্ট ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করলেও সব ব্যক্তিগত বা স্পর্শকাতর তথ্য আমাদের গোপনীয়তার নীতির মতো হয় না।”
কিয়ার মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ নির্ভর করে ভোক্ত আমাদের সাথে কোন প্রেক্ষাপটে মতবিনিময় করছে, তার ওপর।’
মজিলা ফাউন্ডেশন আরো জানিয়েছে, ক্রিসলার, শেভরোলেট, টয়োটা, অডি, জিপ ও হোন্ডাও ‘তাদের গাড়িতে প্রবেশ করামাত্র অত্যন্ত ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে।’