
ফাইল ছবি
- তোমার স্ট্যাটাসটা দেখলাম।
- কোনটা?
- ওই যে ‘ভালো সিনেমার খোঁজ’ গ্রুপে যেটা দিলে, কাল রাতে।
- দ্য রেলওয়ে ম্যান?
- হ্যাঁ। তুমি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছ পলিটিশিয়ানরা যেন মানবতা শেখে। তারা তা কোনোদিনও শিখবে না। প্রতিহিংসা যতদিন পপুলার বিষয় থাকবে ততদিন তারা প্রতিহিংসার রাজনীতিই করবে।
- এই যে একদল ক্ষমতায় আসে, এসেই ক্ষমতাচ্যুতদের নাস্তানাবুদ করে। আবার এরা ক্ষমতা থেকে গেলে ওরা এসে এদের নাস্তানাবুদ করে, এর একটা শেষ হওয়া দরকার।
- এটা তখনই শেষ হবে যখন মানুষ এটা প্রত্যাখ্যান করবে। পলিটিশিয়ানদের নয়, জনগনের বিবেক জাগিয়ে তোলা দরকার, সিনেমা সেই কাজটিই করে। সিনেমার একটা প্রভাব তো সমাজে পড়েই। খুব ধীরে হলেও পড়ে।
- তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে ২০০৯ সালে আমি তিন দিনের জন্য সিয়েরা লিওনে গিয়েছিলাম।
- হ্যাঁ, আমরা তখন লন্ডনে। ফিরে এসে ‘হিরে-মানুষের দেশ’ লিখেছিলে।
- সেটা খুব ছোটো লেখা ছিল। সব আনতে পারিনি। ওখানে শুধু হিরের রাজনীতিটাই এসেছিল। আমি ওখানকার সিভিল সোসাইটির কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। অল পিপলস পার্টির আর্নেস্ট করোমা তখন প্রেসিডেন্ট। আফ্র্রিকার রাজনীতি তো জানোই, জঘন্য প্রতিহিংসার রাজনীতি। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা ভিন্ন মতাবলম্বীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। শুধু গুম, খুনই নয়, ভিন্ন মতের, ভিন্ন গোত্রের নিরপরাধ নারী-শিশুদের ধর্ষণ করে, হাত-পা কেটে পঙ্গু করে দেয়, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। তো করোমা ২০০৭-এ প্রেসিডেন্ট হয়ে ঘোষণা দেয়, এই প্রতিহিংসার শেষ হওয়া দরকার। আর নয় প্রতিশোধ, এখন সময় দেশ গড়ার। যেই ঘোষণা সেই কাজ। তিনি বলেছেন, যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে, নিরপরাধ, নিরীহ মানুষকে খুন করেছে, হাত-পা কেটেছে, ধর্ষণ করেছে, বাড়ি-ঘর পুড়িয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার হোক। আমার সরকার তাদের ও তাদের পরিবারের বা গোত্রের কারো গায়ে টোকাটিও দেবে না। আমি সকল সিয়েরা লিওনিজকে, সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন আমরা সবাই মিলে দেশটিকে গড়ে তুলি।
- শুনেছিল তার কথা?
- হ্যাঁ, সেই থেকে সিয়েরা লিওনে আর কোনো হানাহানি, গোত্রদ্বন্দ্ব নেই।
- অনেকেই এমন ভালো ভালো কথা বলে নিজের অবস্থান শক্ত করে, এরপর আর ক্ষমতা থেকে নড়তে চায় না।
- করোমা তা করেনি। তিনি দুবার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। আমি ঠিক জানি না ওদের সংবিধানেও সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে সরকার প্রধান থাকার বিধান আছে কিনা। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব গণতান্ত্রিক দেশেই এই বিধান থাকা দরকার। তাহলে কোনো কারণে একটি দানব ক্ষমতায় এসে গেলেও এক পর্যায়ে মানুষ তার হাত থেকে মুক্তি পাবে।
- এতে করে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার পথটিও উন্মুক্ত থাকে। নাহলে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথটি রুদ্ধ হয়ে যায়। গণতন্ত্রের আড়ালে রাজতন্ত্র গড়ে ওঠে।
- যেটা আমাদের দেশে হয়ে গেছে। দুই পরিবারের বাইরে কেউ সরকার প্রধান হবে এটা বোধ করি এখন বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্নেও দেখে না।
- হুতু-তুতসির বিষয়টা যেন কোন দেশের?
- রুয়ান্ডার। দেখো পল কাগামে একজন তুতসি। দশ লক্ষ তুতসির রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় আসে পল। এসে কিন্তু তিনি একজন হুতুকেও হত্যা করেননি। বরং এটা নিশ্চিত করেছেন, রুয়ান্ডায় কেউ হুতু নয়, কেউ তুতসি নয়, আমরা সবাই রুয়ান্ডিজ। তুমি এখন কোনো রুয়ান্ডিজকে জিজ্ঞেস করো, তোমার এথনিসিটি কি? কিছুতেই বলবে না। বলবে আমি রুয়ান্ডিজ। এমন ইতিবাচক রাজনীতির সূচনা না হলে দেশ এগোবে না। রুয়ান্ডা এখন আফ্রিকার অন্যতম এক শান্তির দেশ। অপরাধ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে।
- দ্য রেলওয়ে ম্যান সিনেমায় জাপানিদের দ্বারা ব্রিটিশ সৈনিক এরিক লোম্যাক্স অমানবিকভাবে নির্যাতিত হওয়ার পরেও তিনি নির্যাতনকারী জাপানি সিক্রেট পুলিশের সদস্য তাকাশি নাগাসেকে ক্ষমা করে দেন। আমি তো রীতিমতো কেঁদে ফেলি এই মহানুভবতা দেখে।
- এরিক কিন্তু যুদ্ধের ৩০ বছর পর প্রতিশোধ নিতেই গিয়েছিল। কিন্তু গিয়ে দেখে তাকাশি এক অন্য মানুষ। সেই যে সিঙ্গাপুরের টর্চার সেল, যেখানে এরিক এবং অন্য ব্রিটিশ সৈনিকদের নির্যাতন করা হয়, সেখানেই সে থেকে যায়। সেটি এখন এক যুদ্ধ-জাদুঘর। তাকাশি এর ট্যুর গাইড। এরিক যখন ওকে হত্যা করবে জানায়, তাকাশি তাতে ধরা দেয় নিজের পাপ স্খলনের জন্য কিন্তু এরিক তাকে হত্যা না করে শেষ পর্যন্ত বুকে জড়িয়ে ধরে।
- এটি কিন্তু একটি সত্যি ঘটনা। আমৃত্যু ওরা দুজন বন্ধু ছিল।
- কেউ যদি এই সিনেমার সংলাপগুলো বাংলায় অনুবাদ করত তাহলে বাংলাদেশের মানুষ একটি ভালো সিনেমা দেখতে পারত।
- খুব ভালো একটা কাজ হত। অনেক ভারী ভারী কথা হয়েছে, এবার একটা জোক শোনাও।
- ঠিক আছে। জোকটা বলেই বিছানা ছাড়ছি, কাজে বসতে হবে।
- ইয়েস প্লিজ
- বাংলাদেশের এক সাংবাদিক দাঁত দেখাতে গিয়েছে কলকাতায়। কলকাতার ডেন্টিস্ট প্রভাত মিশ্র খুব যতœ করে তার দাঁতের চিকিৎসা করলেন। ফি নিয়ে বিদায় দেবার আগে জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা ঢাকায় তো অনেক ভালো ভালো ডেন্টিস্ট আছে, আপনি দাঁত দেখাতে ভারতে এসেছেন কেন? সাংবাদিক এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলেন, ঢাকার যা পরিবেশ, আমাদের মুখ খুলবার জো নেই।