
পেন্ডুলাম নিয়ে আমার গল্প
সম্প্রতি সবার প্রিয় অভিনেতা, বাচিক শিল্পী সহ নানান গুনে গুনানিত্ব খাইরুল ইসলাম পাখি ‘পরিচালিত ‘পেন্ডুলাম’ নাটকটি এত ব্যাপক হারে সাড়া ফেলেছিল নিউইয়র্কে যে দর্শকদের অনুরোধে সম্ভবত এই প্রথম কোন নাটক নিউইয়র্কে আবারও দুদিনের পুনরায় জন্য মঞ্চায়ন করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যামাইকা সেন্টার অব আর্টস অ্যান্ড লার্নিং মিলনায়তনে নাটকটির দ্বিতীয়বারের উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে এসেছিলেন অসংখ্য দর্শনার্থী সেটি মিস করায় শনিবারের শেষ শো তে গিয়েছিলাম। হদয় হরণ করা চমৎকার এই নাটকটির নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি প্রধান চরিত্রেও অভিনয় করেছেন পাখি ভাই।
নাটকের ‘রতন’ চরিত্রে জীবন বৃত্তান্তে উঠে এসেছে সমাজের দেখা-অদেখা ঘটনাপ্রবাহ, মানুষের একাকিত্ব আর নিঃসঙ্গতা, যা দর্শকদের আবিষ্ট করে রেখেছিল। দর্শকদের জন্য হাল্কা চা পানির ও আয়োজন দেখে অবাক হয়েছি পাখিভাইদের আন্ত—রিকতায়।
‘রতন’ চরিত্রটি গ্রামের একটি ছেলে যে অনেক কষ্ট করে, সংগ্রাম করে পড়াশোনা করেছিল। পড়াশোনার জন্য ধান চুরি করেছে, টিউশনি করেছে। অভাবকে দুরে ঠ্যালার জন্য সে অসৎ পথে গিয়েছিল। বিয়েটাও করেছিল কিছু পাবার আশায়। পরে এক সময় সে সংসার ভুলে যায় টাকার পিছনে ছুটে। পরিবার, বন্ধুদের সময় দেয় না। একদিন সবাই তাকে ছেড়ে যায়, তখন সে অনুতপ্ত হয় সবকিছুর জন্য, সব হারিয়ে আবারো সব ফিরে পেতে চায়।
মানুষের একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতার গল্প ‘পেন্ডুলাম’। স্বার্থপরতা ও পরিণামের কাহিনীও এই নাটক। নাট্যকার মাসুম রেজা দেড় ঘণ্টার এই নাটকে সমাজবাস্থবতার চিত্র নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। নাটকটিতে আরও অভিনয় করেছেন শিরীন বকুল ও সীতেশ ধর। তিন গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রীর মঞ্চে সবল উপস্থিতি আয়োজনটিকে দেয় ভিন্ন মাত্রা।
নাটকটির কাহিনী জটিল কিছু নয়। তবে গল্পের গাঁথুনি ও অভিনয় শৈলী দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলে চারপাশের নানা অসঙ্গতি। নাটকের চরিত্রগুলো, চারপাশে ঘটে যাওয়া জীবনের উপকরণ থেকেই নেয়া। টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে কখনো দুঃখ, কখনো যুক্তি কিংবা কিছুটা হাস্যরসের মধ্য দিয়ে ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপন দর্শকদের বিমোহিত করে রাখে। তবে নাটকটি পুরোপুরি নাটকীয়তাপূর্ণ ছিল, যার কারণে পুরোটা সময় জুড়ে দর্শকরা নিবিড়ভাবে নাটকের সাথে সংযুক্ত ছিলেন! নিউইয়র্ক শহরের চেনাজানা কমবেশী সবাই দিয়েছিলেন নাটকটা দেখতে। কেউ যদি মিস করে থাকেন তাহলে আমার মতে গ্রেট মিস। আমি মঞ্চ নাটকের এত চমৎকার গল্প সাথে দুর্দান্ত অভিনয় নিউইয়র্কে খুবই কম দেখেছি। সবাই তাদের পুরো সত্তা দিয়েই অভিনয় করছিলেন নাটকে। সঙ্গীত, শব্দ, মঞ্চসজ্জা নাটকের পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুই দীর্ঘ দিন ধরে মনে ধরবার মতো সুন্দর ছিল।
খাইরুল ইসলাম পাখি, সীতেশ ধর আর শিরীন বকুল আপাকে টুপি খোলা অভিনন্দন আর আন্তরিক ধন্যবাদ এত চমৎকার অভিনয় আমাদেরকে উপহার দেবার জন্য। মেয়ের জন্মদিনের জন্য শুক্রবার থেকেই পারিবারিক আনন্দ উৎসবে ব্যস্ততার মাঝেও শুধু মাএ উনাদের জন্য সেদিন ছুটে গিয়েছিলাম নাটক শেষ করে আপসোস হল নাটকটির সব গুলো শোতেই কেন গেলাম না তা ভেবে। অপেক্ষায় রইলাম এই তিনগুনি শিল্পীর আরও অনেক সুন্দর সুন্দর কাজ দেখবার আশায়।
নাটক শেষে নাটকের অভিনয় শিল্পীদের সাথে ফটোশেসন আর পরে জামাইকাতে রাতের খাবার আর চায়ের আড্ডায় খুবই সুন্দর সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছি নাটকের একটা সংলাপ যা বেশ মনে ধরেছে অনেকবছর শুনে ‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়’ আওড়াতে আওড়াতে চমৎকার অনুভুতি নিয়ে যা অনেকদিন মনে থাকবে!