
ছবি: সংগৃহীত
মদ গাঁজা খেয়ে কেউ আইন অমান্য করলে তাকে তো শাস্তি দিতেই হবে। তবে ‘পূজার সময় মদ গাঁজার আসর বসানো যাবে না‘
মহাশয়ের এমন কথা শুনে ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম। সত্তুর বা আশির দশকের কথা বলছি, যখন ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়টি ছিল উদাহরণসম। পূজার সময়ের জন্য আমরা কে না অপেক্ষা করতাম! নানা রকম খেলা, মেলা, যাত্রাপালা, নাটক, গান, প্রতিমা দর্শন, নাচানাচি, পিঠাপুলি, ফল-ফলাদি, দই-মিষ্টি, ঢাক-ঢোল আরো কত কি! মিলেমিশে অপার এক বাঁধভাঙ্গা আনন্দ সে সময় উপচে পড়তো আমাদের সবার জীবনে। যে প্রবাহ ঘুরে বেড়াত পুরা দেশময়, সব ধর্মে বর্ণে।
যা কোন কিছু মানতো না। না নারী, না পুরুষ, না কোনো শ্রেনী, না ছিল কোন বয়সের সীমা। না ছিল কোন ভেদাভেদ। সেই সমস্ত মধুর দৃশ্য গুলো আজ অচিন হয়ে গেছে। তবুও যতদূর মনে পড়ে মদ বা গাঁজা নিয়ে তেমন বিপত্তি বা আপত্তি সেসময় ছিল না। অনেকে ওসব খেয়ে আনন্দ নিত বা পেতো তা সত্য কিন্তু এতে তেমন কিছু যেতো আসতো না। তবে এখন কেন মহাত্ত্বনের এমন প্রসঙ্গ মনে হল, পূজার পরিবেশ রক্ষা করার নিমিত্তে? নাকি তিনি অন্য ধর্মের নিয়মে বা হালালী কায়দায় সনাতনীদের পূজা-অর্চনা দেখতে বা করতে বলছেন! এই বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এবং জনমনে বেশ তোলপাড় দেখা গেল ক‘দিন ধরে। স্বরাষ্ট্র মহামতির বাচন ভঙ্গিমা বেশ হেলাফেলা এবং তাচ্ছিল্যে ভরপুর ছিল, হয়তো তাই। তিনি বরাবরের মতো বা মুদ্রা দোষের ন্যায় ‘আল্লাহ দিলে‘ বলে যে পূজা নিয়ে কথা বলেননি এটাই বা কম কিসের! হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা না হয়ে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম নিয়ে বলতেন তাহলে কি এমন যেন ভাবে কথা বলতেন?
তিনি তো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে আছেন। তাই তো তার মত কারো তেমন দায়িত্বশীলতা নিয়েই কিছু বলা উচিত যা মানুষকে আহত, ছোট কিংবা বিব্রত করবে না। ‘আল্লায় দিলে‘ তিনি যেন ভবিষ্যতে সেভাবেই কথা বলেন। আর ওসব না খেতে বা সেবন করতে বলাটা কোথায়, কখন, কিভাবে বললে অন্যের অনুভূতি, স্বার্থে কিংবা ধর্মে-মর্মে আঘাত হানবে না সেটাও যেনো বিবেচনায় রাখেন। নতুবা মানুষ তো ‘আল্লাহ দিলে‘ এমনটা ভাবতে পারেন যে উনি নিজেই ওসব খেয়ে কিংবা টেনে জাতির উদ্দেশে কথা বলে থাকেন।
লেখক: অভিনেতা।