
ছবি - নবযুগ
১৪৩২ বঙ্গাব্দ স্মরণকালের বিস্ময় নিয়ে আবিভূর্ত হলো নিউইয়র্ক শহরে। দুই দিনের বর্ষবরণ উৎসব বাঙালি জাতির পরম আরাধ্য ও চরম প্রাপ্তির বৈকুণ্ঠময় অনুভবের স্মারক হয়ে থাকল। যেন একখ- বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে জানান দিল আমাদের জীবনও আনন্দময়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি। জ্যাকসন হাইটসে ৫০হাজার মানুষের জমায়েত মঙ্গলশোভাযাত্রাকে করে তুলেছিল নীল আকাশে সাদা মেঘের পেখম তুলে ধাবমান বলাকার প্রাণিত আলোকশিখা। তবে আগের দিন বৃষ্টিস্নাত দিনে টাইমস স্কয়ারও হয়ে উঠছিল বৈশাখের রঙিন দিবসের গীতাঞ্জলি।
প্রথম দিনে শনিবার (১২ এপ্রিল) সহস্র বাঙালি একত্রিত হয়ে সুরে-সঙ্গীতে-নৃত্যে পালন করেছে তাদের প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। ওই দিন উৎসবে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটানের কনসাল জেনারেলবৃন্দ। একইসঙ্গে বহু দেশ ও জাতির মানুষ উপস্থিত থেকে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালন করেন, যা রূপ নেয় আন্তর্জাতিকতায়। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের বৃহত্তম সমাবেশ হয় নিউইয়র্ক শহরেই। গত দুই বছরের মতো এবারও দুই দিনের অনুষ্ঠানের প্রথম দিনটি অর্থাৎ ১২ এপ্রিল টাইমস স্কয়ারে এবং রোববার (১৩ এপ্রিল) জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় পালিত হয় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উৎসব। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে ‘ছায়ানটে’র সভাপতি ও সংস্কৃতি-সাধক সদ্য প্রয়াত প্রফেসর ড. সনজীদা খাতুনকে ।
বিশ্ববাঙালির আয়োজনে দুই দিনব্যাপি এ অনুষ্ঠানে ছিল গান-নৃত্য, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা। যেখানে শতকণ্ঠে শিশুরা গান গেয়ে এবং সহস্রকণ্ঠে বড়দের সুর এবং গানে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে। আয়োজক সংগঠনের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিনের মহড়া ও নিবিড় অনুশীলনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুত করা হয় সকলকে। অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে ‘সহস্র কণ্ঠে বর্ষবরণ’। ১ হাজারেরও বেশি শিল্পী একসঙ্গে মিলিত হয়ে সম্প্রীতি, আনন্দ এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসার গান গেয়েছেন নিউইয়র্কের মাটিতে। এছাড়াও, এই বছর একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল ‘হাজার বছরের বাংলা গানের গল্প’। কল্লোল বসুর পরিকল্পনায় এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঞ্চলের ১০০ জন শিল্পী হাজার বছর ধরে বিস্তৃত এবং বহুবিধ সাংস্কৃতিক প্রভাবে প্রভাবিত বাংলা গানের ৩২টি ধারাকে তুলে ধরেন। পরিবেশনায় ছিল- ডায়াস্পোরা ইনক, কল্লোল, মৈত্রী, সিংগিং বার্ডস, সৃষ্টি একাডেমি, অনুপ দাস ডান্স একাডেমি প্রভৃতি। নৃত্যে ছিলেন- চন্দ্রা ব্যানার্জি ও সম্প্রদায়। এছাড়া, তাজলি, কৃষ্ণা তিথি, রেশমি প্রতীক, শাহ মাহবুব এবং মণিপুরি নৃত্যে জগন্নাথ ও সম্প্রদায় সংযুক্ত পরিবেশনায় মুখরিত ছিল টাইমস স্কয়ার। বলাবাহুল্য, কণ্ঠশিল্পী মহীতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে শত কণ্ঠ থেকে সহস্রকণ্ঠের এই বর্ষবরণ বাঙালি সংস্কৃতির পালকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর সঙ্গে খ্যাতিমান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা’র সুরেরধারা যুক্ত হয় উৎসবের সঙ্গে। বর্ষবরণ উৎসবে একই রকম শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে নারী-পুরুষের বর্ণিল পরিবেশনায় বাংলার জয় ঘোষণা করা হয়েছে।
১৪৩২ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণের বিশেষত্ব হলো বহুমাত্রিকতা। সহস্রকণ্ঠের পরিবেশনায় ছিল নতুনত্ব; সঙ্গে নিউইয়র্ক রাজ্যসরকারের ক্যালেন্ডারে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের স্বীকৃতি এবং এশিয়ার কৃষিপ্রধান নয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকার কনসাল জেনারেল ও তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিঃসন্দেহে বৈচিত্র্য এনেছে প্রবাসী বাঙালিদের সর্ববৃহৎ এই আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে।
নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিকেল পাঁচটার পর ঘটে উৎসাহব্যঞ্জক ও স্মরণীয় ঘটনা। এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইডের পক্ষ থেকে দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তারা হলেন বিশিষ্ট প-িত, বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা এবং সমাজসেবী ড. পরিতোষ এম. চক্রবর্তী এবং অপরজন ডাক্তার মুহাম্মদ এস. চৌধুরী, যিনি মানব সেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের ক্ষমতায়নে নিবেদিতপ্রাণ। ব্যতিক্রমী এই পুরস্কার নববর্ষ উৎসবকে ভিন্ন মাত্রা প্রদান করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে বর্ষবরণ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। দৃশ্যত বাস্তবতা হলো, ২০২৫ সালে এসেই উৎসবটি আন্তর্জাতিক মহিমা অর্জন করেছে। বলাবাহুল্য, বাংলা বর্ষবরণের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এ বছরের উদযাপনকে অনেক বেশি তাৎপর্যম-িত করেছে; পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক উৎসবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষের স্বীকৃতি দিয়ে অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনিতে গভর্নর অফিস বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ২৮ এপ্রিল উদযাপন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অনুরোধে সিনেটর লুইস সেপুলভেদার ১৫ জানুয়ারি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অঙ্গরাজ্যের আইনসভার অধিবেশনে গত ২২ জানুয়ারি আইনপ্রণেতারা সর্বসম্মতিক্রমে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়, ১৪ এপ্রিল, অর্থাৎ বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। এই অঙ্গরাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি হিসেবে এবং এই রাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে সম্প্রীতি দৃঢ় করার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। টাইমস স্কয়ারে রেজুলেশনটি (১২ এপ্রিল )পাঠ করে শ্রোতৃম-লীকে শোনানো হয়।
বলাবাহুল্য, অভিবাসী জীবনের লড়াইটা কেবল অন্ন সংস্থানের জন্য নয় বরং বাঙালি জাতির যা কিছু অহংকারের সামগ্রী তা সামনে নিয়ে এগিয়ে চলার লড়াইও। এই লড়াই নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার নিরন্তর সংগ্রামে উদ্দীপিত। আর এই আনন্দ উজ্জীবনের স্বাক্ষর রয়ে গেল ১৪৩২ বঙ্গাব্দের নববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে। আয়োজক এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড টিকে থাকুক বাঙালির রক্ষাকবচ হিসেবে।
উদ্যোক্তাদের দাবি, ১৩ এপ্রিল কেবল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আয়োজকদের কথায়, এই উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য বৃহত্তর প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলা সংস্কৃতির প্রকৃত বার্তা পৌঁছে দেওয়া। মুক্তধারা এবং এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইড সভাপতি বিশ্বজিত সাহার কথায়, ‘এই উৎসব বিশ্ব বাঙালির ঐক্য ও ভাষার প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।’
নিউইয়র্ক স্টেট থেকে বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখকে আনুষ্ঠানিকভাবে অফিশিয়ালি স্বীকৃতি দেওয়া হলো। আর এটি আমেরিকায় থেকেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি বিশেষ পাওয়া এবং অনেক বড় অর্জন। এ কথাগুলোই বলছিলেন টাইম স্কয়ার ও জ্যাকসন হাইটসে এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের বর্ষবরণের আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শুভেচ্ছাদূত, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও সংগঠনের অন্য নেতারা। তারা জানান, নিউইয়র্ক স্টেট থেকে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আর এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে আরও এক ধাপ অর্জন হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের। আমরা এ দেশে থেকেও বাংলাদেশকে সবার কাছে তুলে ধরতে পারছি। নিউইয়র্ক স্টেট এক্সেলশিয়র সিনেট ২০২৫-জে ২৩৪ হিসেবে নিউইয়র্কের সিনেটে ১৪ এপ্রিল ‘বাংলা নববর্ষ দিবস’ উদযাপনের প্রস্তাব পাস করে। এটি উত্থাপন করেন সিনেটর সিপুলভেদা, গভর্নর ক্যাথি হোকুল। ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে নিউইয়র্ক স্টেট এই দিনটিকে বাংলা নিউইয়ার ডে হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে এখন থেকে এটি কেবল বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠানের গ-ির মধ্যেই থাকছে না, এটি পৌঁছে গেল নিউইয়র্ক স্টেটের সিনেট, গভর্নরের সীমানাতেও। নিউইয়র্কের সিনেট ও গভর্নরের কাছ থেকে এই স্বীকৃতি পাওয়ায় সবাই খুশি।
এদিকে বাংলাদেশে মহাসমারোহে, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদ্্যাপিত হলো পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে নিউইয়র্কে বিশেষভাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। একাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিসরে টাইম স্কয়ারে ও জ্যাকসন হাইটসে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড। তারা গত বছরও এবারের মতো বড় পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশের আদলে নাচ, গান, মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে অংশ নেয়। প্রবাসে থেকেই শিশুরা অনেকেই নাচ, গান ও আবৃত্তি শিখছে। সেখানে তারা বাংলাদেশের গান এবং বাংলাদেশ থেকে প্রায় মুছে যাওয়া অনেক গানও তারা তুলে নিয়ে এসেছিল টাইম স্কয়ার ও জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায়। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজন ছিল ১২ ও ১৩ এপ্রিল।
১২ এপ্রিল নিউইয়র্কের আকাশে ছিল মেঘ। ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মধ্যে পরিকল্পনামাফিক অনুষ্ঠান করতে পারবেন কি না এ নিয়ে আয়োজকদের কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ। কিন্তু না, তাদের সেই চিন্তার ভাঁজ নিমেষেই মিলিয়ে গেল যখন হাজার মানুষ সমবেত হলো, গেয়ে উঠল ‘এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো’। ১২ এপ্রিল দুপুরে টাইম স্কয়ারে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে উদ্্যাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। সবাই স্বাগত জানিয়েছেন নতুন বছরকে। পুরোনোকে বিদায় জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে সবাই এসেছিলেন বর্ণিল সাজে। তারা টাইম স্কয়ারেই একটি মিনি বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে বাঙালি পোশাকে সেজেছিলেন সবাই। এনআরবি ওয়ার্ল্ডের আয়োজনে প্রবাসীরা অংশগ্রহণ ছাড়াও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা শিল্পীরাও অংশ নেন।
টাইম স্কয়ারে ‘এসো হে বৈশাখ’ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। একে একে পরিবেশিত হয় বাংলা গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সহস্্র কণ্ঠে শিল্পীরা সেখানে অংশ নেন। দিনভর সেখানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষেরা অংশ নেন। টাইমস স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রাও। বৃষ্টির মধ্যেও ছোট ছোট শিশুশিল্পীরা অনুষ্ঠানে আসে। তারা ওপেনটি বায়োস্কোপ গানটি পরিবেশন করে। এটি অসাধারণ পরিবেশনা ছিল বলে দর্শকরা মনে করছেন। নিউইয়র্ক স্টেট থেকে পহেলা বৈশাখকে স্বীকৃতি দেওয়ার অংশ হিসেবে নিউইয়র্কের গভর্নর হাউসে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়।
টাইম স্কয়ারের পাশাপাশি এনআরবি ওয়ার্ল্ডের আয়োজনে জ্যাকসন হাইটসেও বাংলা নববর্ষ উদ্্যাপিত হয়েছে। ১৩ এপ্রিল দিনভর চলে অনুষ্ঠান। এবারের অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়। তিনি জ্যাকসন হাইটসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় নিউইয়র্কের এই ব্যতিক্রমী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রশংসা করেন। সেখানে তিনি এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি যারা অংশ নিয়েছেন সেই সব শিল্পী ও তাদের বাবা-মায়েদেরও ধন্যবাদ জানান।
বিখ্যাত সংগীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, আগামী দুই টার্মের পর হয়তো আমাদের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্য থেকে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবেন। আমরা বাংলাদেশেকে মূলধারার সব পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছি। উত্তরোত্তর তা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, আপনারা যারা বাংলাদেশি, তারা বাসায় অবশ্যই সন্তানদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলবেন। তারা এ দেশে লেখাপড়া করে ও যেখানেই থাকে ও যায়, সেখানে ইংরেজিতে কথা বলে। কিন্তু তারা যাতে বাসায় অন্তত বাংলায় কথা বলতে পারে, সেই বিষয়টি আপনারা নিশ্চিত করবেন। সেই সঙ্গে তাদের কাছে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে তুলে ধরবেন। তিনি বলেন, আমরা যে এবার এত সুন্দর আয়োজন করতে পেরেছি, এটিও আমাদের আরও এক ধাপ সাংস্কৃতিক উন্নয়ন। কারণ আমরা সবার কাছে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারছি। মূলধারায়ও এর গুরুত্ব বাড়ছে। এ কারণেই নিউইয়র্ক স্টেটের উদ্যোগেও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে। এটি অবশ্যই বড় অর্জন। সবাই মিলে আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পেরেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। অনুষ্ঠানে শুচ্ছেতাদূত ছিলেন লুৎফুন নাহার লতা। তিনিও এনআরবি ওয়ার্ল্ডকে এ ধরনের সুন্দর আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান। সবাইকে জানান নববর্ষের শুভেচ্ছা। তিনি বলেন, টাইম স্কয়ারে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় সফলতা হলো এখন থেকেই নিউইয়র্ক স্টেটের উদ্যোগে বষর্বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এটি অবশ্যই একটি বড় অর্জন, কারণ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে ও বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আরও বেশি করে তুলে ধরতে পারব। তিনি বলেন, এ দেশে যেদিন এসেছিলাম, সেদিন কেবল দুটি স্যুটকেস নিয়ে দেশ থেকে এসেছিলাম। আর সব জিনিস ফেলে এসেছিলাম। তবে হৃদয়ে ধারণ করে নিয়ে এসেছিলাম বাংলাদেশকে। সেই বাংলাদেশকে আমরা এক দিনের জন্যও ভুলিনি। এখানে এসেও আমরা নিজেদের কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছি।
মুুক্তধারা ও এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠানে আপনারা সবাই অংশ নিয়ে অনুষ্ঠানকে সফল করে তুলেছেন, এ জন্য ধন্যবাদ। টাইম স্কয়ারের অনুষ্ঠানেও বৃষ্টির মধ্যে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদেরকে আনন্দিত করেছে। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠান সফল করার পেছনে যারা রয়েছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এনআরবি ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে দুই দিনই দুটি মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। একটি হয় টাইম স্কয়ারে, অপরটি হয় জ্যাকসন হাইটসে। নিউইয়র্ক টাইম স্কয়ারে সহস্র কণ্ঠে বিশ্ব বাঙালির ১৪৩২ বাংলা বর্ষবরণ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে বাংলা বর্ষবরণ ১৪৩২ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের উদ্যোগে এই স্মারকগ্রন্থে দেশ-বিদেশের অনেকেই লিখেছেন। এটি ছায়ানটের প্রধান ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সন্্জীদা খাতুনের স্মরণে উৎসর্গ করা হয়।
নিউইয়র্ক টাইম স্কয়ারে সহস্র কণ্ঠে বিশ্ব বাঙালির ১৪৩২ বাংলা বর্ষবরণ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা উদ্্যাপন কমিটিতে পরিকল্পনাকারী ছিলেন বিশ্বজিৎ সাহা, তোফাজ্জল লিটন, আহ্বায়ক রথীন্দ্রনাথ রায়, শুভেচ্ছাদূত লায়লা হাসান, লুৎফুন্নাহার লতা, সংগীত পরিচালক মহীতোষ তালুকদার তাপস, নৃত্য পরিচালক চন্দ্রা ব্যানার্জী, স্মারকগ্রন্থের প্রধান সম্পাদক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও নির্বাহী সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
প্রধান সমন্বয়কারী শিবলী সাদেক, সমন্বয়কারী নিরুপম সাহা, সুপ্রিয়া চৌধুরী, আল্পনা গুহ, সুতিপা চৌধুরী, গীতালি হাওলাদার, ফারজিন রাকিবা, অর্থ কমিটি শশধর হাওলাদার, সুশীল সাহা, টিটু দে, ফণী ভূষণ রায়, প্রশাসন ব্যবস্থাপনা সৌম্যব্রত দাশগুপ্তা, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা ড. কল্লোল বসু, ফটোগ্রাফার ধীরাজ সাহা, সংগঠক তাপস সাহা, দীপক দাস, কৃষ্ণ সরকার, কার্যকরী সদস্য মনিকা রায় চৌধুরী, আয়েশা চৌধুরী, সুমন আহমেদ, সবিতা দাস, ড. রুমা চৌধুরী, ক্রিস রুদ্র। মঞ্চসজ্জা পল্লব সরকার, জেমস রায়, বাপ্পি অধিকারী, ক্রিস্টেলা কুইয়া, দেবযানী মজমুদার, সহ-মহাব্যবস্থাপনা সাজু রহমান, রায়হান উদ্দন, কৃতজ্ঞতায় মিল্টন চৌধুরী, শাহ নেওয়াজ, রানো রেওয়াজ, নুরুল আমিন বাবু, মৃদুল পাঠক ও রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী।