বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

নিউইয়র্কের সাধারণ প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা হতাশ

কথা রাখেননি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. মনসুর

বিশেষ প্রতিনিধি

আপডেট: ১৭:২৪, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

কথা রাখেননি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. মনসুর

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ১৬ বা ১৭ বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো গভর্নরকে প্রবাসীরা কাছে পাবেন, তাদের দাবী দাওয়া তুলে ধরবেন, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি আদায় করবেন। কিন্তু তা হলো না। সব ঠিক থাকলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে সাধারণ প্রবাসীদের সঙ্গে দেখা করেননি বাংলাদশে ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী ৪র্থ বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ফেয়ার ২০২৫ এ প্রধান অতিথি হিসেবে তার যোগ দেয়ার কথা ছিল। তিনি রেমিট্যান্স ফেয়ারস্থল জ্যাকসন হাইটসের সানাই রেস্টুরেন্টের ১০০ গজ দূরে দুটি মিডিয়া অফিস ভিজিট করলেও দেখা দেননি বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ফেয়ারে উপস্থিত প্রবাসীদের। যাদের মধ্যে আবার অনেকে এসেছিলেন নিউজার্সি, কানেক্টিকাটের মতো রাজ্য থেকেও। 
সরেজমিন ফেয়ার প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায়, গর্ভনর অনুষ্ঠানে না আসায় প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, হয়েছেন হতাশ।

আর এ নিয়ে গভর্নরের কার্যালয় এমনকি নিউইয়র্কে গভর্নরের সফরের তদারকি বা খোঁজ খবর রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ কন্স্যুলেটও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বা বক্তব্য দেয়নি। এ বিষয়ে ৪র্থ বাংলাদেশ রেমিটেন্স ফেয়ার ২০২৫ এর আয়োজক ইউএসএ বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড কর্মাসের প্রেসিডেন্ট ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ সাপ্তাহিক নবযুগকে বলেন, আমরা সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ফেয়ারে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আমাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন। আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তা প্রচারও করেছি। কিন্তু শেষ মহুুর্ত্বে তিনি আসলেন না। আর তিনি কেন আসলেন না সেটারও আমরা সন্তুষজনক জবাব পাইনি। 
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান সাপ্তাহিক নবযুগকে বলেন, আমি মনে করি এ অনুষ্ঠানে গভর্নরের আসার প্রয়োজন ছিলো। কেন তিনি আসেননি সেটার জবাব তাকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার আগেই দিতে হবে। আমি আরো মনে করি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রবাসীদের মনে কষ্ট দিয়েছেন। তিনি রেমিট্যান্স ফেয়ারে যোগ দিলে প্রবাসীরা যেমন উপকৃত হতো তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকও উপকৃত হতো। 
নাজমুল আহসান বলেন, ফেয়ারস্থলের ১০০ গজ দূরে গভর্নর দুটি অফিসে এসেছিলেন কিন্তু  ফেয়ারে আসেননি। এর একটি উপযুক্ত ব্যাখা জানা দরকার। 
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য চতুর্থ রেমিট্যান্স ফেয়ার ২০২৫ এর দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত সময় অনুযায়ী গত ১৯ ও ২০ এপ্রিল  ফেয়ারের দিন ধার্য্য করা হয়। দুই দিনব্যাপী এ ফেয়ার উদ্বোধন করার কথা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ইউএসএ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিইউসিসিআই) এবং ইউএসএ-বাংলা বিজনিস লিংকের যৌথ উদ্যোগে এই ফেয়ার।
জ্যাকসন হাইটসের সানাই রেস্তোরাঁ ও পার্টি হলে আয়োজিত এ মেলার সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
এবারের রেমিট্যান্স ফেয়ারের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় “বৈধ রেমিট্যান্স, উন্নত বাংলাদেশ।” ফেয়ারে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি, মানি ট্রান্সফার অপারেটর ও রেমিট্যান্স চ্যানেল পার্টনাররা অংশ নেয়। তারা তাদের পণ্য ও সেবা তুলে ধরেন, পাশাপাশি রেমিট্যান্স খাতের উন্নয়নের জন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং নেটওয়ার্কিং ডিনারের আয়োজন করা হয়। মেলার অংশ হিসেবে একটি বিশেষ প্রকাশনা বের করা হয়, যেখানে খ্যাতিনামা অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার এবং বিশেষজ্ঞরা রেমিট্যান্স ও অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী লেখা স্থান পায়।
মেলায় অংশগ্রহণকারী বিশেষ অতিথিদের মধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মনোয়ার উদ্দীন আহমেদ, এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদসহ বাংলাদেশ এবং আমেরিকার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের।
এ বছরও ফেয়ারে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী এবং সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিল সেরা ১০ বাংলাদেশি-আমেরিকান রেমিট্যান্স প্রেরক, বাংলাদেশের শীর্ষ তিন রেমিট্যান্স গ্রহণকারী ব্যাংক এবং শীর্ষ তিন মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি বা রেমিট্যান্স চ্যানেল পার্টনার।
মেলার মিডিয়া পার্টনার ছিল দৈনিক বণিক বার্তা, অর্থনীতি বিষয়ক ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, সাপ্তাহিক ঠিকানা, একাত্তর টিভি ও নিউইয়র্ক ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল টিবিএন২৪। 
জানা গেছে, মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে আয়োজকরা। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আহসান এইচ মনসুরকে প্রধান অতিথি উল্লেখ করা হয়। এ বিজ্ঞাপন প্রচারের পর প্রবাসীদের মধ্যে মেলা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ১৬/১৭ বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো গভর্নরকে কাছে পাবেন, প্রশ্ন করবেন এবং পরিবর্তিত রাজনৈতি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালহকিকত কী সেটা জানার জন্য প্রবাসীদের ব্যাপক আগ্রহ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়।
গত ১৮ এপ্রিল, শুক্রবার নিউইয়র্কের তারাকা হোটেল লার্গডিয়া ম্যারিয়েট হোটেলে আয়োজন করা হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ প্রবাসী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন। 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, এক্সিম ব্যাংকে চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান, সিটিজেন্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব, মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ হাউস (ইউকে) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আমানউল্লাহ, এনসিসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, বিশ্বজিত সাহাসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ডের অর্থনীতির অধ্যাপক বিরূপাক্ষ পাল এবং সভাপতিত্ব করেন ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএবির চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার দেশের উন্নয়নে বৈধপথে প্রবাসী আয় পাঠানোর গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ ফেয়ারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠাতে উৎসাহিত হবেন।
ফেয়ারের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনেও প্রবাসীদের ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। ফেয়ারে এসে প্রবাসীরা গর্ভনর ড. আহসান এইচ মনসুকে খোঁজতে থাকেন। কিন্তু গভর্নরকে না পেয়ে তারা হতাশা ব্যাক্ত করেন। নিউজার্সি থেকে আসা বাংলাদেশের সাবেক ব্যাংকার আরিফুর রহমান নবযুগকে বলেন, আমরা জানতাম গর্ভনর ফেয়ারে আসছেন, এ জন্য দুই ঘণ্টা ড্রাইভ করে এসেছি। কিন্তু তিনি আসছেন না জেনে খুবই মর্মাহত হয়েছি। গর্ভনর ফেয়ারে আসবেন এমন কথা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। এটা ঠিক হলো না। 
কানেক্টিকাট থেকে আসা ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বলেন, আমি গভর্নরকে কিছু প্রশ্ন করবো ভেবে এসেছিলাম। কিন্তু তিনি আসেনি, আমরা তার দেখা পেলাম না, তিনি আমাদের হতাশ করলেন। রেমিট্যান্স ফেয়ারে তিনি না এসে রেমিটারদের অবজ্ঞা করেছেন। 
জ্যামাইকার রেস্টুরেন্ট কর্মচারি নাদিম হোসেন বলেন, আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে দেশে অর্থ পাঠাই, কিন্তু সে অর্থ সঠিক সময়ে স্বজনরা পান না, আমি গভর্নরের কাছে অভিযোগ করতে আসছিলাম, কিন্তু তিনি ফেয়ারে আসেননি। 
জ্যাকসন হাইটসের ফুটপাতের ভেন্ডর আজিজুল ইসলাম বলেন, গভর্নর আসছেন শুনে আমরা এসেছিলাম তাকে দেখার জন্য, তার কথা শোনার জন্য, কিন্তু তিনি আমাদের হতাশ করলেন। আমরা শুনেছি গভর্নর জ্যাকসন হাইটসে এসেছেন কিন্তু রেমিটারদের সঙ্গে দেখা করলেন না। এটা কোনো ভাবেই মেনে নেয়ার নয়। তিনি কেন আসলেন না তার জবাব দিতে হবে। 
এদিকে দুই দিনের ফেয়ারের সমাপনী দিনে নিউইয়র্কের গণমাধ্যম সম্পাদকের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন গভর্নর ফেয়াওে না আসায় সাধারণ প্রবাসীরা। 
অন্যদিকে ফেয়ারে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানোয় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে মাস্টার কার্ড, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে মানিগ্রাম এবং তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে রিয়া ফিনান্সিয়াল সার্ভিস।
মাস্টার কার্ডের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন: প্রতীক (ভাইস প্রেসিডেন্ট), ট্রেজারি-এর ইন্দ্রনীল (সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট), মার্ক (ভাইস প্রেসিডেন্ট), মালিক (সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট)।
মেলার আয়োজকেরা জানান, বাংলাদেশে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে বৈধ পথে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কয়েক গুণ বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে চতুর্থবারের মতো নিউইয়র্কে রেমিট্যান্স ফেয়ার আয়োজন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গভর্নর ফেয়ারে না আসলেও কন্স্যুলেটের আয়োজনে একটি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রেখেছেন। সেখানেও ফেয়ারে কেন যোগদান করছেন না সে বিষয়ে গভর্নর কিছুই জানাননি। 
ইউএসএ বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড কর্মাসের প্রেসিডেন্ট ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ফেয়ারের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আমাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন। আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তা প্রচারও করেছি। কিন্তু শেষ মহুুর্ত্বে তিনি আসলেন না। আর তিনি কেন আসলেন না সেটারও সন্তুষজনক জবাব পাইনি। 
এদিকে ইউএস বিজনেস লিংকস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ১৯ ও ২০ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ‘সানাই পার্টি হলে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে নিউইয়র্ক ৪র্থবাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা ২০২৫। কেবল বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণে সীমাবদ্ধ না থেকে অভিবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে ১৮ এপ্রিল, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের লার্গডিয়া এয়ারপোর্ট ম্যারিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ১৯ এপ্রিল নিউইয়র্কে ৪র্থ বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলা ২০২৫-এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানও এতে যোগ দেন।
বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষদেশগুলোর অন্যতম আমেরিকা। এ দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা স্বজনদের কাছে যে অর্থ পাঠান, তাতে শক্তিশালী হয় অর্থনীতি। সাম্প্রতিক সময়ে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে কয়েকগুণ। এ ধারা অব্যাহত রাখতে চতুর্থবারের মতো নিউইয়র্কে আয়োজন করা হয়  রেমিট্যান্স মেলার।
অর্থনীতিবিদ ড. বীরুপাক্ষ পালের সঞ্চালনা ও ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যওে মিট্যান্সের প্রধান বাজার হলেও আমেরিকা থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠান তাদের মধ্যে দেশ প্রেম অনেক বেশি।
ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, এক্সিম ব্যাংকে চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন, এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান, সিটিজেন্স ব্যাংক চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব, মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জহাউস (ইউকে) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আমানউল্লাহ,  এনসিসি ব্যাংকের ভাইস  চেয়ারম্যান আব্দুস সালামসহ আরো বিভিন্ন ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ-এর শীর্ষকর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার দেশের উন্নয়নে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে এ আয়োজনের সাফল্য কামনা করেন। আয়োজকরা বলেন, এ ফেয়ারের ফলে আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হবেন।
রেমিট্যান্স ফেয়ার উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কে স্টেট সিনেট একটি রেজুলেশন পাস করেছে। সেই সূত্রে রিপাবলিক্যান সিটি মেয়র প্রার্থী কার্টিস সিলিওয়া বাংলাদেশের অভিবাসীদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানের আহ্বানও জানান তিনি। 
অনুষ্ঠানে এনসিসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের উদ্যোগে নৈশভোজে সংগীত পরিবেশনা করেন- কৃষ্ণা তিথি ও শাহ মাহবুবসহ আরো অনেকে।
ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাইহানুল ইসলাম চৌধুরীর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
২০ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ও সানাই পার্টি সেন্টারে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ফেয়ারের দ্বিতীয় দিনে উপচে পড়া অভিবাসী বাংলাদেশি সমাজের সামনে পুরস্কার ঘোষণা করেন ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ। অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পালের সঞ্চালনায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান পর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী (অক্টোবর ২০২৪ থেকেমার্চ ২০২৫) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানোয় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে সোনালী ব্যাংক, দ্বিতীয় জনতা ব্যাংক ও তৃতীয় ইসলামী ব্যাংক। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানোয় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে মাস্টার কার্ড, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে মানিগ্রাম এবং তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে রিয়া ফিনান্সিয়াল সার্ভিস। এছাড়া বাংলাদেশ কমিউনিটিতে বেস্ট সার্ভিস দেওয়ার জন্য সোনালী এক্সচেঞ্জ, বিএ এক্সপ্রেস এবং স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেসকে পুরস্কৃত করা হয়। রিয়া মানি ট্রান্সফারের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন কার্লোস, আকাশ এবং মিন্টো সাহা। মাস্টার কার্ডের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন: প্রতীক (ভাইস প্রেসিডেন্ট), ট্রেজারি-এর ইন্দ্রনীল (সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট), ট্রান্সফার সলিউসনসের মার্ক (ভাইস প্রেসিডেন্ট), ট্রান্সফার সলিউসনসের মালিক (সিনিয়রভাইস প্রেসিডেন্ট)।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দিনে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটে সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। একইস্থানে দুপুর তিনটায় অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে রেমিট্যান্স কোম্পানির সিইওদের মধ্যে আলোচনা। বাংলাদেশি রেমিট্যান্স চ্যানেল পার্টনারদের সাথে গোলটেবিল বৈঠকের প্রধান অতিথি ছিলেন- ড. আহসান এইচ. মনসুর, গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ড. মো. হাবিবুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকের প্যানেলিস্ট ছিলেন যথাক্রমে- মোহাম্মদ মহসিন কবির, সিইও, সোনালী এক্সচেঞ্জ কোং ইনকর্পোরেটেড, মো. আতাউর রহমান, সিইও, বিএএক্সপ্রেসইউএসএ ইনকর্পোরেটেড, ড. কামাল ইউ. আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্লাসিড এক্সপ্রেস, মোহাম্মদ মালেক, প্রেসিডেন্ট ও সিইও, স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস,  এম আমানুল্লাহ, চেয়ারম্যান, মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ হাউজ (ইউকে), মাসুদ রানা, সিইও, সানম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেস কর্পোরেশন।
রেমিট্যান্স ফেয়ার উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা গ্লোবাল বিজনেস এপ্রিল সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন-নুরুল বাতেন। সম্পাদক ছিলেন ফারুক আহম্মেদ। প্রচ্ছদ ও অঙ্গ সজ্জা করেছেন মাহবুব আলম। শিল্প সম্পাদনায় ছিলেন দেওয়ান আতিকুর রহমান।
রেমিট্যান্স ফেয়ারের শেষ দুদিন সানাই পাটি হলে সেমিনারের পাশাপাশি জ্যাকসন হাইটস এর ডাইভার সিটি প্লাজায় চলে আনন্দ উৎসব। রেমিট্যান্স ফেয়ারে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের শ্লোগান সমৃদ্ধ ব্যানার ফেস্টুন এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ডিজিটাল স্কিনে অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর তথ্য সমৃদ্ধ বিজ্ঞাপন প্রবাসীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। দুই দিনব্যাপী ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের তৃতীয় এবং শেষ দিন বৈধ রেমিট্যান্স প্রেরণে নিউইয়র্কের সংবাদ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান এবং নবযুগ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর বক্তব্য রাখেন। সঞ্চালনায় ছিলেন টিবিএন ২৪ এর অ্যাসাইন্টমেন্ট এডিটর আহসান উদ্দিন জুয়েল। দু’দিন ব্যাপী রেমিট্যান্স মেয়ারে ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনালব্যাংক, পূবালী ব্যাংক এবং এনসিএল ব্যাংকের স্টলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিড় করে।

শেয়ার করুন: