শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

আর্জেন্টিনার বিশ্বজয় : কাটবে জীবনের সমস্ত কুফা

সুখেন জোসেফ গোমেজ:

আপডেট: ২০:২৬, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

আর্জেন্টিনার বিশ্বজয় : কাটবে জীবনের সমস্ত কুফা

সুখেন জোসেফ গোমেজ

ওরে কান্না…… সিনথিয়া হুহু করে। রেইজেল, রিশান ভয় পেয়ে যায়। হঠাৎ কি হলো… বাবা-মা কাঁদছে কেন? রিশান বলে, ইটস্ এ্যা গেম? আমার উত্তর, আমাদের কাছে এটা অনেক কিছু।
আমার মতো চল্লিশের কোঠায় বয়সের  আর্জেন্টিনা সমর্থকদের জন্য একটু বেশিই আবেগের। ৮৬ সালে বাবার কোলে বসে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয় দেখেছি, সাদা কালো টেলিভিশনে (শোনা কথা)। ৯০ সাল থেকে স্পষ্ট মনে আছে, ফাইনালে বির্তকিত পেনাল্টি দিয়ে ম্যারাডোনাকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ থেকে বঞ্চিত করা। “আমাকে আর মেরো না… শিরোনামে ম্যারাডোনার পোস্টা বের হতো। স্টিকার কিনে স্টিলের আলমারিতে, বইয়ের মলাটে সাজাতাম। ১৯৯৪ সালে ডোপ টেস্ট কেলেঙ্কারিতে মহানায়কের বিদায়। আমরা এখনো বিশ্বাস করি, এটা ফিফা আর ব্রাজিলের ষড়যন্ত্র। 
এরপর, যুগে পর যুগ অপেক্ষা। যেখানে যাকে ১০ নম্বরে পেয়েছি, তাঁহাকেই ম্যারাডোনা বলে ডেকেছি। রিকুইল্যামে ১০ নম্বর জার্সিতে বিশ্বকাপের আবেগের কান্না বিদায় সারিতে যোগ হয় এরিয়েল ওর্তেগা… একা কাটাতে কাটাতে বল মাঠের বাইরে নিয়ে যেতো। কার্লোস তেভেজ…জ্বিবা বের করে গোলমুখ দেখা পেতে না। এরমধ্যে একবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়। অন্যদিকে, ব্রাজিলের কি উল্লাস। টাকলু রোনালদো অলস হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শুধু গোল করতো। দুঙ্গা, কাফু, কাকা, রোনালদিনহো, রবার্তো কার্লোসরা স্টার জলসা বসাতো। ছন্দময় ফুটবলে আমাদের বদ দোয়া কাজে লাগতো না। মাঝে মাঝে ভাবতাম, দিবো সাপোর্ট করে, আমরা সাপোর্ট করলেইতো হারে। ওরা.....ভাব নিতে বলতো, যারা ফুটবল বুঝে তারা ব্রাজিল সার্পোট করে। আমরা বলার মতো কিছুই পাইতাম না। ইংল্যান্ডের সাথে নিশ্চিত হারা খেলা রবার্তো কার্লোস কি ফ্রি কিক নিলো রে বাপ। আরেকবার উৎপল শুভ্র লিখেছিলেন, জার্মানিতে বিশ্বকাপ, তোমরা কোনো লাফাও বাপ। ওর্তেগা মাথায় ড্রস দিয়ে লাল কার্ড দিয়ে বিদায়, স্কুলে হান্নান স্যার আর্জেন্টিনার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। 
এক বুক আশা নিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষায়। যদি আসে কোনদিন সেই সুখ পাখি। ২০১৪ সালে মেরিল্যান্ডে বড় পর্দায় বিশ্বজয়ে মেসি ম্যাজিক দেখার আশায় বুক বাঁধি। আবারো হতাশ হয়ে, শেষের দিকে একটি বল..১..২..৩..৪ জন পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বকাপ হারায়। সবাই বলে মেসি আর্জেন্টিনায় কার্যকর না। 
এইবার মনের মধ্যে কেমন যেন একটু কনফিডেন্স পাই। প্রতিজ্ঞা করি, জেতা না পর্যন্ত কোনো স্ট্যাটাস দিবো না। আমার আর্জেন্টিনার বন্ধু ফার্নান্দো কাতারে গেছেন, বলে দিয়েছি.. কাপ ছাড়া যেন না ফিরে। প্রথম খেলা শুয়ে শুয়ে মোবাইলে দেখি… আর্জেন্টিনা খেজুর খেয়ে যায়। সিদ্ধান্ত নিলাম… মোবাইলে দেখলো আর্জেন্টিনা হারে, টিভি ছাড়া খেলা দেখবো না। পরের খেলা ঠিকই টিভিতে দেখলাম, জিতলো। গোলের দরকার হলে রেইজেলকে প্রার্থনা করতে বলতাম। কেন ইউ প্লিজ মেক এলাকার গোল? রেইজু বলার সাথে সাথে গোল হতো। 
আজ সিদ্ধান্ত নিলাম, রোজা থাকবো, খেলা শেষ করে খাবো। রেইজু ঘুমাচ্ছে, ওকে আর দরকার হয় নি। হাফ টাইমে দুই দুইটা। এরমধ্যে সিনথিয়ার যুক্তি ফ্রান্স ইচ্ছে করে হারছে। মেসিকে কাপ দিয়ে দিবো। সিনথিয়া আমার পাশে নাস্তা রাখলো। ৭০ মিনিটের পর চিন্তা করলাম, জিতেই গেছি, নাস্তা করে নেই। যেই নাস্তা শেষ করলাম পর পর দুই গোল শোধ। ও মোর খোদা। তবে কি আমার রোজা ভঙ্গের কারণে হারতে বসেছি। আমার পাশে সুকুমার দা ব্রাজিল সমর্থক খেলা দেখছিল, সে বলে আমি চলে যাই.. তাহলে জিততে পারো। দাদা ম্যারিল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা হলো। 
অতিরিক্ত সময়ে রেইজু পাশে বসলো। আমরা বলি.. গোল দিতে বলো… ও আর বলে না। বলে, পানি খাবো… চকলেট খাবো, গোলের কথা আর বলে না। টেনশন বাড়ে… সব আব্দার পূরণ হলে বলে, কেন ইউ প্লিজ মে এনাদার গোল? সাথে সাথে গোল। আমাদের কি লাফ… ও মা… দুই মিনিটেই শোধ। কি মুশকিল। পেনাল্টির সময়ে পায়চারি…. চোখ মুখ  ঢেকে ফেলা।।। অবশেষে আসলো আমাদের বিজয়…. আহ্… বিশ্বকাপ। ৩৬ বছরে আবেগ বাঁধ ভেঙে কান্না হয়ে বেরিয়ে পড়ল। আমি সহজেই কাঁদি না….. কলিজা হাতে নিয়ে দেখা খেলায় কোনো কিছুই মানে না।
কেটে যাক সবার জীবনে সব কুফা। জয়তু আর্জেন্টিনা।
 লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, নিউইয়র্ক। 

শেয়ার করুন: