ফাইল ছবি
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিএনপি। মিছিল মিটিং সমাবেশের নামে বিভিন্ন উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়ে তার দলের নেতাকর্মীদের মারমুখী স্বভাব তৈরি করে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য একটা নির্বাচনের আগে গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করা। দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে নিজেদের পেশীশক্তির জানান দেয়া। এরই মাধ্যমে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবান্তর দাবীকে পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সরকারকে বিদায় নিতে হবে। অথবা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে তাদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিতে হবে, এটি তাদের দাবী। সরকার যদি তাদের এই দাবী মেনে না নেয়-তারা শক্তি প্রদর্শন করে সরকারকে ফেলে দেবে অথবা ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে অথবা ব্যাপক গণআন্দোলন করে ক্ষমতা দখন করে নেবে। বিএনপি নেতা আমান উল্লা আমান অশালীন ভাষায় প্রতিদিন সরকার পতনের রিহার্সাল দেয়, আবার সেই রিহার্সাল থেকে কর্মীদের আহ্বান জানায় কে কে যোগ দেবেন সচিবালয় আক্রমণ করার আন্দোলনে। গত ডিসেম্বর এর আগে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে নাকি খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলবে।
এভাবে তারা সারা দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে নির্বাচন বানচালের স্বড়যন্ত্র করছে। তাদের যে দাবী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী, এটি আসলে লোক দেখানো দাবী, এটি তাদের মূল দাবী নয়, তাদের সুদুর প্রসারি পরিকল্পনা হচ্ছে সরকারকে যেকোন প্রকারে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে পারলে, প্রয়োজনে বিদেশীদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে হলেও সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা যায়-তাহলে তারা পুরো দেশ দখলে নিয়ে এদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। দেশে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, ২০০১ সালের কায়দায় এদেশকে ব্যার্থ ও অকার্য্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করবে। জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ কায়েম করে এদেশকে গণতন্ত্রহীন করে দেশকে জঙ্গীবাদী তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করবে। এটি আওয়ামী লীগ যেমন জানে এবং বুঝে তেমনি দেশের জনগণও বুঝে, বিশ^ বিবেকও বুঝে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এদেশকে ধ্বংস করবে, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ধ্বংস করবে, এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করবে। সুতরাং সরকারের দায়িত্ব এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, আর সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করা। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা আর দেশ বিরোধী অপশক্তি জামাত বিএনপির মুখোমুখি এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ঠিক সেই মূহূর্তে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের গণতন্ত্র মানবাধিকারও বেসামরিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। সফরের এমন দিনে এই প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার চলে যান সেখানে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন, রোহিঙ্গাদের জীবন যাপনের চিত্র দেখেন, বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের কথা শুনেন, তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চান কিনা সেটাও জানতে চান। বলতে গেলে মার্কিন এই প্রতিনিধি দলের সফরের প্রথম দিন কেটে যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরতে ফিরতে। ঢাকায় ফিরে তারা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়, এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাথে বৈঠক করেন। সর্বশেষে তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে গণভবনে স্বাক্ষাৎ করেন এবং দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। সব কটি বৈঠকে তারা আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতা মুক্ত করা সম্ভব এসব বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সরকারের সকল পর্যায়ের বক্তব্য শুনার পর তারা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ নিয়ে তারা কোন প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করবে না। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিএনপির দাবীর প্রেক্ষিতে বলেছেন বাংলাদেশের নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী হবে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা শুধু ফ্রি ফেয়ার ভায়োলেন্স মুক্ত নির্বাচন দেখতে চাই। এরপর মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে অনুরোধ জানানো হয় র্যাবের ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য।
উল্লেখ্য যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি ৪ দিনের সফরে গত মঙ্গলবার ১১ জুলাই দিল্লি থেকে ঢাকায় এসে পৌছায়। প্রতিনিধি দলে উজরা জেয়া সহ আরও ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দফতরের উপসহকারি প্রশাসক অঞ্জলী কৌর। এই প্রতিনিধি দল সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা সংকট, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামাত সুশীল সমাজের কিছু লোক, কিছু এনজিও যারা বিদেশী সাহায্য পুষ্টসহ দেশের কিছু স্বাধীনতা বিরোধী চক্র দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি মেনে নিতে পারছে না। আর শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশে যে অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে যার প্রমাণ বাংলাদেশ নি¤œ আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় উঠে আসছে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি ও এসডিজি গোলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে আরও দুই বছর আগে।
বাংলাদেশের উন্নয়নকে থামিয়ে দেয়ার জন্য এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য এসব অপশক্তি উঠে পড়ে লেগেছে। তারা দিনরাত সরকারের বিরুদ্ধে স্বড়যন্ত্র করছে সরকারের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মিথ্যাচারের ভূয়া গল্প তৈরি করে প্রতিদিন মার্কিন দূতাবাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর দূতাবাস, ইন্ডিয়া, জাপান, কানাডাসহ বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে জমা দেয়, আর তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করে বাংলাদেশে নাকি গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই, সুশাসন নেই, আইনের শাসন নেই তাই ওই সব দেশগুলো থেকে যেন সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে তারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলবেন তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন আগামী নির্বাচনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কি না। মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে ৪ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সাথে কথা বলে আগামী নির্বাচন কিভাবে স্বচ্ছ, ফ্রি ফেয়ার, অংশগ্রহণমূলক হতে পারে সেই সম্পর্কে সরকারের বক্তব্য শুনেছেন এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব সে ব্যাখ্যা শুনে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা বলেননি।
লেখক: সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।