বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

দেশ কি তাহলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পথে

শাহাব উদ্দীন, রাজনীতিক

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২১ জুলাই ২০২৩

দেশ কি তাহলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পথে

ফাইল ছবি

সুজলা-সুফলা শষ্য-শামলা সোনার বাংলা। এক সময় গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ ছিল। ইতিহাসে পড়েছি বিশ্ব পরিব্রাজক ইবনে বতুতা অঞ্চল ভ্রমণের পর এখানকার মানুষের সুখ- সমৃদ্ধি দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন। তাইতো কবি লিখেছেন, ধনধান্যে পুষ্পা ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা। এখনো চোখের সামনে, স্মৃতিতে ভাসে  ১৯৭০ সনের নির্বাচনে আমাদের পাড়ার বড় ভাই (মানিক) সারা রাত তার আবেগ প্রবন দরাজ সুন্দর গলায় গান গেয়ে ঘুমন্ত মানুষের কাছে ভোট চাইতেন।

আও বাঙালী বাঁচতে যদি চাও তোমরা সুখেতে-নৌকার চিহ্নে ভোট দিয়ে যাই সবাই মিলে এক সাথে

আওয়ামী লীগ  জিন্দাবাদ... ইলেকশনের অনেক আগে থেকেই অফিস জমজমাট। কলের গানের গান বাজনা, রঙিন বা সাদা কাগজে  পোস্টার, গেইট, চা, সমুচা আরও কতকিছু। প্রত্যেক এলাকায় ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভোট চাওয়া টোকন দিয়ে আসা এবং নির্বাচনের দিন কাকডাকা ভোর থেকে লাইন ধরে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোট দিয়ে, রিজাল্ট নিয়ে যথাস্থানে জমা দেওয়াই ছিল কর্মীদের কাজ। সে সময় মারামারি ভোট জালিয়াতির কথা শুনিনি। আনন্দ ঘন পরিবেশে শতকরা নব্বই ভাগের  বেশী মানুষ ভোট দিয়েছে। মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে। তাদের প্রতিনিধিরা দেশ চালিয়েছেন। যেখানেই ব্যত্যয় হয়েছে সেখানেই বাঙালিরা রুখে দাঁড়িয়েছে। তারই পরিনাম হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

মানিক ভাইকে স্বাধীনতার পর আর দেখিনি। সাথের মুক্তিযোদ্ধা মন্নান মামা বলেছিলেন যুদ্ধের সময় শত্রুদের গোলার আঘাতে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলো। এরকম হাজার   ভোট  এবং মুক্তিপাগলের মানুষের রক্তে ভেজা স্বাধীনতা। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার পর থেকে মানুষের ভোটের ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি। আজ পশ্চিমারা নেই কিন্তু যেই ক্ষমতায় যাই কেউই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারিনি। জাতির সেই আকাঙ্খা থেকেই অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের  নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারকে বাধ্য করা হয়ে ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান প্রতিষ্ঠিত করতে এবং তার অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ  সরকার গঠন করেন। কিন্তু কিছুদিন  যেতে না যেতেই তারা নাটকীয় ভাবে  সুপ্রিম কোর্ট, সংবিধান, পার্লামেন্ট ইত্যাদির মাধ্যমে গোজামিল দিয়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তুলে দিলেন এবং পুরনো মিমাংসিত বিষয়কে নিয়ে ষড়যন্ত্র চক্রান্তের পথ বেছে নিলেন। যে দিন ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল। তখনই এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল দলের মধ্যে কু মতলব রয়েছে বিনা রক্তপাতে সহজে ক্ষমতা ছাড়বে না।

অতীতে যতটা নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে প্রত্যেকটি ছিল কারচুপি প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামী সরকারের অধীনে গত তিনটি নির্বাচনে গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে এমন তলানির জায়গায় নিয়ে গেছে মানুষ এখন আর ভোট কেন্দ্রে যায় না। পুলিশি প্রহরায় দিনের ভোট রাতেই  শেষ হয়ে যায়। বিনা ভোটে পার্লামেন্টে অধিকাংশের চেয়ে বেশি নির্বাচিত হয়ে সাংসদ মন্ত্রী হয়ে যান। সর্বশেষ উপ-নির্বাচনে মাত্র ১১ভোট পড়েছে। গণতন্ত্র মানবাধিকার ভোট দান পদ্ধতি সম্পুর্ন রুপে ভেঙে পড়েছে। মানুষের ইচ্ছায় বা প্রতিনিধি দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা হয় না। এক আজব তামাজা চলছে দেশে। মানুষের হারানো আধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে আজ ঢাকা লক্ষীপুর, ফেনী, বগুড়া খাগড়াছড়ি সহ  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশ শত শত লোককে আহত পাখির  মতো গুলি করে হত্যা করেছে। হায়রে ক্ষমতা! যার ধমনিতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত। তার কাছ থেকে জাতি তা প্রত্যাশা করে না। গতকাল ১৭ জুলাই ঢাকা  ১৭ আসনের নির্রাচনে প্রধান বিরোধী দল বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ, জাপা স্বতন্ত্র সহ সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও। এটা ছিল ভোটারবিহীন, নিরুত্তাপ প্রশ্নবিদ্ধ একটি নির্বাচন। যেখানে সরকার দলের উচিৎ ছিল সকল প্রার্থীদের একত্রিত করে আনন্দ উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টির করা এবং যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করে বিরোধী দল বিদেশি যারা আমাদের দেশের নির্বাচনের উপর প্রখর নজর রাখছে সকলের মন জয় করা। তা না করে হলো উল্টো। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের মতো একজন ব্যক্তিকে  পুলিশের সামনে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে যেভাবে মারলো। সমস্ত জাতি স্তম্ভিত, লজ্জিত হতাশ। ওরা কি চায়হিরো আলমের মতো একজন  লোককেও নির্বাচনের মাঠে সহ্য করতে পারে না। এটা খুবই দু:খজনক।

এখন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাতিসংঘসহ বিশ্বের সর্বত্র থেকে নিন্দার ঝড় আসছে। দেশকে আর কত নিচে নিয়ে  যেতে চান? আজ পূর্ব ঘোষিত বিএনপির কর্মসূচি পদযাত্রা ছিল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। রাজনীতির উত্তপ্ত মাঠে  একটি দলের কর্মসূচির পাশাপাশি শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করে সারা  দেশে রাজপথে রক্তের হোলি খেলা এবং লাশ পড়ছে। আওয়ামী লীগকে কে দায়িত্ব দিয়েছে দেশের শান্তি শৃংখলার নামে বিরোধী দল মতকে দমন পীড়নের? শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দেশের মানুষের টেক্সাসের টাকায় বিভিন্ন বাহিনী রাখা হয়েছে। তা হলে তারা কি ব্যর্থ? পৃথিবীর  কোথাও ধরনের নজির নেই। পেশী শক্তির দ্বারা ক্ষমতা বেশি দিন  কুক্ষিগত করে রাখা যায় না।  একদিন বুমেরাং হয়ে গণ বিষ্ফোরণ হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। সাময়িক ভাবে এই এক ঘেয়েমি কূটচাল দিয়ে বিজয়ী হলেও পরাজিত হচ্ছে বিশ্ব বিবেক নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলাদেশ। যার পরিনাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতি অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশকে পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমরা আরও উপরের দিকে যেতে চাই। কোন ব্যক্তি গোষ্ঠি দলীয় হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দেশকে ধংসের মুখে ঠেলে দেওয়া কারো কাম্য নয়। এই বোধদয় প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নেতাদের হওয়া উচিৎ।

লেখক: রাজনীতিক।

শেয়ার করুন: