শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

এ শহর ধুলোর শহর, জ্যামের শহর আহারে

মেসবাহ শিমুল

প্রকাশিত: ১১:২৪, ৫ মার্চ ২০২৩

এ শহর ধুলোর শহর, জ্যামের শহর আহারে

ঢাকার চিঠির লেখক: মেসবাহ শিমুল

বিখ্যাত একটা গানের কলিকে সামান্য ঘুরিয়ে দিলাম। দেখলাম ঠিকঠাক মিলে গেছে। আসলেই এখন ধুলোর শহর ঢাকা। ক’দিন আগেও আন্তর্জাতিক মানদন্ডে ঢাকা পৃথিবীর বাস অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে একটি তথ্য বেরিয়েছে। এই তথ্যের সত্যতা জানতে আপনাকে পত্র-পত্রিকা কিংবা অনলাইনে ঘাটাঘাটির প্রয়োজন হবে না। একদিন রাত আটটার পর অফিস কিংবা অন্য কোথাও থেকে বাসায় ফিরুন। দেখবেন ঠিকই বুঝে গেছেন আপনি কোন যাদুর শহরে বাস করছেন। 

ঢাকা শহরে ইদানিং রাস্তা ঝাড়– দেওয়া হয় রাত ৮ টার পরে। অর্থাৎ বেসরকারি কর্মজীবীরা যখন সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর ক্লান্ত দেহ, বিষন্ন মনে ঘরে ফেরে ঠিক তখন। আর চলে রাত ১১টা অব্দি। রাস্তাগুলোতে ঝাড়– দাররা ইচ্ছেমতো ঝাড়– বাড়িয়ে যায়। ফালগুনের এলোমেলো বাতাসে সে ধুলো প্রবল বেগে নাসিকা দিয়ে আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে। 

অতীতে দেখেছি ভোর রাতে এইসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নগর সাফাই করতো। মানুষ যখন ঘুম কিংবা বাসায় তখন। একটা মৃদু-মন্দ হালকা ঠান্ডা বাতাস, খোলামেলা কোলাহল মুক্ত পরিবেশে এই সাফাই কর্ম সম্পাদন হওয়ায় অনেকে টেরই পেতো না এই শহরে বিশাল একটা ব্যাপার স্যাপার হয় রাতের অন্ধকারেই। 

এখন আমরা হাঁটি, মাস্ক থাকলে পরি না থাকলে নাকে হাত দিয়ে কোনো মতে পালিয়ে যাই ঝাড়–কৃত এলাকা দিয়ে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগ থেকে বাসায় ফিরতে গিয়ে এমন বেশ কয়েক যায়গায় নাকে হাত দিয়ে কোনো মতে পালিয়ে আসতে হয়েছে। লেখাটি যখন লিখছি তখনো নাকের ভেতরে ধুলোর কড়া ঝাঁঝ টের পাচ্ছি। আমার মতো নিশ্চয়ই হাজারো নগরবাসী আছে যারা প্রতিদিনই এই ধুলোর আস্তরণ গায়ে মেখে বাসায় ফেরেন। সারাদিনের তিরিক্ষি মেজাজের সঙ্গে এই ধুলো মাখা মলিন মুখ নিয়ে বাসায় যখন ফিরি তখন নিজেকে আর মানুষ বলে মনে হয় না। 

ঢাকায় নাকি দুই জন মেয়র রয়েছেন। যারা নিজেদের জনগণের সেবক বলে দাবি করে থাকেন। অথচ জনগণের সেবা গ্রহণের কোনো যায়গায় তাদের কোনো অংশগ্রহন নজরে পড়ছে না। মশা নিধনের কথা না হয় নাই বললাম। এটি একটি দুরুহ ব্যাপার। যানজট সেতো আরো বেশি দুরুহ এবং ক্ষেত্র ভেদে অসম্ভব। কেননা যানজটের সঙ্গে নাকি ব্যক্তিগত লাভ-লসের বিষয়টিও জড়িত। আর মশার বিষয়টিও ভিন্ন। কেননা মশা এখন অতিশয় আজব এক প্রাণী। ওষুধ ছিটিয়েও নাকি তাদের আজকাল মারা যায় না। আবার ঢাকার মশা মারা পড়লেও নাকি বাসে-ট্রেনে করে গ্রাম থেকে দলে দলে জিকিরের সঙ্গে এসে আবার খালি যায়গা রাতারাতি পূরণ করে ফেলে। 

তাই উপরোক্ত অসম্ভবকে সম্ভব করার দাবি না হয় নাই করলাম। অন্তত এই ঝাড়–দারদের বিষয়টি একটু দেখনে। মানুষের বাসায় ফেরার এই সময়টাতে এই নির্যাতন করার কোনো মানে হয় না। এমনিতে নগরবাসী নানা দিক থেকে নানামুখী যন্ত্রণায় দিন পার করে তার মধ্যে এই বাড়তি যন্ত্রণা না দিলেই কি নয়-মাননীয় মেয়রদ্বয়?
 

শেয়ার করুন: