শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

আগুন সন্ত্রাস করে উন্নয়ন ঠেকানোর সুযোগ নেই

সামছুদ্দীন আজাদ, সহ সভাপতি-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আগুন সন্ত্রাস করে উন্নয়ন ঠেকানোর সুযোগ নেই

শামসুদ্দীন আজাদ, সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ বিশে^র কাছে একটি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে অনন্য উদাহরণ। তৃতীয় বিশে^র দেশ হলেও নি¤œ আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় উঠে এসেছে। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার হাত ধরে যে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন হচ্ছে তা এখন দৃশ্যমান। এমন উন্নয়ন বাংলাদেশে আর কারো পক্ষে কোনদিন সম্ভব হবে না। কারণ অতীতে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের ক্ষমতায় আসার ইতিহাস হলো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখল করা।

এরপর লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ, জঙ্গীবাদ কায়েম এবং সর্বশেষ সংযোজন ছিল সারা দেশব্যাপী একযোগে অগ্নি সংযোগ করা, বাস ট্রেনে আগুন দেওয়া, যাত্রীবাহী নৈশবাসে পেট্রোল বোমা মেরে ঘুমন্ত যাত্রীদের জীবন্ত দ্বগ্ধ করার মত নৃশংস বর্বরতার ইতিহাস। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করে দেশে করেছেন উন্নয়ন, দূর করেছেন দীর্ঘস্থায়ী অভাব, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করেছেন সাধারণ মানুষের। বাংলাদেশ থেকে অভাব শব্দটি অনেকটা যাদু ঘরে পৌছে দিয়েছেন তিনি। 

এদেশের ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এরই মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে ২০১৭ সাল থেকে খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা দিয়ে বিশে^র ইতিহাসে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিশে^র বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার আস্থা অর্জন করে সময় মত ঋণের শর্ত পূরণ করে যথাসময়ে সেই ঋণ পরিশোধ করে দাতাদের আস্থা অর্জনে যেমন সক্ষম হয়েছেন তেমনি সমান তালে দেশের মেগা প্রকল্পসহ অবকাঠামোগত সকল উন্নয়নও তিনি সারা দেশব্যাপী একযোগে করেই যাচ্ছেন। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ^ব্যাংকের সবচেয়ে বেশী ঋণ দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সংস্থাটির পক্ষে জানানো হয়, বাংলাদেশের শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনীতি, শক্তিশালী ঋণ ব্যাপস্থাপণা এবং ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা এসব মিলেই বাংলাদেশ দাতাদের আস্থা অর্জন করেছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গত তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশে বিশ^ব্যাংকের  ঋণ ৫শত শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ঋণ দিয়েছিল ৪ মিলিয়ন ডলারেরও কম। ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যা ছিল প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার।

এরপর গত ১০ বছরে সেই ঋণ ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সংস্থাটির অর্থায়ন প্রায় ১৪.৫০ বিলিয়ন ডলার। আর স্বাধীনতার পর থেকে মোট ৩৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে যা অন্য উন্নয়ন সহযোগী বা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরমধ্যে অনুদান, সুদহীন ঋণ এবং সবচেয়ে কম সুদের ঋণ রয়েছে। সম্প্রতি বিশ^ব্যাংকের এমডি ও ৪ জন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন তারা বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার কথা জানতে চেয়েছেন এরপর তারা সরাসরি সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের আগ্রহের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন এবং তারা সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছেন। যা কিনা এ যাবৎ কালের সর্ববৃহৎ অংকের ঋণ। যার প্রথম কিস্তিও এই ফেব্রুয়ারিতে পাওয়ার ব্যাপারে বিশ^ব্যাংকে ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি-জামাত এবং তাদের দেশীয় কুশিলবরা ভেবেছিলো বাংলাদেশে দূর্ভিক্ষ হবে। মানুষ খাদ্যভাবে মারা যাবে এই শঙ্কায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুৎ করবে এমন প্রত্যাশায়। তার মানে বাংলাদেশ শ্রীলংকা হবে আর তখনই বিএনপির মত সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের জন্য সু সময় তৈরি হবে। তারা রাতারাতি ক্ষমতা দখল করবে। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি আমি বাংলাদেশ ঘুরে এলাম। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক এলাকা আমি স্বচক্ষে দেখে এলাম। এমন উন্নয়ন দেশে চলছে যা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ^াস করা যাবে না।

আমি প্রথমে চট্টগ্রামের উন্নয়নের কথা বলছি-চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে উড়াল সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রাম শহর থেকে বন্দর হয়ে বিমান বন্দর পর্যন্ত যে উড়াল সেতু হচ্ছে তা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি সংযোগ হয়েছে কর্ণফুলী টানেলের সাথে। এরপর চট্টগ্রাম বন্দর বে টার্মিনাল হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম রোডের সাথে সংযুক্ত হয়েছে রিভার ড্রাইভ। যা কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেষে গড়ে তোলা হয়েছে নিউইয়র্কের এফডিআর ড্রাইভের আদলে। এমন সুন্দর নয়নাভিরাম দৃশ্য কল্পনার জগৎকেও হার মানায়। এই রাস্তা দিয়ে চট্টগ্রম হযরত শাহ্ আমানত বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে শহরের দিকে আসার সময় চোখে পড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের নজর কাড়া দৃশ্য। এই বন্দরে লাখ লাখ জাহাজ প্রতিদিন মালামাল খালাস করছে দেশী-বিদেশী মালবাহী পণ্য আনা নেওয়া করছে। নোঙ্গর করা জাহাজ এবং মালামাল খালাস করা জাহাজের আনাগোনা দেখলেই বুঝা যায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আর দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের চিত্র। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বিশাল বিশাল ব্রীজ, কালভার্ট সড়ক যোগাযোগে যুগান্তকারি উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ঢাকার মেট্রোরেল, শাহজালাল বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, এর সাথে সংযুক্ত উড়াল সেতুর নয়নাভিরাম দৃশ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় শেখ হাসিনার অনন্য দেশপ্রেমের কথা, সাহসিকতার কথা, শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার সক্ষমতার কথা।

আমাদের দেশে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাদের কেউ দেশপ্রেমিক নন। তাদের কেউই রাজনৈতিক চরিত্রও ধারণ করে না। তারা সরাসরি দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমন চরিত্র পৃথিবীর আর কোন দেশের বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে নেই। যেমন এই দেশটা আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এতে কোন সন্দেহ নেই। ২৪ বছরের পাকিস্তানী শাসন শোষনের বিরুদ্ধে বিরামহীন সংগ্রাম করেছেন বঙ্গবন্ধু। উপস্থাপন করেছেন ঐতিহাসিক ৬ দফা। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ উপস্থাপন করেছিল ১১ দফা। সব দফার মূলমন্ত্র ছিল বাঙ্গালীর স্বাধীনতা এবং শেষ পর্যন্ত ৩০ লক্ষ শহীদের বলিদান। ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হানির মধ্যে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তি এবং পথচলা। এ নিয়ে নেই কোন সন্দেহ সংশয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপিও তাদের মিত্র জামাত কোনদিন আমাদের স্বাধীনতাকে, মহান মুক্তিযুদ্ধকে, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানতে রাজী নয়। তারা সরাসরি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এই দলের যিনি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তিনি অবৈধ ক্ষমতা দখলকারিও বটে। ক্ষমতা দখল করে তিনি রাজাকারদের, স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসন করেছেন। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে গেছেন। কুখ্যাত স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়েছেন। হুবহু একই কায়দায় বেগম জিয়া, যিনি স্বৈরাচারি জিয়ার স্ত্রী তিনিও ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধী নিজামী, মোজাহিদ, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরীর মত রাষ্ট্রদ্রোহী রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে সরাসরি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন। সুতরাং তাদের অবস্থান স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আজ তারাই হচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধী দলীয় নেতা। তারাই দেশে জ¦ালাও পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। ১৯৭১ সালে যেভাবে বর্বর পাকিস্তানী মিলিটারি আমাদের উপর চড়াও হয়েছিল সেভাবে। তারা আবার গণতন্ত্রের নতুন ফর্মূলা দেয়। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবী করে এবং সরকারকে হটানোর হুমকি দেয়।

উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রাপ্তির প্রত্যাশায় পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি সেই মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন। পাকিস্তানকে গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করে মার্কিন প্রশাসন যাতে বর্বর পাকিস্তানী সেনারা আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন গুড়িয়ে দেয়। আজ আবারও ২০২৩ সনে এসে বিএনপি-জামাত মার্কিন প্রশাসনের সরণাপন্ন হয় আবারও তারা যেন আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আমাদের সব উন্নয়নকে গুড়িয়ে দেয়। বিএনপি চায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়–ক, এই দেশের পরিণতি পাকিস্তানের মত হোক। স্বাধীন বাংলাদেশের যে উন্নয়ন শেখ হাসিনার হাত ধরে হচ্ছে এতে তাদের গায়ে আগুন জ¦লছে। তারা এমন উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না। তাই তারা চেষ্টা করছে দেশী-বিদেশী সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় এদেশে আরেকটি সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে। ঠিক এমনি পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের নিয়ন্ত্রণ করবে কোন বিদেশী প্রভূ রাষ্ট্র যাতে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে না থাকে এই দেশ। পৃথিবীতে সন্ত্রাস সহিংসতাকে আশ্রয় প্রশ্রয় লালন করে কোন রাজনৈতিক দল মাঠে টিকে থাকতে পারে না। তারা কোন রাজনৈতিক দলের আওতায়ও আসে না। দিনে দিনে তারা হয়ে উঠে সন্ত্রাসী সংগঠন। এবং এক পর্যায়ে এসব সন্ত্রাসী সংগঠনের বিলুপ্তি ঘটবে। নিক্ষিপ্ত হবে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। এই দেশ স্বাধীন করেছে আওয়ামী লীগ। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করা আওয়ামী লীগের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আগুন সন্ত্রাস করে জামাত-বিএনপি বাংলাদেশের উন্নয়নকে ঠেকাতে পারবে না।
লেখক: সহ সভাপতি-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ
 

শেয়ার করুন: