শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ঢাকার চিঠি

বই মেলায় পাঠকের চেয়ে খাদক বেশি 

মেসবাহ শিমুল, ঢাকা অফিস 

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বই মেলায় পাঠকের চেয়ে খাদক বেশি 

ঢাকার চিঠির লেখক: মেসবাহ শিমুল

অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় বিদায়ের সানাই বাজছে। বই প্রেমিদের আনাগোনাও কমে গেছে। কমেছে লেখক-প্রকাশকদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি কিংবা আশা-আকাঙ্খার চাপ। এখন ধীরে ধীরে বাক্স-পেট্রা গুছিয়ে ঘরে ফেরার পালা। টালি খাতায় হিসেব খুলে বসতে হচ্ছে তাদের। ‘কত বই এলো-গেলো। কত টাকা খোয়া গেলো। কত পূঁজি রুজির ঘরে চুপি চুপি হাত মেলালো’। 

বিগত বেশ কটি মেলা থেকে দেখে আসছি বই মেলায় খাবারের দোকান কেবল বাড়ছেই। এ বছরও তাই। এবার স্ত্রী-সন্তান বিশেষ করে মেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে যারা মেলায় এসেছেন তাদের সিংহ ভাগেরই অভিযোগ বই মেলার পরিবেশ নিয়ে। বেশিক্ষণ তারা মেলা প্রাঙ্গণে কাটাতে পারেননি। বাথরুম থেকে শুরু করে বিশ্রাম কিংবা স্বস্তিতে চলাচলের পরিবেশ ছিলো না। নিরাপত্তার খামতি ছিলো। বখাটেদের উৎপাত ছিলো। তাদের অনেকেই ফেসবুকে বিষয়টি ক্ষোভের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। 

প্রকাশকদের কপালের চিন্তার ভাজটি আরো গভীর হয়েছে। বেচাবিক্রি তেমন হয়নি। অনেক স্টলের সারা মাসের খরচ ওঠেনি। শেষ সময়ে এসে ধারদেনার পরিমান বাড়াতে হচ্ছে। তাদের আক্ষেপ বইয়ে দোকানদার না হয়ে চটপটি-ফুসকার দোকানদার হলে এই দুশ্চিন্তার কোনো কারণই ছিলো না। কেননা বই মেলায় ক্রেতা-পাঠকের চেয়ে খাদকের সংখ্যাই বেশি। দু’শ টাকা খরচ করে একটি বই কিনতে যাদের কষ্ট হয় তারাই আবার উদ্যানেরও ওই দিকটা খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বই মেলা নয়, মাসব্যাপী খাদ্য মেলা চলছে। 

আরেকটি কথা বেশ কানে বাজছে। সেটি হলো পৃথিবীতে যত ভূত তার সবগুলোকেই নাকি পাওয়া যাচ্ছে বই মেলায়। বাচ্চাদের বই মানেই ভূতের বই। ভূত ছাড়া নাকি অন্য কিছু পাওয়াই যাচ্ছে না। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য যে বই সেগুলোতে কেবল ভূত-প্রেতের গল্প থাকলে কি করে বিকাশ হবে। এই বিকাশটা আসলে কিসের বিকাশ?

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাস্তায় অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে দেখলাম ঘুরে-ফিরে বেড়াচ্ছে। তাদের হাতে গোলাপ। মাথায় ফুলের ব্যান্ড। শাড়ী-চুড়িতে বাঙালী নারী। প্রেম কিংবা দ্রোহে তাদের ফাগুনের আগুন লাগা ভাব। এই অবস্থায় দিবসটি আসলে কিসের জন্য পালিত হলো সেটিই বোঝা যেন দায় হয়ে পড়ে। এইসব তরুণ-তরুণীরা বই মেলায় যায় কি না জানি না। তবে গেলে নিশ্চয়ই বেচাবিক্রি বাড়তো। সেটি বইয়ের দোকানের না হলেও ফুসকার দোকানের নিশ্চয়ই। তবুও ভালো বই মেলার গেট দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে আসতো আবার গেট ধরে। এভাবে জ্ঞানের দরজা টপকে খাওয়ার রাজ্যের গেলেও তাতে খারাপের কিছু ছিলো না। কিন্তু সেটি অনেকের ক্ষেত্রেই হয়তো হয়নি। সেটি হয়নি কিংবা হচ্ছে না বলে প্রকাশকদের কপালের চিন্তার ভাঁজ কেবল গভীর থেকে গভীরতর হয়। 
 

শেয়ার করুন: