শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

মিন্টু ও গয়েশ্বরের বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ

শামসুদ্দীন আজাদ, সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মিন্টু ও গয়েশ্বরের বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ

ফাইল ছবি

গয়েশ্ব চন্দ্র রায়। যার অতীত রাজনীতি ছিল জাসদ। জাসদের কবর রচনার পর তার রাজনীতিও শেষ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে তিনি যোগ দেন যুবদলে। আবার যুবদল থেকে বাইচান্স পদোন্নতি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বনে যান। তাতে তার আস্ফালন বেড়ে যায়। ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপুর কাছে পরাজিত হন। যে যন্ত্রণায় এখনো তিনি কাতরাচ্ছেন। যেহেতু তিনি বিএনপি করেন সঙ্গতকারণে তিনি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে স্বৈরাচারি জিয়ার বুটের তলায় এদেশের গণতন্ত্র সংবিধানকে পৃষ্ঠ করে বিএনপি নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্ম দিয়ে গেছেন এই স্বৈরাচারি। এই সংগঠনে তিনি আলবদর, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী, পাকিস্তানপন্থী, মুসলিম লীগারদের নিয়ে দল গঠন করেন। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ^াস করে না, যারা ১৯৭২ সালের সংবিধান মানেনা, যারা গণতন্ত্র মানে না। 

অবশ্যই এরা স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক দেশদ্রোহী বা রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে খ্যাত। গয়েশ^ রায় স্বাধীনতা বিরোধী হিন্দু মৌলবাদী রাজাকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা দরকার এবং তাকে বিচারের আওতায়ও আনা উচিত। যে স্বাধীনতার জন্য বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার জীবনের যৌবনের মহা মূল্যবান সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। জেল-জুলুম নির্যাতনকে সহাস্যে বরণ করে নিয়েছেন। এমনকি ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যখন ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর গুলি চালিয়ে আক্রমণ শুরু করে এবং জাতির পিতাকে তার ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে আটক করে পাকিস্তান কারাগারে দীর্ঘ মাস বন্দী করে রাখেন, তাকে আপোষ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন, শারীরিক নির্যাতন করেন কোন কিছুতেই রাজী না হলে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মারার ভয় দেখান। এমনকি পাকিস্তানের মাটিতে তাকে দাফন করারও হুমকি দেন পাকিস্তানী শাসক। স্বাধীনতা বাঙ্গালীর মুক্তির প্রশ্নে তিনি কোন আপোষ করেননি বরং বলেছিল তোরা যদি আমাকে মেরে ফেলিস তাহলে আমার লাশটা আমার বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিস। সুতরাং স্বাধীনতার মূল্য কি জিনিস সেটা বঙ্গবন্ধুই বুঝতেন বলেই তিনি সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী পাকিস্তানী সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ শহীদ জীবন দিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। সারা দেশে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমার দেশের মা-বোনেরা। লক্ষ মা-বোন কেন নির্যাতিত হয়ে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে বীরাঙ্গনার কলংককে বরণ করে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়ে আজ ১৮ কোটি মানুষকে ঋণী করে গেছেন। আমরা চিরদিন এসব মা-বোনদের কাছে ঋণী হয়ে গেলাম।

আজ ২০২৩ সালে এসে সে দেশ বিরোধীতার অনুকুল পরিবেশ পেয়ে গেছে বিএনপি নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা হয়ে। এই বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে অথচ এই দলের যিনি প্রতিষ্ঠাতা তিনি বন্দুকের নল কাঁধে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, আবার সেই স্বৈরাচারির পতন হয় ১৯৮১ সালের ৩০ মে। এরপর আবির্ভাব হয় আরেক স্বৈরাচারি দূর্নীতিবাজ খালেদা জিয়ার। তিনি গয়েশ^রের মত হিন্দু মৌলবাদীকে নিজ দলে স্থান দিয়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আরেকটি অপশক্তিকে দাঁড় করিয়েছেন।

এবার আসছি আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রসঙ্গে। তিনি একজন ব্যবসায়ী। এক সময়ে করতেন আওয়ামী লীগ। সেখানে সুবিধামত কোন পদ না পেয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন মন্ত্রী হওয়ার আশায়। তবে আজ পর্যন্ত কোন কিছুর সন্ধান মেলেনি। ব্যবসা করে হাজার হাজার কোটি টাকা কামাই করেন। বিদেশী ব্যাংকে গোপনে টাকা পাচার করেন। পানামা পেপারস কেলেংকারিতে তার নাম জড়িত রয়েছে। তার সাথে সংযুক্ত আছেন তার দূর্নীতিবাজ তিন ছেলে। জীবনে কোন দিন রাজনীতি করেননি, রাজনীতি বুঝেনও না টাকা দিয়ে পদপদবী ক্রয় করে রাজনীতি করেন। আর সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের চাঁদা দেন দেশে সহিংসতা সৃষ্টি করার জন্য। জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের অর্থের যোগান দেন, বিএনপি এদেশে যাবৎকালীন যত নাশকতা, বোমাবাজী, আগুন, সন্ত্রাস করেছে সবই করেছে এই মিন্টুর আর্থিক সহযোগিতায়।

এই মিন্টু এখন আমাদের সংবিধান নিয়ে কটুক্তি করার মত ধৃৃষ্টতা দেখায়। সপ্রতি এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, সংবিধান যারা রচনা করেছে তাদের নাকি যোগ্যতা ছিল না, এই সংবিধান বাতিল করা উচিৎ। এমন অপাংক্তেয় কথা আবদুল আউয়াল মিন্টুর মত মূর্খদের মুখে সহজেই বলা সম্ভব। কারণ সে সংবিধানও বুঝে না এবং কারা এটি তৈরি করে গেছেন এসব কিছুই সে জানে না। তার অবগতির জন্য বলছি ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবরের গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করেন। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহিত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস) থেকে এটি কার্যকরি হয়। ১৯৭২ সালের এই মহান সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ই এপ্রিল ডঃ কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়্ তারা হলেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ১। ডঃ কামাল হোসেন (ঢাকা- জাতীয় পরিষদ) ২। মোহাঃ লুৎফুর রহমান (রংপুর-) ৩। অধ্যাপক আবু সায়েদ (পাবনা-), ৪। এম আবদুর রহিম (দিনাজপুর-) ৫। এম আমীর উল ইসলাম (কুষ্টিয়া-) ৬। মোহাঃ নুরুল ইসলাম মনজুর (বাকেরগঞ্জ-) ৭। আবদুল মুনতাকিম চৌধুরী (সিলেট-) ৮। ডঃ ক্ষিতিশ চন্দ্র (বাকেরগঞ্জ-১৫) ৯। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত (সিলেট-) ১০। সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ময়মনসিংহ-১৭) ১১। তাজউদ্দিন আহাম্মদ (ঢাকা-) ১২। খন্দকার মোস্তাক (কুমিল্লা-) ১৩। , এইচ এম কামরুজ্জামান (রাজশাহী-) ১৪। আবদুল মমিন তালুকদার (পাবনা-) ১৫। আবদুর রউফ (রংপুর-) ১৬।  মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ (রাজশাহী-) ১৭। বাদল রশিদ, বার এ্যাট ১৮। খন্দকার আবদুল হাফিজ (যশোর-) ১৯। শওকত আলী খান (টাঙ্গাইল-) ২০। মোহাম্মদ হুমায়ূন খালিদ (যশোর-১০) ২১। আছাদুজ্জামান খান (যশোর-১০) ২২। একেএম মোশারফ হোসেন আখন্দ (ময়মনসিংহ-) ২৩। আবদুল মমিন+সামসুদ্দীন মোল্লা (ফরিদপুর-) ২৪। শেখ আবদুর রহমান (খুলনা-) ২৫। ফকির সাহাবউদ্দিন আহাম্মদ+অধ্যাপক খোরশেদ আলম (কুমিল্লা-) ২৬। এম মোজাফফর আলী (হোমনা দাউদকান্দি) ২৭। এ্যাডভোকেট সিরাজুল হক (কুমিল্লা-) ২৮। দেওয়ান আবু আক্কাছ (কুমিল্লা-) ২৯। হাফেজ হাবিবুর রহমান (কুমিল্লা-১২) ৩০। আবদুর রশিদ (নোয়াখালী-) ৩১। নুরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-) ৩২। মোহাম্মদ খালেদ রাজিয়া বানু (চট্টগ্রাম-)

সারা বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ প্রাদেশিক পরিষদের এসব সম্মানিত সদস্যদেরকে আবার কোন কোন আসনে জন সদস্যকে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য করা হয়। একই বছরের ১৭ই এপ্রিল থেকে অক্টোবরপ পর্যন্ত কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত এই সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা আকাংখার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে। তাই এই স্বাধীন বাংলাদেশে থেকে যারা আমার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে, আমার মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করে কটুক্তি করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, যারা আমার সংবিধান নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান যারা সংবিধান রচনায় ভূমিকা রেখেছেন সেই সব গর্বিত সন্তানদের অপমান করেন, তারা দেশ জাতির শত্রু গয়েশ^ রায়, আউয়াল মিন্টু এরা রাষ্ট্রদ্রোহী, এদের অপরাধ শাস্তিযোগ্য, এদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।

লেখক: সহ সভাপতি-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।

শেয়ার করুন: