বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ঢাকার চিঠি

ফাগুনের আগুনমুখো জীবন 

মেসবাহ শিমুল

প্রকাশিত: ০০:১৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফাগুনের আগুনমুখো জীবন 

ঢাকার চিঠির লেখক: মেসবাহ শিমুল

প্রকৃতিতে ঝরা পাতার টুপটাপ শব্দ শুরু হয়েছে। কুয়াশার হালকা আবরণ সরে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আড়মোড়া ভাঙার বুঝি শুরু। এরই মধ্যে জমে উঠেছে ঢাকার অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে এখনো মেলা প্রাঙ্গণে যাওয়া হয়নি। যাবো দুয়েক দিনের মধ্যে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির এই সময়টাতে মেলা আমাদের ডাকে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মেলায় যাই। ঘুরি-ফিরি। বই দেখি। বই কিনি। আবার মেলা ভেঙে গেলে খারাপ মন নিয়ে ফিরে আসি। সোহরাওয়ার্দীর ওই প্রাঙ্গণে আর যাওয়া হয় না। 

এবছর নিজের একটি বই আসছে। রাতে প্রকাশকের সঙ্গে কথা হলো। বললো চলে আসবে অল্পের ভেতর। তার কথায় আশ্বস্ত হই। তবে একটু সন্দেহ থেকেই যায়। এই অল্প আসলে কতদিন। এখন মানুষের কথায় বিশ্বাস কিংবা ভরসা রাখা বেশ কষ্টকর। আর মেলার সময় প্রকাশকদের ওপরতো রাখাই যায় না। তবুও শেষ পর্যন্ত কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করি আমরা। বিশ্বাস করতে হয়। 

এবছর বইয়ের চাহিদা যেমন তেমন নতুন বইয়ের সংখ্যা নাকি অনেক কম। প্রায়ই স্টলের সম্বল বিগত দিনের পুরণো বই। অর্থনৈতিক স্থবিরতা কিংবা কাগজের মার্কেটের চড়া ভাব এখানে বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সাধারণ কিংবা মধ্যবিত্ত শ্রেণির পকেট হাহাকার করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পল্টনের একজন সার্জিক্যাল এক্সেসোরিজ ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকার জন্য প্রায় হাহাকার করতে দেখলাম। এলসি বন্ধ। মালামাল আসছে না। যে সব পার্টিকে মালামাল সরবরাহ করেছিলেন তারা টাকা দিচ্ছে না। একটি কোম্পানীর কাছে বেশ কিছু টাকা পাওনা তারাও দিচ্ছে না। এমন একজনের কাছে বাকি টাকা চাইলে তিনি বলেছেন, ‘আমি মরে গেছি। এখন কবরের উপরে বাঁশ গজিয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন দুইটি করে বাঁশ বিক্রি করি আর এক বেলা ভাত খাই’। কথাগুলো হয়তো শুনতে অন্য রকম শোনাচ্ছে কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন নির্মম। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। কি চাকুরিকর্তা কিংবা ব্যবসায়ী।

ঢাকার বাতাসে যখন বাহারি বইয়ের ঘ্রাণ তখন তুরস্ক-সিরিয়ায় হাহাকার চলছে। স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে তুরস্কের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি-ভিডিও দেখছি তাতে সহজেই আন্দাজ করা যায় সেখানকার ভয়াবহতা। পুরো বিশ্ব নাড়িয়ে দিয়েছে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বছরপুর্তিকে সামনে রেখে বিশ্ব যখন একটি কঠিন সময় পার করছে তখন এই ভূমিকম্প সেই ভয়াবহতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এই যুদ্ধে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান। তার দেশের এমন নাজুক অবস্থায় তাই রাশিয়ার সৈন্যরা যুদ্ধ রেখে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছেন। ঢাকায় সেটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। 

আপাতত কিছুটা হলেও শান্ত রয়েছে দেশের রাজনীতির মাঠ। যদিও গত কয়েকদিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনির্বাচিত কোনো সরকার আর দেশে আসবে না’। কোন আশঙ্কা কিংবা উপলব্ধি থেকে তিনি এই বক্তব্য দিলেন সেটি স্পস্ট নয়। তবে নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো বড় ইঙ্গিত রয়েছে। 

ইঙ্গিত কিংবা উদ্দেশ্য যাই থাকুক সাধারণ মানুষ একটি সুস্থ্য স্বাভাবিক পরিবেশ চায়। একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি চায়। একটি সুশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা চায়। একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়। একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা চায়। ফাগুনের এই আগুনমুখো জীবন চায় না। চায় মৃদু মন্দ হাওয়ার শিহরণ। যে হাওয়া শরীর ফুরফুরে করে মনে এনে দেয় প্রশান্তি। দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি এমন প্রশান্ত মনে দিন কাটাতে পারে তাতে নিশ্চয়ই কারো ক্ষতি হবার কথা নয়। 
 

শেয়ার করুন: