রোববার, ১১ মে ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

লাভ ফর জাফরান

হাবিব রহমান

আপডেট: ১৯:১৮, ৮ জুলাই ২০২৩

লাভ ফর জাফরান

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে লেখক হাবিব রহমান

বিয়ের পর হানিমুন করতে গিয়েছিলাম ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। রাস্তায় যাত্রাবিরতি ছিলো পূর্ব পাঞ্জাবের পাতিয়ালা রাজ্যের একটি শহর সিরহিন্দ শরীফে। যেখানে শুয়ে আছেন মুজাদ্দিদে আলফেসানি। যার অর্থ দ্বিতীয় সহস্র্রাব্দের সংস্কারক। পুরো নাম ইমাম রব্বানি শাইখ আহমেদ আল ফারুকি সিরহিন্দি। যিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর আল-ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর ২৮তম বংশধর। মুজাদ্দিদে আলফে সানী সেই দরবেশ যিনি সম্রাট আকবরের মুকাবেলায় একাকী লড়েছিলেন।

সম্রাট আকবর যিনি হঠাৎ করেই চালু করেন এক নতুন ধর্ম-যার নাম দ্বীনে ইলাহি। যাতে এমন কিছু বিষয় সংযোজন করেন যা ছিলো ইসলাম ধর্মের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। পাঞ্জাবের যুবক আহমাদ সেরহিন্দ, আজকের ইতিহাস যাকে মুজাদ্দিদে আলফে সানী নামে অভিহিত করে, তিনি তখন যুবক। বাদশাহ আকবরের এই গোমরাহি এবং মুসলিম জনসাধারণের মধ্যে ধর্মের ব্যাপারে অজ্ঞতা তাকে ভাবিয়ে তুলল। বিশাল এই সামরাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাধ্যি তো তার নাই, নেই পরাক্রমশালী বাদশাহ আকবরের সঙ্গে সামরিক মুকাবেলার শক্তি, তাহলে কীভাবে তিনি এই ধর্মদ্রোহী শাসককে উৎখাত করবেন? কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলিম প্রজাসাধারণকে কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন ইসলামের প্রকৃত পথে?

আহমাদ সেরহিন্দ এর উত্তম সমাধান পেলেন ধর্মীয় শিক্ষা ও মানুষের আত্মাকে শুদ্ধ করার প্রচেষ্টার মধ্যে। তিনি শুরু করলেন তার অভিযান। একাই তিনি লড়বেন, বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই। এই চিন্তা থেকেই তিনি সহজ-সরল-বোধগম্য ভাষায় তার উপলব্ধি ও সিদ্ধান্ত মৌখিক ও লিখিত আকারে জাতির সামনে তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে আহমাদ সেরহিন্দ তার এক বইয়ে লিখেছেন, ‘সা¤্রাজ্যের সঙ্গে বাদশাহর সম্পর্ক ঠিক তেমন,  যেমন সম্পর্ক দেহের সাথে মনের। মন যদি ঠিক থাকে তবে দেহও ঠিক থাকে। যদি মন বিগড়ে যায় তবে দেহ বিপথগামী হয়। সুতরাং বাদশাহর সংশোধন সা¤্রাজ্যেরই সংশোধন। বাদশাহর বিপর্যয় সমগ্র সা¤্রাজ্যের ধ্বংসের নামান্তর। এ জন্য তিনি শাসক পরিবর্তনের চাইতে শাসকের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনকেই অগ্রধিকার দেন।

এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন, তা নি¤œরূপ-

১. প্রথমত লোকদের সামনে দীনের সঠিক রূপটি তুলে ধরেন, যারা তা গ্রহণ করে তাদেরকে সংঘবদ্ধ করেন এবং তাদের চারিত্রিক দিক অর্থাৎ ঈমান, আকিদা ও আচার-আচরণ সংশোধন করতে সচেষ্ট হন।

২. বিদআতের প্রকাশ্য বিরোধিতায় না গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-র সুন্নাত অনুসরণের নির্দেশ দিতেন তিনি। আর এটাকেই সফলতা ও সৌভাগ্যের একমাত্র পথ বলে ঘোষণা করতেন।

৩. আগ্রা, সারহিন্দ ও লাহোরের উচ্চ মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন আহমাদ সেরহিন্দ এবং ছাত্রদেরকে স্বীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের অনুকূলে প্রস্তুত করেন।

৪. পাশাপাশি ভারতের বিশিষ্ট বেসরকারি ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং অনেককে স্বীয় মতে দীক্ষিত করেন।

৫. স¤্রাট আকবরের ঘনিষ্ঠ সুন্নি মতাবলম্বী সভাসদদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের অনেককে স্বীয় মতাদর্শে দীক্ষিত করেন তিনি।

আকবরের মৃত্যুর পর ১০১৪ হিজরিতে স¤্রাট জাহাঙ্গীর সিংহাসনারোহণ করলে আহমাদ সেরহিন্দ চূড়ান্ত লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। এবং তার স্বমতে দীক্ষিত দরবারের সভাসদদের দ্বারা জাহাঙ্গীরের মনোভাবকে ইসলামের অনুকূলে আনতে সক্ষম হন।

 

সম্রাট জাহাঙ্গীর মুজাদ্দিদে আলফে সানীর দাবিসমূহ সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেন এবং শাহি ফরমান জারি করে তা কার্যকর করেন। আর এভাবেই একজন দরবেশ উপমহাদেশের মতো বিশাল একটি ভূখন্ড থেকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কুসংস্কার, বিদআত ও ইসলাম-বিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধে সফলতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছিলেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরতে পরতে বিশুদ্ধ ইসলামের সুবাতাস বইয়ে দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পরিবর্তন আনতে জনবল নয়, প্রথমে ইচ্ছাশক্তিই প্রয়োজন।

সিরহিন্দে দুদিন অবস্থান করে আমরা রওয়ানা হলাম শ্রীনগরের পথে। বাস রাস্তার দুপাশে নিচু পাহাড়ের কোল ঘেঁষে শুয়ে রয়েছে আদিগন্ত  ছোট ছোট উর্বর জমিন। তার বুকে ঢেউ খেলে যাচ্ছে যেন এক সমুদ্র  বেগুনি ফুল। ড্রাইভার জানালো এই ফুলের নাম জাফরান। এই ফুল  থেকেই তৈরি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান মশলাগুলোর একটি। সেই মশলার নামও জাফরান। কাশ্মীরের সৌন্দর্যের সঙ্গে এই জাফরানের সৌন্দর্যও মিশে আছে। বলা হয় এই মসলাটি স্বর্ণের চেয়েও ১০ গুণ বেশি দামী। যেজন্য এই মশলাকে স্বর্ণ মসলাও বলা হয়ে থাকে।

এই লেখায় কাশ্মীর ভ্রমণ বা জাফরানের কাহিনী বর্ণনা আমার উদ্দেশ্য নয়। এটি আর একদিন শোনাবো। আজ অন্য একটি কারণে এই জাফরান কাহিনীর অবতারণা।

আমি ভোজন রসিক মানুষ। খেতে ভালোবাসি। খেয়ে খাবার নিয়ে লিখতেও ভালোবাসি। আমার লেখা পড়ে অনেকেই সে সব হোটেলে  খেতে যান। ভালো হলে তারাও খাবারের প্রশংসা করেন। অন্যকে  রেফারেল দেন।

গত মাসে আমার একমাত্র কন্যার চাকুরিতে যোগদানের বর্ষপূর্তি হলো। মেয়ে-জামাই আমাকে ট্রিট দিতে এবং নতুন রেস্টুরেন্টের খাবার খাইয়ে চমক দিতে আমাকে নিয়ে গেলো একটি রেস্টুরেন্টে। বলাই বাহুল্য চমক নস্ট হবে বলে তারা কোন সময়েই স্থান এবং রেস্টুরেন্টের নাম আগাম প্রকাশ করে না।

গাড়ি থামলো একটা রেস্টুরেন্টের পার্কিং লটে। জায়গাটা লং আইল্যান্ডের হিকসভিল। গাড়ি থেকে নামতেই চোখের সামনে নামটা জ্বলজ্বল করে উঠলো-জাফরান গ্রীল এন্ড স্টেক হাউস। এই জাফরান নামটা আমার কাশ্মীর ভ্রমনের স্মৃতিটাকে যেন উস্কে দিলো। আমার জীবনের নতুন ইনিংস শুরুর স্মৃতি। আর এই নামটাই যেন চুম্বকের মতো কাছে টানলো আমাকে। হাঁটি হাঁটি করে ভেতরে গিয়ে ঢুকলাম। যে নামটার জন্যই আমার লেখার এত বড় ভূমিকা।

চমৎকার সাজানো রেস্টুরেন্ট। ভেতরে বিদেশ থেকে আনা নয়নকাড়া  ফ্রেমে বাধা ছবি। পুরো দেয়ালটা জাফরান কালারে রাঙানো। আমি পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশের শতাধিক দেশে ঘুরে বেড়াই। দেশ  দেখি। দেশের মানুষ দেখি। দর্শনীয় জায়গা দেখি। সে দেশের ট্রাডিশনাল খাবার চেখে দেখি। আরব দেশে গেলে যেমন এরাবিয়ান খাবার খাই। আফ্রিকায় গেলে সে দেশের খাবার টেস্ট করি। মিশরে একবার আমার গাইড খালেদ আমাকে নিয়ে যায় মরুভূমির ভেতর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে মরুদ্যানের ভেতর খেজুর পাতার ছাওনি দেয়া একটা স্থানীয় রেস্টুরেন্টে  সে দেশের ট্রডিশনাল খাবার খাওয়াতে। গাড়ি থেকে নামতেই বাদ্যযন্ত্র নিয়ে একদল লোক আমাকে ঘিরে ধরলো। আমার পাশে হাঁটতে হাঁটতে স্থানীয় নানান বাদ্যযন্ত্রের সূর বাজাতে বাজাতে রেস্টুরেন্টের ভেতরে নিয়ে বসালো। ইজিপসিয়ান ট্রাডিশনাল খাবার শেষে আরেকটি গ্রুপ এসে এমনিভাবে বাদ্যযন্ত্রের সুর তুলে পৌঁছে দিয়েছিলো গাড়িতে।

মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে শত সহ¯্র বছরের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক, ভূমধ্যসাগরের উপকূলে আলেকজান্দ্রিয়া নগরীতে মিশরীয়, গ্রীক, রোমান আর বাইজেনটাইন সংস্কৃতির খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আমার আরেক মিশরীয় বন্ধু ইব্রাহিম ইলদিব আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলো। চমৎকার সাজানো রেস্টুরেন্টটি ভূমধ্যসাগরের দিকে তাক করা। একই রেস্টুরেন্টে একই সময়ে ডিনার টেবিলে চার ভিন্ন সংস্কৃতির খাবার আমাকে মুগ্ধ করেছিলো।

আফ্রিকায় ইবনে বতুতার শহর মরক্কোর তানজিয়ার শহরে ট্যুর গাইড হাসান আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো মিন্ট চা খাওয়াতে অনেকটা পথ ড্রাইভ করে ক্যাফে বাবা নামক একটি রেস্টুরেন্টে। মরক্কোর বিভিন্ন শহর ঘুরে  দেখতে সে ছিলো আমার সার্বক্ষণিক গাইড। একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো তার সাথে। মনে মনে বিরক্ত হলেও তাকে কস্টদিতে মল চায়নি। তবে ওখানে না গেলে যে আমার ভ্রমন অসম্পুর্ন হতো তা পরে বুঝেছি।

ক্যাফে বাবার ভেতরের চেহারায় কোন চাকচিক্য ছিলো না। বলা যায় সাধারন মানের রেস্টুরেন্টের চেয়েও এক ধাপ নীচে। রং চটা  চেয়ার। বাথরুমে স্টিলের দরজা। উঁচু কমোড বা আয়নার ব্যবস্থা নেই।  রেস্টুরেন্টের দেয়ালে বিভিন্ন ফ্রেমে নানা মানুষের ছবি। হাসানের উপর মনে মনে বিরক্ত হয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলাম। সে মনে হয় আমার মনের অবস্থাটা আঁচ করতে  পেরেছিলো। কাছে এসে আস্তে করে বল্লে উঠে গিয়ে ছবি গুলোর উপর একটু চোখ বুলাও।

অনিচ্ছা সত্বেও উঠে গিয়ে ছবি গুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রথম ছবিতে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান স্ব-পরিবারে চা খাচ্ছেন। পরের ছবিটি চায়ের কাপ হাতে স্পেনের রানী সোফিয়ার। পরের ছবি তার বোন প্রিন্সেস এরিনার। আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো একের পর এক ছবির সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। পরের ছবি মাইকেল কুপার, সুইডেনের রাণী সিলভিয়া, ফিনল্যান্ডের রাজা গোস্তাভো, বিখ্যাত ফরাসী অভিনেতা ড্যানিয়েল অথরিজ, লুক্সেমবার্গের গ্রান্ড ডিউক, বব মার্লিন সহ আরো অনেক অনেক সেলিব্রেটি। বলাই বাহুল্য তারা সবাই এই ক্যাফেতে বসে মিন্ট চা পান করছেন।

একটা ছোট ক্যাফেতে সারা বিশ্বের সেলিব্রেটিরা চা পান করতে আসেন ! কী যাদু আছে এই ক্যাফেতে।

হাসান ডেকে নিয়ে আসলো ক্যাফের বর্তমান স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আওফিকে। বছর চল্লিশের কোঠার লম্বা ছিপছিপে চেহারার আউফি আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে বসালো কোনার একটা টেবিলে যেখানে বসে জাতিসংঘের মহাসচিব চা পান করেছিলেন। আউফি নিজের হাতে আমার জন্য বানিয়ে আনলে মিন্ট চা। আফ্রিকার প্রখর সুর্যতাপে উৎপাদিত এই মিন্ট বা পুদিনা পাতার চা তার বাবা আবদুল গনির হাতের গুনে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার বাবা একটা গোপন রেসিপি দিয়ে এই চা তৈরি করতেন। যা এখনো তারা ফলো করছে। ক্যাফে বাবার সেই মিন্ট চায়ের স্বাদ মনে হয় এখনো আমার জিভের ডগায় লেগে আছে।

যাকগে ফিরে আসি হিকসভিলের জাফরান রেস্টুরেন্টে। টেবিল বুক করা ছিলো। ওয়েটার পৌঁছে দিলো টেবিলে। একনজরেই ভালো লেগে গেলো  ভেতরের পরিবেশ। যেহেতু স্টেক হাউস। স্টেক দিয়েই শুরু হলো খাবার। মেয়ে আমার প্রিয় খাবার স্যামন মাছের অর্ডার দিতে ভুললো না। সাথে অন্যান্য খাবার। বেশ আয়েশ করেই খেলাম। একসময় একজন লোক পাশে এসে দাঁড়ালেন। পরিচয় দিলেন মালিকদের একজন বলে। নাম জানালেন শেখ ফরহাদ। বিনীতভাবেই খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। খাবারের মান, কোন অভিযোগ আছে কিনা তাও।

আমরা সবাই নিজের ভালোটা জানতে চাই। অভিযোগ নয়। ফরহাদকে একটু ব্যতিক্রমিই মনে হলো। শুধু খাবার নয় তার বিনয়ও আমাকে মুগ্ধ করলো।

কথা শেষে তিনি চলে গিয়েও একটু পরেই ফিরে এলেন। জানতে চাইলেন-আমি হাবিব ভাই কিনা! একটু অবাকই হলাম। আমি কোন  সেলিব্রেটি নই। নিতান্তই আটপৌঢ় বা ছা-পোষা মানুষ বলা যায়। আমি হ্যাঁ বলায় ফরহাদ বল্লেন তার প্রথমেই সন্দেহ হচ্ছিলো। তিনি আমার  ফেসবুক ফ্রেন্ড। আমার ভ্রমন লিখার ভক্ত। স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত আমার ভ্রমন বিষয়ক লিখা গুলো তিনি নিয়মিত পড়েন। বিভিন্ন  রেস্টুরেন্টের উপর আমার ফুড রিভিউগুলো তার চোখ এড়ায় না। বিশেষ করে খলিল বিরিয়ানীর খাবার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমার লেখাগুলো মন দিয়ে পড়েন বলেও জানালেন। এও জানালেন তিনি খুশি হয়েছেন তার এখানে খেতে এসেছি বলে।

ফিরে গিয়ে কিচেন থেকে এক প্লেট বিরিয়ানী সাথে করে নিয়ে এলেন আমার জন্য। আপনি টেস্ট করে মতামত দেবেন আপনার জন্যই তা রান্না করে এনেছি। একটু চেখে দেখুন। পরে একসময় মতামত জানাবেন। মুখে দিয়েই বুঝলাম রান্নায় যতেœর ছাপ আছে। নরম মোমের মত চিকেন খেতে খুবই স্বাদ লাগছিলো। আমার অভিজ্ঞ মুখ বলছিলো  শেফ তার সেরা রান্নাটাই প্রেজেনটেশন দিয়েছেন।

ফরহাদ জানান, যদিও স্টক হাউস তার পরও অনেক দেশীয় খাবার রয়েছে তার রেস্টুরেন্টে। তারই একটি এই বিরিয়ানী। ফরহাদ বলেন, রান্নার স্বাদের মাধ্যমে আমাদের শিকড়ের সাথে মানুষের সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করা এবং আমাদের দেশের রান্নার যে বিশাল সংস্কৃতি তার পরিচয় করাও এসব খাবার পরিবেশনের আরেকটি উদ্দেশ্য।

ফরহাদ তার নিজের রেসিপির একটি জুস এনে খেতে দিলেন। জানালেন এটা আমাদের দেশ থেকে আসা ফ্রোজেন কালোজাম দিয়ে তৈরি। এতে কিছু স্পাইস মিশ্রিত আছে। এই ‘স্পাইসি জামুন’ বিদেশীদের কাছেও জনপ্রিয়।

তার শেফ মনজুর এলাহী নিজ হাতে তৈরি করে নিয়ে এলেন গাজরের ক্ষীর। যার পোষাকি নাম -গাজরিলা।

তিনি রান্নাঘরে ছুটছিলেন তার নিজ হাতে রান্না করা আরো কিছু খাবার নিয়ে আসতে। হাত দিয়ে পেটটা ইশারা করে জানালাম- ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ছোট এ তরী! বল্লাম আরেক দিন প্রস্তুতি নিয়ে আসবো যেন বেশী খাবার টেস্ট করতে পারি।

ফরহাদ পুরো রেস্টুরেন্টটা ঘুরে ঘুরে দেখালেন। রেস্টুরেন্টের এক পাশেই পার্টি হাউস। ১১০ জলের বসার ক্যাপাসিটি। তবে বাইরের পার্টি হলেও বিয়ে জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ক্যাটারিং করে থাকেন। পিকনিকসহ যে কোন অনুষ্ঠানের তারা যে কোন পরিমান ক্যাটারিং করতে পারেন।

সিলেটের মাধবপুরের সন্তান শেখ ফরহাদ মার্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ব্যবসার বাইরেও নানা সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তিনি ইউএস চেম্বার অব কমার্সের একজন পরিচালকের দ্বায়িত্বও পালন করছেন।

জাফরান একটা বাঙালি হালাল রেস্টুরেন্ট। এতে দেশীয় খাবার ছাড়াও আছে হরেক রকম এপিটাইজার, সালাদ, বার্গার এন্ড স্যান্ডউইচ, স্টিক এন্ড চপ, সী ফুড, পাস্তা, ডেজার্ট এবং বেভারেজ। বাচ্চাদের জন্য আছে  কেডস মেন্যু।

যারা খাবারে রুচি বদল করতে চান তারা জাফরান গ্রীলে ঢু মারতে পারেন। চমৎকার পরিবেশে নানা জাতের খাবার আপনার দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখবে। ঠিকানা: ৪৬, ওয়েস্ট ওল্ড কাউন্টি রোড,  হিকসভিল, নিউইয়র্ক -১১৮০১। ফোন: ৩৪৭৬৮৬-৪২৭৮।

 লেখক: সিইও বাংলা ট্যুর এবং সিনিয়র সাংবাদিক।

শেয়ার করুন: