
ফাইল ছবি
- এই, আমার চা কোথায়?
- নভো নিয়ে আসছে।
- এই যে তোমার বেড টি, পাপা। চা খেয়ে নিচে আসো।
- তোমার মা কোথায়?
- নিচে, এক্সারসাইজ করছে।
- ও
- আসতে বলবো?
- এক্সারসাইজ করলে আসবে কি করে?
- না, শেষ তো, এখন মনে হয় চা খাচ্ছে।
[একটু পরে]
- তোমার চা খাওয়া হলো?
- না একটু বাকি আছে।
- ফেইসবুকে চোখ থাকলে তো সারাদিনেও চা শেষ হবে না। যাও, নিচে যাও, জল উঠে গেছে, ওর নাশতা তৈরি করো।
- যাচ্ছি। কাল একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। নানান রকম মন্তব্য এসেছে, কিছু উত্তর দিয়ে যাই।
- গালি দিয়েছে?
- তা তো কিছু দিয়েছেই।
- স্ট্যাটাসটা কি পড়ো তো?
- নিজের ফেইসবুক বন্ধ রেখে এখন আমাকে জ্বালাও। ঠিক আছে বসো, পড়ছি। ‘আমাদের অধিকাংশ নারী ক্ষমতায়ন বলতে বোঝে পুরুষকে ছোটো করা। যেমন নাস্তিকতা বলতে আমরা বুঝি ইসলামকে গালি দেওয়া। প্রগতিশীলতা মানে হলো টুপি/দাড়ি আর হিজাবের নিন্দা করা। আমরা সব সংজ্ঞাই নেতিবাচকতা দিয়ে নির্ণয় করি’।
- হুম।
- হুম কি?
- কে কি বললো?
- তুমি কি মনে করো? তোমার কমেন্টটা শুনি।
- তার আগে অন্যদের কমেন্ট শোনাও।
- অনেক কমেন্ট, সব পড়তে পারবো না।
- তোমাকে ধোলাই করেছে এমনগুলো শোনাও। আছে নিশ্চয়ই।
- তা আছে। পূরবী বসু, সেজান মাহমুদ, ক্লারা রোজারিও, আশরাফ আহমেদ সমালোচনা করেছেন। পক্ষে বলেছেন অনেকেই। মৃদু সমালোচনা করেছেন দুয়েকজন, যেমন ইয়াজদানী কোরেশী, সুবিমল চক্রবর্তী, শফিউল আযম মুনিম। মোট ৫৪টা কমেন্ট, বাকিরা সমর্থন করেছেন।
- পূরবী দি কি বলেছেন?
- তিনি বলেছেন, এটা আপনার কথা হতে পারে, সার্বজনীন ধারণা নয়।
- উত্তর দিয়েছ?
- হ্যাঁ। আমি একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েই উত্তর দিয়েছি, আমাদের সমাজে নেতিবাচকতার চর্চা প্রকট নয় বলছেন? আসলে এই স্ট্যাটাসে আমি তো এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে আমাদের সমাজে নেতিবাচকতার চর্চা প্রকট। সেজান মাহমুদ কিছুটা খোঁচা দিয়ে বলেছেন, নেতিবাচকতার কথা আমি নেতিবাচকভাবে বলেছি। আমি তাকে বলেছি, নেতিবাচকতার সমালোচনা করা নেতিবাচকতা নয় বরং নেতিবাচকতাকে ডিফেন্ড করাই নেতিবাচকতার চর্চা।
- ক্লারা দি কি বললেন?
- তিনি বলেছেন, ‘অধিকাংশ’ কথাটি ঠিক হলো? সুস্থতা চোখে পড়ে না, অসুস্থতা চোখে পড়ে। অসুস্থদের সংখ্যা সুস্থদের তুলনায় খুব কম হয়। আমি তাকে বলেছি, সমাজকে সুস্থ করার জন্য অসুস্থতার কথা বলতে হয়। অসুস্থতা লুকিয়ে রাখলে সমাজ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে।
- এই প্রসঙ্গে আমি একটি গল্প বলি। এক লোক তার ব্রিফকেস ভর্তি টাকা ট্যাক্সিতে ফেলে বাড়ি চলে আসে। ট্যাক্সি ড্রাইভার টাকাগুলো নিয়ে পালিয়ে না গিয়ে লোকটির বাড়িতে এসে ফেরত দিয়ে যায়। লোকটি ব্রিফকেস খুলে দেখে সব ঠিক আছে, কিছুই খোয়া যায়নি। বাড়ির সবাই তো অবাক! দরিদ্র ট্যাক্সি ড্রাইভারের সততায় তারা মুগ্ধ এবং বিস্মিত। এটা কী করে সম্ভব! সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে কিভাবে লোকটিকে পুরস্কৃত করা যায়। লোকটির বৃদ্ধ দাদী তখন এগিয়ে এসে বলেন, ট্যাক্সি ড্রাইভার যা করেছে, এটিই তো স্বাভাবিক। তোমরা এমন আচরণ করছ দেখে মনে হচ্ছে ট্যাক্সি ড্রাইভার একটি অস্বাভাবিক কাজ করেছে।
- সমাজের প্রকৃত চিত্র তো এমনই হয়ে গেছে। মন্দের পক্ষেও কথা বলার লোক থাকে বলেই মন্দ বাড়তে বাড়তে এখন ভালোর জায়গা দখল করে ফেলেছে। তাই ভালো কাজ দেখে আমরা অবাক হই। তোমার এই গল্প পুরোপুরি না হলেও কিছুটা প্রাসঙ্গিক। এবার আমার স্ট্যাটাস নিয়ে তোমার মন্তব্য বলো।
- তার আগে তোমাকে সমর্থন যারা করেছেন তাদের কিছু কমেন্ট শোনাও।
- সব পড়তে অনেক সময় লাগবে। কিছু শোনাই।
শহিদুল হক ।। কথাগুলো শুনতে অপ্রিয় হলেও সব কটি কথা এই সমাজের প্রচলিত সত্য। এটা নির্মম, দুঃখজনক ও এক ধরণের নিকৃষ্ট প্রবণতা। সৈয়দ ফজলুর রহমান ।। এরকম অপ্রিয় সত্য বলার সাহস অনেকেরই নাই কারণ আখেরে যদি নানান পদক হারাতে হয় এই ভয়ে। ধন্যবাদ প্রিয় কবি।
মো. কামরুল হাসান পায়েল ।। একটা অপ্রিয় সত্য কথা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
শেখ মহম্মদুল হক ।। ওইগুলোই প্রবণতা। মনোকুন্ডয়ন।
শাহ মোহাম্মদ আলী ।। স্যার, নিজেদের ভাবনাকে বড় করতে বা বড় ভাবনার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারা ছোট মনের স্বার্থপর সুযোগ সন্ধানী মানুষগুলো ছোট-ছোট সংঘে আবদ্ধ হওয়ার সহজ উপায় অবলম্বনের জন্য ওই কাজগুলো করে। কারণ মানুষতো সঙ্ঘবদ্ধ জীব সে জন্য। একদম ঠিক বলেছেন, কবি।
আলী হোসেন ।। ভেরি গুড পোস্ট। ওয়েল সেইড ব্রাদার।
মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ।। অপ্রিয় সত্যি কথা বলার সৎসাহসের প্রশংসা না করলেই নয়।
নাসিম আহমেদ।। আপনার লেখা খুব সুন্দর এবং সত্য কথা। আমার খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
রেণু রোজা।। একদম ঠিক বললেন কবি।
মুহাম্মদ হাহীবুল্লাহ হেলালী।। একদম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন শ্রদ্ধেয়। সঠিক উপলব্ধি হোক সর্বজনের।
সারফুদ্দিন আহমেদ।। খুব খাঁটি কথা। খুব দেখতে পাই এমন শুনতে পাই।
আবদুল্লাহ আল মামুন।। প্রিয় কবি, এগুলো বললে আপনাকে জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে দিবে।
সাজাহান সরদার।। ইতিবাচক হতে পয়সা লাগে!
আব্দুস সবুর খান চৌধুরী।। ঠিক।
সুব্রত কুমার দাস।। এই জ্বালা নিয়েই আছি।
- নিরপেক্ষ হয়ে, মানে নারী-পুরুষ, আস্তিক-নাস্তিক এইসব ভরশূন্য হয়ে স্ট্যাটাসটিকে দেখলে আজকের বাংলাদেশের একটি ট্র্যু রিফ্লেকশন। নেতিবাচকতার চর্চাই বেশি চোখে পড়ে। মন্দ কাজকে দল বা ধর্মান্ধতার কারণে সমর্থন করার জন্য একদল লোক দাঁড়িয়ে যান। এটি মন্দ কাজকে উৎসাহিত করে এবং সমাজে ক্রমশ মন্দের প্রভাব বাড়তে থাকে। তবে মন্তব্যগুলো শুনে মনে হলো কোনো কোনো পুরুষ মন্তব্যকারী তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কারণেও তোমার স্ট্যাটাসকে সমর্থন করেছেন।