বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

তদন্তে পিবিআই

চট্টগ্রামে প্রবাসী ভাইয়ের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে ছোটো ভাই

ঢাকা অফিস

প্রকাশিত: ১১:২১, ৩১ জুলাই ২০২২

চট্টগ্রামে প্রবাসী ভাইয়ের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে ছোটো ভাই

ফাইল ছবি

নিউইয়র্ক প্রবাসী এক ব্যবসায়ীর চট্টগ্রামস্থ মূল্যবান সম্পত্তি আপন ছোট ভাই কর্তৃক দখল চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যাপারে প্রবাসী বড় ভাই হাসান রেজভী চৌধুরী চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্টেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর বিজ্ঞ আদালত সম্পত্তির দলিল জব্দ আলামত সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে পিবিআইকে নির্দ্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাদী নিউইয়র্ক প্রবাসী হাসান রেজভী চৌধুরী বিবাদী হাছান তারিফ চৌধুরী আপন ভাই। বাদী হাসান রেজভী চৌধুরী নিউইয়র্ক শহরে ব্যবসা বাণিজ্য করছেন বহু বছর ধরে। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে আমেরিকায় পরিবার পরিজনসহ বসবাস করছেন। হাসান রেজভী চৌধুরী তার মালিকানাধীন বিল্ডিং (জেলা-চট্টগ্রাম, থানা-পাঁচলাইশ, হালে চান্দগাঁও, মৌজা- বাকলিয়া, জে,এল নং-১৫, আর.এস খতিয়ান নং-৭৫৪ আর.এস দাগ ৩২৩২ দাগের আন্দর তৎ সামিল পি.এস জরিপের ১০৯৫ নং খতিয়ানের পি. এস ১৫৯৮, ১৫৯৯ দাগের বি.এস খতিয়ান নং-২৪৬৪ বি.এস নামজারী খতিয়ান নং-২৪৬৪/ এর বি.এস ২৩৭৪৭ দাগের মোয়াজী ০৫০০ শতাংশ .০০ শতক ভিটি ভূমি তদস্থিত ৫৭০০ বর্গফুট পুরাতন দালান গৃহ) এর নিচতলা আপন ছোট ভাই হাছান তারিফ চৌধুরীকে থাকা দেখাশুনার জন্য অনুমতি দিয়ে বিদেশ চলে আসেন। হাসান রেজভী চৌধুরীর অন্যান্য ভাই-বোন, মা-বাবা সকলেই আমেরিকা প্রবাসী। বাদীর বাবা প্রবাসে (বিদেশে) মৃত্যুবরণ করেন। শুধুমাত্র মামলার আসামী হাছান তারিফ চৌধুরী দেশে থাকেন।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, বিল্ডিং এর নিচ তলায় আসামী অন্যান্য ভাই বোনদের জন্য শুধুমাত্র বসবাস করার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। বাদী তৎ খরিদার নির্মলেন্দু বিকাশ দাশ, সবিতা রাণী দাশ ৬৭৩ নং ডি.সি রোড, পশ্চিম বাকলিয়া চট্টগ্রাম হতে ০৪/০৫/১৯৯৭ইং তারিখের ৮১২ নং কবলামূলে গন্ডা বা শতক ভূমি বাদীর বরাবরে এবং বাদীর পিতা মৃত আলহাজ¦ নুরুল চৌধুরী হতে ১০/০৩/১৯৯৮ইং তারিখে ৪২৩ নং কবলামূলে ০১০০ শতাংশ বা .০০ শতক ভূমি বাদী প্রাপ্ত হয়ে ভোগ দখলে স্থিত থাকাবস্থায় সরকারি রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে বি.এস নামজারী জমাভাগ মোকদ্দমা নং-৪৩১৫/৯৭-৯৮ হুকুমের তারিখ ১৮/১০/১৯৯৮ইং তারিখের আদেশ মতে বি.এস ২৪৬৪/১নং নামজারী খতিয়ান সৃজনক্রমে ভোগ দখলে স্থিত থেকে মোট শতক ভূমি তপশীলোক্ত ভূমিতে ২১/০৬/১৯৯৯ ইং তারিখে ১০১৮/৯৮-৯৯/৮৭৫নং স্মারকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমতি পত্র গ্রহণ করে তপশীলোক্ত ভূমিতে গৃহাদি বিল্ডিং ঘর নির্মাণক্রমে ভোগ দখলে স্থিত আছেন।

মামলার বিবরণে আরো উল্লেখ করা হয়, বাদীর বিল্ডিং ঘরের মোট সম্পতির পরিমাণ শতক। তলা বিশিষ্ট ওই ঘরে মোট ১১ ইউনিট।  বিল্ডিং ঘরের ডিপটিউবওয়েল, বিদ্যুৎ, সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বাদীর নামে। উক্ত বিল্ডিং এর সম্পূর্ণ ভাড়ার টাকা বাদী ভোগ করেন। বাদী নিউইয়র্কে থাকায় বাদীর কেয়ার টেকার/ম্যানেজার ভাড়া সংগ্রহ করেন এবং যথা সময়ে বাদীর নিকট টাকা পৌঁছিয়েছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিগত ২৫/১০/২০ইং তারিখে দলিল নং ৩৫৮০হেবার ঘোষনাপত্রভুয়া দলিল তৈরি করেন বিবাদী। হেবার ঘোষনাপত্র দলিল তৈরির সময় বাদী বিদেশ ছিল। এই দলিল সংক্রান্ত বিষয়ে বাদী  কোনো কিছু অবগত নেই। বাদীর পাসপোর্টে তা প্রমাণিত। এই ভুয়া হেবা দলিলের স্বাক্ষর আসামী হেবা দাতার স্বাক্ষর নিজেই করেছে। দলিলে আসামী বাদীর স্থানে নিজের ছবি সংযুক্ত করেছে এবং স্বাক্ষর আসামীর। হেবা দলিলের দাতার স্বাক্ষর আসামীর নিজ হাতে সৃজন করেছেন। সম্পূর্ণ হেবানামা দলিল ভুয়া, জাল, প্রতারনার মাধ্যমে তৈরী বা সৃজনকৃত।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, আসামী এই ভুয়া হেবা দলিল জাল জালিয়তির মাধ্যমে সৃজন করে এই হেবানামা দলিল আই. এফ. আইস ব্যাংক চট্টগ্রামে বন্ধক দলিল নং-৫৭১/৫৭২-২২, তারিখ, ৩০/০১/২০২২ ইং বন্ধক রেখে আসামী নিজে মালিক সেজে মোট কোটি ২০ লক্ষ টাকা লোন নেয়। আসামী লোনের সম্পূর্ণ টাকা নিজে ভোগ করেন। এই তথ্য আসামী নিজে বাদীর নিকট মৌখিকভাবে স্বীকার করলে বাদী অন্যান্য তথ্য তার ম্যানেজারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সত্যতা পান।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, বাদীর ম্যানেজার মেসকাত হোসেন চৌধুরী বিগত ১৬/০৫/২২ইং তারিখে বাকলিয়া ভূমি অফিসে খাজনা দেওয়ার জন্য গেলে আসামী কর্তৃক এই সমস্ত জাল জালিয়াতির প্রতারণার কথা এবং সমস্ত ঘটনা ভূমি অফিস কর্তৃক জানতে পারেন। ম্যানেজার ওই দিন ভূমি অফিসে খাজনা দিতে পারে নাই। অফিস কর্তৃপক্ষ জানায় আসামীর নামে বর্তমানে ওই বিল্ডিং ঘর হেবা দলিল নং-৩৫৮০, তারিখ-২৫/১০/২০২০ ইং মূলে আসামী মালিক এবং নামজারী জমাভাগ মামলা নং--৭৮৩(১ঢ-) ২০২০-২১ ইং অঃ ২৬৫৬৫০৪(-১১/৬৫/২০-২১) মূলে মালিক হিসাবে আসামীকে দেখিয়ে ম্যানেজার থেকে খাজনার টাকা ভূমি অফিস গ্রহণ করে নাই। ম্যানেজার সমস্ত ঘটনা বাদী হাসান রেজভী চৌধুরীকে ওই দিনই অবগত করেন। বাদী সকল ঘটনা শুনে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে যায় এবং বাদী বাদীর ম্যানেজারের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব আসামী কর্তৃক জাল জালিয়াতির প্রমাণ সংগ্রহ করে। আসামী আপন ছোট ভাই হয়েও বাদীর সাথে বিশ^াস জন্মিয়ে সকল বিশ^াস ভঙ্গ করেছে। আসামী বাদীর সরলতার সুযোগ নিয়েছে। গত ৩১/০৫/২০২২ইং তারিখে বাদী আসামীর সাথে যোগাযোগ করে এই জাল হেবা দলিলের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদরে জন্য যোগাযোগ করলে আসামী বাদীকে এই হেবা দলিলের বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি বা মামলা মোকদ্দমা করলে বাদীকে জানে শেষ করে দিবে মর্মে হুমকি প্রদান করেন। আসামীর এই অপরাধের বিচার চেয়ে বাদী সংশ্লিষ্ট থানায় গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করার পরামর্শ প্রদান করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আসামী বাদীর সম্পত্তির মূল দলিল প্রতারণা করে হেবা দলিল তৈরী করে জালভাবে তৈরী করে এবং হেবানামা দলিলকে জাল বলে জেনে শুধুমাত্র প্রতারনার উদ্দেশ্যে বাদীকে হেয়পতিন্ন করারর কুমানশে ব্যবহার করে আসামী আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে বাদীর ক্ষতি করায় মারাত্মক অপরাধ করেছে। ব্যাপারে চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্টেট আদালতে মামলা দায়ের করা হলে বিজ্ঞ আদালত আগামী ৩০ আগষ্টের মধ্যে পিবিআইকে প্রতিবেদন দাখিল এবং মামলার দলিল আলামত জব্দ করার নির্দ্দেশ দিয়েছেন। বাদী হাসান রেজভী চৌধুরী ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শেয়ার করুন: