
ছবি: সংগৃহীত
শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের কন্ঠে হতাশা ও অসহায়ত্ব। তিনি সম্প্রতি অকপটে স্বীকার করলেন দেশের প্রায় প্রতিটি প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে অনিয়ন্ত্রিত আর অনভিপ্রেত পরিস্থিতি। তিনি তো পুরোটা ঝেড়ে কাশতে পারেন না কেননা তিনি হাবুডুবু ইউনুস সরকারের মন্ত্রী পদ মর্যাদায় আছেন। সরকারের ব্যর্থতা বা টালমাটাল অবস্থা যদি তার মুখ ফসকেও বের হয় তবে তিনি যে পদ হারাবেন তা নিঃসন্দেহ।
যাই হোক এবার প্রসঙ্গে ফিরি। ক‘দিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় ও প্রস্তুতি চলছে। ছাত্র শিক্ষকদের হাবভাব দেখে শুনে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়াশোনার জন্য নয় বরং সেসব শুধুমাত্র নির্বাচন, রাজনীতি আর মারামারির জন্য। লেখাপড়ার পরিবর্তে কিরকম সাজসাজ অবস্থা আর মিটিং, মিছিল, সভা ও সমাবেশ সর্বত্র। কারো হাতে বইখাতা নেই বরং পোস্টার, ব্যানার আর লাঠি কিংবা কোমরের লুকানো বন্দুক। এইসবই বহু পুরনো খেলা। ছাত্রদের লেজুর বৃত্তিক রাজনীতি যেনো থামছেই না। সহপাঠী বন্ধুর সাথে হাতাহাতি, মারামারি যেনো ডালভাত! ভিন্ন রাজনীতির কারণে শিক্ষকরাও বিভক্ত, একে অন্যের রোশানলে। এ সংস্কৃতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পঙ্গু করে ফেলেছে। ছাত্ররা মেধাশূন্য হচ্ছে দিনে দিনে। ফিবছর কত প্রাণ ঝরে যাচ্ছে সংঘাতে আর হাজারো শিক্ষার্থী হচ্ছে শিক্ষা বিমুখ। ক্ষতিগ্রস্থ, নিঃস্ব হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা আর হাজার হাজার পরিবার। আগামীর ভবিষ্যৎ নিমজ্জিত হচ্ছে অন্ধকারে। তরুণরা হতাশায় ধুকতে ধুকতে দিকভ্রান্ত হয়ে ঝুঁকে পড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত সব কর্মকান্ডে। তারা ব্যবহৃত হচ্ছে অসাধু রাজনীতি আর রাজনৈতিকদের চতুর খপ্পরে। দুর্নীতি গ্রাস করছে তাদের আর শেষটায় তাদের পরিণতি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে কোন অভিভাবক চান না শিক্ষাঙ্গনে লেজুর বৃত্তিক রাজনীতি চালু থাকুক। এমনকি বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরাও চাননা এমন দুরাবস্থা। আমাদের সন্তানদের অধঃপতন বা পরিণতির দায় কোন দল বা রাজনৈতিক নেবে না বা নেয় না। সুরাজনীতি দিয়ে জীবন সংস্কারের কোন নজির আর অবশিষ্ট নেই, জীবন ধ্বংস ছাড়া। নষ্ট রাজনীতিকরা তাদের নিজ সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে অন্যের সন্তানদের গিনিপিগ বানিয়ে নষ্ট ভ্রষ্ট খেলায় মত্ত। এ সময়ে এমন ভন্ডামি আর চলে না, এসব বন্ধ হোক।
রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন না হলে গোটা জাতি ও ভবিষ্যৎ আঁধারে তলিয়ে যাবে। আমাদের আগামী প্রজন্মদের আলোর পথে না আনলে এ জাতির ধ্বংস অনিবার্য ও আসন্ন। তাদের রাজনীতির বদলে লেখাপড়ায় ফেরাতে হবে, সেটাই তাদের আসল ব্রত। পৃথিবীর কোন উন্নত বা সভ্য দেশে এমন ছাত্র রাজনীতি আছে বলে আমার জানা নেই। তবে আমাদের ছাত্রদের কি দরকার এমনটা করার বা অন্যের খেলার পুতুল হয়ে জীবন তুচ্ছ করার?!
লেখক: অভিনেতা।