বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

খাইরুল ইসলাম পাখি’র কিচিরমিচির-পনেরো

নববর্ষের উৎসবে আনন্দে বাঙালি এবং নিউইয়র্ক

খাইরুল ইসলাম পাখি

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নববর্ষের উৎসবে আনন্দে বাঙালি এবং নিউইয়র্ক

ছবি: সংগৃহীত

ঈদের রেশ না কাটতেই এলো বাঙালির সার্বজনীন উৎসব,পহেলা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ ১৪৩১। গত শনি ও রোববার নববর্ষের সব ক‘টি অনুষ্ঠানে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড় এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। বাঙালি তার চিরায়ত রূপ মাধুর্যে নিউইয়র্কে পালন করলো পহেলা বৈশাখ।

বাহারি রঙে, সাজে, ঢংয়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার থেকে জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা থেকে ব্রঙ্কস, ওজোন পার্ক থেকে চার্জ ম্যাকডোনাল্ড। নাচে গানে প্রকম্পিত হয়েছে বাঙালি পাড়া কিংবা ঘর। পান্তা ইলিশ থেকে শুরু করে পিঠা-পুলি, মন্ডা-মিঠাই, দই-খই কি ছিল না ভোজন রসিক বাঙালির পাতে। ঈদ আর নববর্ষের কোলাকুলি, খুশি, আনন্দ ভাগাভাগি করতে করতে দিনভর ব্যস্ত ছিল প্রবাসের বাঙালিরা। দূর বিদেশে ব্যস্ত জীবনে এহেন প্রাণ খোলা বাঁধভাঙ্গা আনন্দের প্রয়োজন আছে বৈকি!
এবারের পহেলা বৈশাখ আরও বেশি জমে ওঠার প্রধান কারণ, দিনটি ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে দিনের পর দিন শ্রম দিয়েছেন শত সহস্র সংস্কৃতি প্রিয় মানুষ, শিল্পী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। পাশাপাশি অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এসব অনুষ্ঠান সংগঠনে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে, তাদের সবাই অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। কেননা তাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছাড়া এসব কিছুই সম্ভব হতো না।

পৃথিবীর যেখানেই বাঙালি আছে সেখানে বাঙালির উৎসবও আছে। হোক তা ছোট বা বড় পরিসরে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে বহু বছর যাবত বৃহৎ কলেবরে বৈশাখী মেলা হতো, হয়তো এখনো হয়। যে মেলা আমার দেখা বিদেশের মাটিতে বাঙালির সবচেয়ে বড় মিলন মেলা। কেননা সে মেলায় শুধু যুক্তরাজ্য নয়, গোটা ইউরোপের বাঙালিরা অংশ নেন। ২০০৭ সালে আমি সেই মেলায় অংশ নিয়েছিলাম। আসলেই সে এক মহাযজ্ঞ। লাখ মানুষের সে আনন্দ উৎসবের শান্তি রক্ষায় লন্ডন পুলিশের যেন নাকানি চুবানি অবস্থা হয়।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানটির সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে নামী কোন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ। তাদের কথা বা নিয়মের বাইরে এক চুল এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই। কলাকুশলীদেরও তাদের ডিসিপ্লিন মেনে কাজ করতে হয়। এতে করে অনুষ্ঠানের সমস্ত নিয়মকানুন বজায় থাকে, অযথা কালক্ষেপণও হয় না। এর ফলে দর্শকদের কাছেও অনুষ্ঠান আরও বেশি উপভোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
লন্ডনের বৈশাখী মেলার প্রসঙ্গটি টানার কারণটি হলো, এই নিউইয়র্ক শহরে সবাই মিলে ওরকম বা তার চেয়েও বড় আয়োজন কিন্তু করা যায়। যদি এমন হতো সবাই বা সব সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে বাঙালির এই সর্বজনীন উৎসব, পহেলা বৈশাখ একসাথে একই স্থানে আয়োজন করছে! কি বিপুল উৎসব আর মহানন্দ হতো বলুন? তখন হয়তো রমনার বটমূল কিংবা চারুকলার চিত্র নিত নিউইয়র্ক শহর! এখন এ শহরে যেভাবে নববর্ষ উদযাপন হচ্ছে তখন আর এমন খন্ডে খন্ডে হতো না। বরং আমরা একসাথে একট্টা হয়ে একই আনন্দ সরোবরে ভেসে যেতে পারতাম।
গত রোববার পহেলা বৈশাখের দিনে আমি আমার পরিবার শুদ্ধ পাঁচ পাঁচটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। ফলতঃ কোনটাই ঠিকমতো উপভোগ করতে পারিনি। উদ্দেশ্য ছিল সবার আনন্দে শরিক হওয়া। সেটাও ঠিকঠাক মতো হয়নি। আরো গোটা পাঁচেক অনুষ্ঠানে তো যেতেই পারিনি। আমাদের এই দশা হয়তো অনেকেরই হয়েছে। তাই
আশায় বুক বেঁধে ভেবেছি কবে একসাথে একটি বৈশাখী অনুষ্ঠান কিংবা মেলা হবে এই নিউইয়র্কে! বাঙালিতো অসাধ্য সাধন করতে জানে। তবে কেন আমরা একসাথে নববর্ষ উদযাপন করতে পারবো না? যে জাতি একসাথে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিজয়ের আনন্দে ভেসেছে, সে জাতি কেন একসাথে নববর্ষের আনন্দে উদ্বেলিত পারবে না? নিশ্চয়ই পারবে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষায় রইলাম।
নতুন বছর সবার জন্য বয়ে আনুক কল্যাণ, সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধি। আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা। 
লেখক: অভিনেতা। 
 

শেয়ার করুন: