
ফাইল ছবি
নিউইয়র্কে ব্যাপক পরিচিত এবং নিউজার্সিতে বসবাসরত ‘ভাস্কর’ আখতার আহমেদ রাশার বিরুদ্ধে ভাস্কর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয় ভাষিণীর কন্যা ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনীর অভিযোগ বিষয়ে গত শুক্রবার ১৫ সেপ্টেম্বর নবযুগ পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী এতোদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আখতার আহমেদ রাশা কর্তৃক ভাস্কর প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্মী চুরির অভিযোগ করলেও বিষয়টি প্রথমবারের মতো মানুষের সামনে নিয়ে আসে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত নবযুগ।
এ সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর নিউইয়র্ক, ঢাকা এমন কি বিশ্বের বিভিন্নস্থানে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদটি ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী তার ফেসবুকে শেয়ার করার পর ও তার আগে দেয়া স্ট্যাটাসের কমেন্টে নিন্দার ঝড় উঠে এবং তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ বিভিন্ন কমেন্ট করতে থাকেন। এ সংবাদ নিয়ে আবার কয়েকজন প্রশ্নও তুলেন। তারা বলেন, সংবাদটি প্রকাশ করার আগে আখতার আহমেদ রাশার কোনো বক্তব্য নেয়া হয়েছিল কি না?
এ প্রসঙ্গে নবযুগ’র ঢাকা অফিস প্রধান মেসবাহ শিমুল বলেন, সংবাদটি প্রকাশের আগে যথাযথ মাধ্যমে আখতার আহমেদ রাশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং যোগাযোগের বিষয়টি নবযুগের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হয়েছিল।
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস এবং নবযুগের লিংকে অনেকেই মন্তব্য করতে ভুলেননি। এছাড়া একই ধরনের অভিযোগ করেছেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সন্তান তুর্য্য কাজীও। তিনি লিখেন, দু:খিত, এই বিতর্কে দুই কলম না লিখলে, একটু প্রতিবাদ বা নিন্দা না জানালে আমার মায়ের প্রতি অবিচার হয়ে যায়। দুষ্ট লোকেরা অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে এমন সব কাজ করে থাকে যাতে চারিদিকে হইচই পড়ে যায় এবং তারা আলোচনায় চলে আসে। সেই আলোচনায় আসাটাই তাদের মূল লক্ষ্য আর সাফল্য। আমি জানি না আমার এই লেখা হয়তো রাশা সাহেবের উদ্দেশ্যকেই সাহায্য করছে।
আমার মায়ের প্রায় প্রতিটি কাজের ছবি আমার ক্যামেরায় ধারণ করা আছে, যার অসংখ্য ছবি অপ্রকাশিত। মায়ের মৃত্যুর পর বেশ কয়েক বছর আগে অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে কোন এক মাধ্যমে আমার মায়ের উপর একটা বই বা ক্যাটালগ ছাপানোর কথা বলে আমার কাছ থেকে প্রায় ৩০ টা অমূল্যবান অপ্রকাশিত ছবি হাতিয়ে নেন যদিও আমার প্রতিটি ছবি কপিরাইট আইনে সুরক্ষিত। ‘হাতিয়ে নেন’ এই কথাটি বলছি এই কারণে যে ওই ছবি দিয়ে রাশা কি করেছেন তা আজও আমার অজানা। সেই সময় কোন বই বা ক্যাটালগ যে প্রকাশ হয়নি তা আমি নিশ্চিত। ছবিগুলো হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই রাশা লোকটির উপর বিশেষ করে তার কাজের উপর নজর রাখছিলাম।
বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া তার এক্সিবিশন নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই কারণ আমি জানি না কি কাজ নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এক্সিবিশন করছেন। তবে আমার কাছ থেকে ছবি হাতিয়ে নেওয়ার পরপর আমেরিকায় বসে সেই সময় তিনি যে এক্সিবিশনটি করেছিলেন তার ছবি দেখে আমার মনে হয়েছে একটা ব্যর্থ পুকুর চুরির মামলা তার বিরুদ্ধে আমেরিকাতেই করা যেতে পারে। শুধু নাম চুরি করেই তিনি থামেননি, অনেকগুলো কাজ তিনি সরাসরি নকল করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। যা আমার বিবেচনায় হয়নি, নকলও হয়নি।
শিল্প সাহিত্য সংগীত এগুলো ভিতরে থাকতে হয়, ধারণ করতে হয়। টাকা খরচ করে, বাটপারি করে এক্সিবিশন করা যায় সত্য, কিছু মানুষকে ঘোল খাইয়ে সঙ্গেও নেয়া যায়, বিবৃতিও নেওয়া যায় হয়তো। এটা শিল্পী আর শিল্পের সাথে পরিষ্কার প্রতারনা। ধিক্কার জানাই। আর শিল্পীকে সত্য স্বীকার করে মৌলিক কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহবান জানাই।
তুর্য্য কাজী বলেন, অবাক হয়েছি গ্যালারির দায়িত্ববোধ দেখে। সম্ভবত রাশা সাহেব আমেরিকা প্রবাসী না হলে বা ডলার পকেটে না পেলে একটি গ্যালারি এ ধরণের দায়িত্বহীন আয়োজনে যুক্ত হতে পারে কি করে!
তিনি বলেন, পুনশ্চ: এখানে দেখছি চুরি আর চোরকে অনেকেই ডিফেন্ড করার চেষ্টা করছেন। যুক্তি প্রমাণ হাতরে বেড়াচ্ছেন। চুরির অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তার বক্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।
তুর্য্য লিখেন, এই চোরের ফেসবুক পাতা থেকে অসংখ্য নকল কাজের ছবি আমি ইতিমধ্যে নামিয়ে আমার কাছে থাকা মায়ের কাজের সাথে মিলিয়ে দেখেছি এবং দেখছি। কাজটা সম্পন্ন হলে আরো অজস্র নকল সামনে আনতে পারবো। কি নকল করেনি এই চোর! কত কত যে কাজ চুরি করেছে তার ইয়াত্তা নাই। একে একে সব সবই সামনে আনছি একটু সময় লাগবে এই যা।
শিল্পাঙ্গন গ্যালারি স্বত্বাধিকারী, সাংবাদিক রুমী নোমান লিখেন, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কাজগুলো কি পরিচয় হারাবে? আমি অনেকবার বলেছি তিনি এমন একজন মানুষ যার কাছে গেলে হারিয়ে যেতাম। তিনি পরিচিত গন্ডির বাইরে নিয়ে আমাকে আত্মানুসন্ধানের পথ দেখাতেন.. বৃষ্টি আর সবুজ পাতার গল্প বলতেন.. তাঁর পায়ের কাছে বসে আমি বালক হয়ে যেতাম। মনে মনে বলতাম ‘আমিই তো তোমার জলপুত্র.. তুমি আমাকে নিয়ে চলো তোমার সেই গল্পের দেশে, মেঘদলের কাছে.. আমার এই অনুভূতি, এই ভালোলাগা এসব কিছুকে আমি কি ধরে রাখতে পারবো না? আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু মানুষ যখন দেখবে হুবুহু প্রিয়ভাষিণীর কাজগুলোকে বলা হচ্ছে অন্য কারও - তখন আমার কেমন লাগবে? আমার সেই শৈশবে ফিরে যাবার স্বপ্নে তখন কাকে দেখবো? এটা তো ভয়ংকর এক দু:স্বপ্ন হয়ে দেখা দিবে..। এটা কি বোঝেন আপনি, যিনি এই চৌর্যবৃত্তি করে চলেছেন? আমার অতীত, ভালো লাগা, সুন্দর সময়গুলো শুধু প্রভাবিত হবার নামে কেউ লুন্ঠন করতে পারে?
আপনার কাছেই প্রশ্নটা রাখলাম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাঈদা কামাল লিখেন, সম্প্রতি নিউইয়র্ক প্রবাসী আখতার আহমেদ রাশা কর্তৃক ভাস্কর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্ম নকল, শিরোনাম নকল এবং তা মৌলিক কাজ হিসেবে প্রদর্শনীতে উপস্থাপন প্রসঙ্গে : ‘আমি এই প্রতারণার তীব্র নিন্দা জানাই। মানুষ কতখানি নির্লজ্জ হতে পারে সেটা এই কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়। ফেরদৌসী আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু ছিলো। আমি ওর প্রায় সব কাজই চিনি। আমি মর্মাহত।’
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষাবিদ কিশোয়ার কামাল লিখেন, ‘কী আশ্চর্য! এমন ঠগ শিল্পীও হয়? ধিক্কার জানাই আখতার আহমেদ রাশাকে এই জোচ্চুরির জন্য !’
রুমের ওল্ড স্কুল আর্ট এর স্বত্বাধিকারী শিল্পী, ডিজাইনার, মেহজাবীন মৈত্রী লিখেন, প্রতিবাদ জানাই। ধিক্কার। এই লজ্জা আমাদের, তিনি দিব্যি প্রদর্শনী চালিয়ে যাচ্ছেন! অশযঃধৎ অযসবফ জধংযধ কী বলবেন বলুন। ফুলেশ্বরী দি ক্ষমা করবে না এইসব হীনদের। আছি সাথে।
সংবাদ পাঠক, সুমনা ঘোষ লিখেন, আমি আশ্চর্য হই ভেবে যে এরা মানুষ!!?? আবার শিল্পী !!!??? কি করে, ছিঃ !!!
ব্র্যাক’র জাস্টিস ও ডাইভার্সিটি, পরিচালক (জেন্ডার), সংগীতশিল্পী ও সাবেক সাংবাদিক নবনীতা চৌধুরী লিখেন, কী জঘন্য এবং কী ভয়ংকর! তবে বেচারার কাজগুলো তো কিছু হচ্ছে না। মানে নকল তো কখনো শিল্প হয়ে ওঠে না। তবে এই শিল্পীর হাতও বড় কাঁচা। এগুলো তো আমার কাছে জয়নুল আবেদীনের গরুর গাড়ির স্কেচ যে শিশু একাডেমির সামনে মৃৎশিল্পীরা মাটিতে ওয়ালহ্যাঙ্গিং গড়ে বেচতেন তার চেয়েও কাঁচা নকল লাগছে। আপনি আপনার মত কাজ করুন। গাছ, লতাপাতা দিয়ে কাজ করলেই যদি ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী হওয়া যেত তাহলে ঘরে ঘরে প্রিয়ভাষিণী থাকতেন। আর আপনার প্রদর্শনীতে গিয়েই আমার মনে হয়েছিল এখন অনেকে ভাববেন আরে জানালা তো এমন আমিও বানাতে পারি। আসলে প্রাণ প্রতিষ্ঠা ছাড়া যে শিল্প হয়ে ওঠেনা আর আরেকজনের ভাবনায় কাজ করলে, নিজের প্রাণের আকুতি না থাকলে যে তা ছোটবেলায় স্কুলে আঁকা গ্রামের দৃশ্যের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে ওঠে না তা বোঝার ক্ষমতা থাকতেও বোধসম্পন্ন মানুষ হতে হয়। এদের ক্ষমা করুন।
লেখক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী মুনমুন শারমিন শামস লিখেন, বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে আমাদের এখানে, এই সমাজে যে চুরি করাটাই যেন স্বাভাবিক। কেউ সৎ, সুন্দর- সেইটা অস্বাভাবিক বা অদ্ভুত কোনো ঘটনা। চোর চুরি করবে। আমরা চোখের সামনে দেখবো। কিছুই বলতে পারবো না। আমার এক পরিচিত মেয়ে আমার বাসায় যেদিনই আসে, একটা করে ছোট সাইজের শোপিস বা কোনো জিনিস ভ্যানিশ হয়ে যায়। আমি সবই টের পাই। ভদ্রতার খাতিরে বলতে পারি না। আমার লেখা হররোজ চুরি হয়। ভাইরাল লেখাকে সংগৃহীত বলে চালানোর চলটা বাদই দিলাম, নিজের নামে লেখা চালিয়ে দেয়। সেখানে আবার কেউ এসে কমেন্ট করে, চমৎকার লিখেছেন। চোর হাসিমাখা মুখে জবাব দেয়, থ্যাংক ইউ।
তো চোরের দুনিয়াতে থাকি। চোর গিজগিজ করছে চারিদিকে। যারা ভদ্র তাদের সাথে চোরের পোয়াবারো। যারা নম্র ভদ্র ব্যবহার করেন, ভালো মানুষ, অবৈষয়িক মানুষ- তাদের ছিঁড়েখুঁড়ে খাওয়াটাই চল। তাদের সবটুকু কেড়ে নেওয়াটাই এসব অসৎ লোকেদের উদ্দেশ্য।
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী অনন্য তাঁর সৃষ্টির জন্য। তার শিল্পীসত্তার ভিন্নমাত্রার প্রকাশ আমাদেরকে তাঁর কাজ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। তার সৃষ্টিকর্ম একবার যে দেখে, সে ভুলতে পারে না। তো মানুষটা নিভৃতচারী ছিলেন। তাঁর সন্তানরাও তাঁরই মতন। শান্ত, ভদ্র, চুপচাপ। তারই সুযোগ নিতে হামলে পড়বে খারাপ লোকেরা, এই তো স্বাভাবিক এ সমাজে। ফলে আমাদের প্রিয় ভাস্কর, সাহসিনী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্মের আইডিয়া চুরি করতে নেমে পড়েছে মাঠে এই লোকটি। প্রিয়ভাষিণীর বাড়িতে এসে সুচতুরভাবে সব কিছুর ছবি তুলে এখন নকল করে নাম কামিয়ে বেড়াচ্ছে। যদিও নকলও হচ্ছে অতি জঘন্য। তবু লজ্জার মাথা খেয়েও কাজটা করে যাচ্ছে সে।
শুধু প্রিয়ভাষিণীই নয়, তাঁর কন্যা ফুলেশ্বরী দি এবং নাতনী উর্বশীর কাজও হুবহু কপি করছে লোকটা!
ধিক্কার জানাই এই অপকর্মের। এই মেধা ও সৃষ্টিশীল চিন্তা, আইডিয়া চুরির তীব্র প্রতিবাদ করি। এর বিচার চাই একই সাথে। আমি এই অপরাধের জন্য দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করি। আপনারাও জোর দাবি তুলুন যেন এ ধরনের চোরেরা আর ভবিষ্যতে এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে!
লেখক মানবাধিকার কর্মী শাশ্বতী বিপ্লব লিখেন, আজকাল অনেক কিছুতেই রিএ্যাক্ট করি না। কিন্তু এই বিষয়টাতে চুপ থাকতে পারলাম না। আজকে আমি যদি ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ -র একটা রেপ্লিকা বানিয়ে দাবী করি যে, এটা আমার সৃষ্টি, আমার শিল্পভাবনা, তাহলে ব্যাপারটা কেমন শোনাবে? ভাস্কর শামীম শিকদার জীবনের ওপার থেকে অট্টহাসিতে ফেটে পড়বেন নিশ্চয়ই। ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছে ভাস্কর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সাথে। জানি না তিনি হেসে গড়িয়ে পড়ছেন কিনা! প্রিয়ভাষিণীর শিল্পভাবনা আর ভাস্কর্যকে সরাসরি নকল করে নিজেকে ব্যতিক্রমী শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার হীন অপচেষ্টা করে চলেছেন নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির প্রবাসী আখতার আহমেদ রাশা।
শুধু ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর শিল্পকর্মই না, তার সুযোগ্য কন্য ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনীর জানালার কাজ এবং দৌহিত্রী উর্বশী বন্দনার মিনি ডাকবাক্সের আইডিয়া এবং নক্সা তিনি চুরি করে নিজের নামে চালাচ্ছেন। শুধু শিল্পকর্মেই না, এমনকি ওদের ব্যবহার করা শিরোনামগুলোও ‘ভদ্রলোক’ মহা আনন্দে নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন।
তিনি আরো লিখেন, এটা অন্যায়, মহা অন্যায়। কারো সৃষ্টি দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া এক জিনিস, আর তার কাজকে পুরা কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া আরেক জিনিস। এমনকি কারো কাজ থেকে ধারণা নিলেও সেখানে ক্রেডিট লাইন উল্লেখ করাটাই দস্তুর। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যদিও প্রতিবাদে তেমন কাজ হবে বলে মনে হয় না। ফুলেশ্বরী কয়দিন ধরে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। তারপরও ঢাকার সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে বুক ফুলিয়ে প্রদর্শণী হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি সেই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন। বণিক বার্তা আয়োজন করে ফিচারও ছেপেছে। আমি শুধু ভাবি, এই মানুষগুলোর কারো মাথাতেই আসলো না যে, এগুলো কারো কাজের সরাসরি নকল! ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী এবং তাঁর কাজতো আমাদের অচেনা না! অদ্ভুত আমরা!
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি লিখেন, আমি ছিঃও বলছি না, ভয়ংকরও বলছি না। ফুলেশ্বরী, তুমি কি জানো, মানুষ শুধু নাটক/ অভিনয়/ কাপড়/ ফার্নিচার/ সাজস্বজ্জা নয়, হাসি-কান্নাও নকল করে করে?! আমি রোজ দেখি। এগুলো করে ধন্য ধন্য হতেও দেখি! শুধু তারা জানে আর আমি জানি কি করছে! ব্যক্তিত্ব এবং লেখারও নকল হয় রোজ।
সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মত একজন শিল্পীর কাজের এইরকম চৌর্যবৃত্তির চর্চা যেকোনো শিল্পীর জন্যই উদ্বেগের বিষয়!
ভূমি’ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাইফুর রহমান লেনিন লিখেন, হুবহু কাজের প্রমাণ বিদ্যমান সত্ত্বেও কপি করা কাজ দিয়ে নিজের নামে প্রদর্শনী!? -এ যেনো পুরো শিল্পীসমাজকে ভৎসনার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোরই নামান্তর। আজ প্রিয়ভাষিণী, আগামীকাল আপনার ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবার এই প্রক্রিয়া রুখতে সচেতন শিল্পীসমাজকে সোচ্চার হতে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
শিল্পী সমীরণ দত্ত, (ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে পূর্বসূরি মেনে, তাঁর অনুপ্রেরণা যাঁর কাজের উৎস) লিখেন, ঋঁষবংযধিৎু চৎরুধহধহফরহর, আপনার পোস্ট পড়ার পর তখনই মন্তব্য করতে ইচ্ছে হচ্ছিল। মান্যবর শিল্পী সম্পর্কে আরেকটু জানার জন্য নেটে ঢুকে সবার আগে পেলাম সময় টিভিতে প্রচারিত তাঁর একটি সাক্ষাৎকার। নানা কথার মাঝখানে ভদ্রলোক খুবই তৃপ্তির সাথে জানাচ্ছিলেন, ‘যশোর রোড’ নামে তাঁর একটি শিল্পকর্ম খুব প্রশংসা অর্জন করেছে! কাজটির সম্পর্কে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। না:! তাঁর শিল্পীসত্তার ওপর শ্রদ্ধা রাখা গেলো না।
প্রিয়ভাষিণী আপার কাজ সম্পর্কে সামান্য ধারণা বা আগ্রহ আছে এমন যে কেউ জানেন ‘যশোর রোড’ তাঁর সুবিখ্যাত এবং হৃদয়ছোঁয়া কাজগুলোর মধ্যে একেবারে প্রথম সারির একটি। এই ভদ্রলোক প্রিয়ভাষিণী ম্যাম দ্বারা অনুপ্রাণিত, এটি সত্য হলে তাঁর বিশেষ গুরুত্বপ্রাপ্ত কোন একটা শিল্পকর্ম নাম এবং বিষয়বস্তুসহ সযতেœ মনে রাখার কথা। তার বদলে তিনি নিজেই হয়ে গেলেন একটি অমর শিল্পকর্মের স্রষ্টা!
এই শিল্পী মহোদয় সম্পর্কে আর বেশি কিছু জানার আগ্রহ রইলো না! বুঝলাম, রবীন্দ্রনাথ দ্বারা অনুপ্রাণিত কেউ চাইলে এক বা একাধিক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিজেও লিখতে পারেন, এটা কোনো সমস্যার বিষয় না!
চিন্তার পরিধি একজন মানুষকে দিয়ে তার যোগ্য কাজটাই করিয়ে নেয়। তিনিও তাঁর ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিয়েছেন!
আপনাকে তাঁর প্রদর্শনীতে এড়িয়ে যাওয়া, সহযোগিতার প্রমাণপত্র অন্যদের সাথে শেয়ার করা- এসব তাঁর ব্যক্তিসত্তারই সুদৃঢ় প্রমাণ।
সত্যি বল তে কি, প্রিয়ভাষিণী আপার এমন বলিষ্ঠ ভক্ত আছে জেনে দুঃখ পাবার বদলে কৌতুক বোধ করেছি! দুঃখ পেয়েছি অন্য জায়গায়। তাঁর এমন বিকৃত শিল্পবোধ নিয়ে মিডিয়া, শিল্প-সংস্কৃতির মানুষেরা কেন প্রশ্ন তুললেন না! না-কি আসল নকল বোঝার ক্ষমতা বা ইচ্ছা তাঁদেরও নেই?