ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের ছয় মাসেরও কম আয়ুবিশিষ্ট সেইসব মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসকের সহায়তায় মৃত্যু বৈধ করতে রাজ্য আইনসভার সাথে একটি ঐতিহাসিক চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর ক্যাথি হোকুল। বুধবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
আগামী জানুয়ারিতে এ আইনটি পাস এবং স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে এবং এর ঠিক ছয় মাস পর থেকে এটি কার্যকর হবে। দীর্ঘ বছরের তীব্র বিতর্ক এবং গভর্নরের ব্যক্তিগত উপলব্ধির পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। গভর্নর হোকুল এই সিদ্ধান্তের পেছনে তার নিজ মায়ের ‘এএলএস’ রোগের সাথে করুণ লড়াইয়ের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন।
গভর্নর হোকুল বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিচিত। এখন সময় এসেছে সেই স্বাধীনতা সেইসব মুমূর্ষু নিউ ইয়র্কবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার, যারা নিজেদের শর্তে এবং শান্তিতে মৃত্যুবরণ করার অধিকার চান। প্রিয়জনকে কষ্ট পেতে দেখা এবং তা থামাতে না পারার অসহায়ত্ব আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। এ বিলটি নিউ ইয়র্কবাসীদের কষ্ট লাঘব করবে—এটি তাদের জীবনকে নয়, বরং তাদের মৃত্যুর যন্ত্রণাকে সংক্ষিপ্ত করবে।’
রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই চুক্তিতে বেশ কিছু কঠোর সুরক্ষাকবচ রাখা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে :
* প্রেসক্রিপশন পাওয়ার আগে বাধ্যতামূলক পাঁচ দিনের ‘অপেক্ষার সময়’ ।
* বাধ্যতামূলক মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন।
* রোগীর মৌখিক অনুরোধটি ভিডিও বা অডিওর মাধ্যমে রেকর্ড করা।
এছাড়া, রোগীর মৃত্যুতে যারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন, তারা এই প্রক্রিয়ায় সাক্ষী বা দোভাষী হিসেবে থাকতে পারবেন না।
এই আইনটি কেবল নিউইয়র্কের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং চিকিৎসকের মাধ্যমে একটি প্রাথমিক সশরীরে মূল্যায়নের প্রয়োজন হবে। তবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ‘হসপিস’ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে এই প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়ার অধিকার পাবে।
আইনটি কার্যকর করতে যে ছয় মাস সময় নেওয়া হচ্ছে, তার মূল উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য বিভাগ এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং আনুষ্ঠানিক নিয়মাবলী তৈরি করার পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া।
আন্দোলনকারীদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের আরো প্রায় ১২টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়াতে চিকিৎসকের সহায়তায় মৃত্যুর অনুমতি রয়েছে। গত শুক্রবার ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকারও একটি অনুরূপ বিলে স্বাক্ষর করেছেন।
নিউইয়র্কে এই আইনটি প্রথম ২০১৬ সালে উত্থাপন করা হলেও ‘নিউ ইয়র্ক স্টেট ক্যাথলিক কনফারেন্স’ এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর বিরোধিতার কারণে এটি বছরের পর বছর আটকে ছিল। ক্যাথলিক সংস্থাগুলোর যুক্তি ছিল, এই পদক্ষেপ মানুষের জীবনের অবমূল্যায়ন করবে এবং নিরাময়কারী হিসেবে চিকিৎসকের ভূমিকাকে নষ্ট করবে। গভর্নরের এই ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে কার্ডিনাল টিমোথি ডোলান এবং নিউ ইয়র্কের বিশপরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হোকুলের এই অবস্থান সরকারের পক্ষ থেকে সবচেয়ে অসহায় নাগরিকদের ‘পরিত্যাগ করার’ একটি সংকেত। তাদের মতে, এটি অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাছে এই বার্তা পাঠাচ্ছে যে তাদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যা কেবল গ্রহণযোগ্যই নয়, বরং উৎসাহিত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই বছরের শুরুর দিকেই নিউ ইয়র্কের আইনপ্রণেতারা এই বিলটি অনুমোদন করেছিলেন। সমর্থকদের দাবি, এটি মুমূর্ষু মানুষের অসহ্য যন্ত্রণা কমাবে এবং তাদের মর্যাদার সাথে শেষ বিদায়ের সুযোগ করে দেবে।

















