শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

 তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পুনরায় নির্বাচিত হলেন   রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

ঢাকা অফিস:

আপডেট: ০০:৪৬, ২৯ মে ২০২৩

 তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পুনরায় নির্বাচিত হলেন   রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

ছবি: সংগৃহীত

গত ২০ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করে আসা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানই পুনরায় নির্বাচিত হয়ে দেশটির মসনদে বসছেন

গত ২০ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করে আসা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানই পুনরায় নির্বাচিত হয়ে দেশটির মসনদে বসছেন। রোববার অনুষ্ঠিত রান-অফ নির্বাচনে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে।

আনাদোলু বলছে, ৯৭ শতাংশ ব্যালট বাক্স গণনা সম্পন্ন হয়েছে। এই গণনায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ৯ বছর প্রেসিডেন্ট আর ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এরদোয়ানের নেতৃত্বে ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের পথে হাঁটা তুরস্কে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এরদোয়ানের পেশীবহুল পররাষ্ট্র নীতি আর অপ্রচলিত উপায়ে দেশের অর্থনীতি পরিচালনার ফলে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।

এমন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ভোটে এরদোয়ানের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল তিন মাস আগে দেশটিতে আঘাত হানা স্মরণকালের ভয়াবহ এক ভূমিকম্প। ওই ভূমিকম্পে অর্ধ-লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে দেশ ও বিদেশি তীব্র সমালোচনার শিকার হতে হয় এরদোয়ান নেতৃত্বাধীন সরকারকে।

চলমান এই পরিস্থিতির মাঝে গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে এরদোয়ানের সাথে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলুর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়।

বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে তুরস্কের উচ্চ নির্বাচন বোর্ডের প্রধান আহমেদ ইয়ানার এক সম্মেলনে নির্বাচনের ফল প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, রোববারের ভোটে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলুর চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। প্রাথমিকভাবে ৯৭ শতাংশ ব্যালট বাক্সের ভোট গণনায় এরদোয়ান ৫২ দশমিক ১ শতাংশ এবং কিলিচদারোগলু ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।

এরদোয়ান নেতৃত্বাধীন দেশটির ক্ষমতাসীন একে পার্টির মুখপাত্র ওমের সেলিক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান শক্ত সমর্থন ধরে নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে, নির্বাচনী ফলে এরদোয়ানের জয় নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে ক্ষমতাসীন একে পার্টির কর্মী-সমর্থকরা তুরস্কজুড়ে আনন্দ মিছিল শুরু করেছেন। রয়টার্স বলছে, সমর্থকরা তার ইস্তাম্বুলের বাসভবনে জড়ো হয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিচ্ছেন। ২৮ বছর বয়সী একে পার্টির সমর্থক নিসা নামের এক তরুণী বলেন, আমরা আশা করছি সবকিছু ভালো হবে।

ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতিতে ধুঁকতে থাকা সাড়ে ৮ কোটি মানুষের এই দেশটির নির্বাচনে এরদোয়ানের পুনরায় জয় লাভ তার অপরাজেয় ভাবমূর্তিকে আরও দৃঢ় করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


গত ১৪ মে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলু পান ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট।

আর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত সিনান ওগান পেয়েছিলেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, প্রথম দফার নির্বাচনে তুরস্কের ৬ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের মাঝে ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।


একে পার্টি নামে পরিচিত তুরস্কের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলভমেন্ট পার্টি নেতৃত্বাধীন পিপলস অ্যালায়েন্ট জোটের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ৬৯ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রনেতা তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন ২০ বছর ধরে। এর মধ্যে ৯ বছর প্রেসিডেন্ট এবং ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তুরস্কের অন্যতম বৃহৎ শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন তিনি। 

এবা‌রে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হ‌য়েছেন এরদোয়ান। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট আর সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাঝে এবারের এই নির্বাচনর তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল।

 
দেশটির ছয়দলীয় জোট ন্যাশন অ্যালায়েন্সের হয়ে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিক। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। রাজনীতির মাঠে পা রাখার আগে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের বেশিরভাগ সময় দেশটির সামাজিক বীমা ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল কুর্দিপন্থি এইচডিপির সমর্থনে ছয়-দলীয় ন্যাশন অ্যালায়েন্সের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। তুরস্ককে একটি শক্তিশালী সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি‌লেন কেমাল।
 

শেয়ার করুন: