বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

প্রোপাগান্ডা দমনে সহয়াক হবে মার্কিন ভিসা নীতি

সামছুদ্দীন আজাদ, সহ সভাপতি-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ৩ জুন ২০২৩

প্রোপাগান্ডা দমনে সহয়াক হবে মার্কিন ভিসা নীতি

ফাইল ছবি

চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবকতা অনুযায়ি এটাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ইতিমধ্যে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করেছে। আর কমিশন এখন সব ধরণের প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে। 

সরকার বলছে তারা একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিবে। তবে বিএনপি ও তার মিত্ররা মাঠে নেমেছে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র নিয়ে। এমনকি ইসলামী আদর্শের দলগুলোও নির্বাচনী মাঠে সরব হয়েছে। গোটা দেশের রাজনীতি ও পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য বিএনপি ও তার সাথে জোট বাঁধা ছোট ছোট কয়টি দলের নেতারা এক হয়ে একই মঞ্চে কাজ করছে। তাদের দাবী নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তাদের দাবী না মানলে তারা সরকারকে জোর করে নামিয়ে ফেলবে। আবার কোনো কোনো নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশে বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। বিভিন্ন জেলা সদরে, উপজেলায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছে। আর ঢাকায় তো প্রতিদিন তারা কোন না কোন সমাবেশ রয়েছেই। 

গেল বছরের ১০ ডিসেম্বর তারা সরকার পতনের আল্টিমেটামও দিয়েছিল। যা কিনা প্রকাশ্য দিবালোকে দেশবাসীর বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার নামান্তর। তবে শত চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি বরং সরকার বিএনপির সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করে দেশের সুস্থ্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে সফল হয়েছিল। বিএনপি ভাল করেই জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থাটা তারাই নিজেরাই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।

২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানকে দিয়ে একটি সর্বকালের সর্বযুগের ভোট ডাকাতির নির্বাচন করিয়ে এই লুটেরা তথাকথিত বিচারপতি লতিফুর রহমান জামাত-বিএনপির এজেন্ডা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে সময় অবৈধ পন্থায় ভোট ডাকাতি, ভোট কেন্দ্র দখল, সেনাবাহিনীর সদস্যদের দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করে বিএনপির জন্য ফাঁকা মাঠ তৈরি করে। ক্ষমতায় এসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর সন্ত্রাসের জোরে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ২৪ হাজার নেতাকর্মী, ৪ জন সংসদ সদস্য খুন করেছিল বিএনপি। এমনকি দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ একযোগে আওয়ামী লীগের সব সিনিয়র নেতাদের হত্যা করতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। 

সে সময়ের বিরোধী দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার গাড়ী লক্ষ্য করে গুলিও ছুড়েছিল। এই ছিল বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নগ্ন ইতিহাস। আজ আবার একই এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীকে সামনে নিয়ে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। 

তবে আজ আর সেই সুযোগ নেই। তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংসদে আইন পাশ করে চিরদিনের জন্য বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং এই অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই। এই দাবি তুলে বিএনপি পুরণো সন্ত্রাসে ফিরে যেতে চায়। তবে সরকার তা মানবে না। নির্বাচন করতে হলে বিএনপিকে সরকারের অধীনেই করতে হবে। আর যদি নির্বাচন না করে বিএনপি তাহলে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সরকার নির্বাচন করবে। 

বিএনপি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে যে তারা এদেশে কোন নির্বাচন করবেও না, নির্বাচন হতেও দেবে না তারা নির্বাচন প্রতিহত করবে। সুতরাং আগামী নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় তৈরির আশংকা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। কিভাবে একটি ফ্রি, ফেয়ার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা যায়।

সরকার ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে একটি নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে। এমনকি সরকার আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলে দিয়েছে তারা ইচ্ছে করলে যত খুশি ততজন নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবেন। অর্থাৎ সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এমনি এক পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের নাগরিকদের আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার নির্দেশনাও জারি করেছে। এরই মধ্যে গত ২৪ মে ২০২৩ সালে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর কর্মকর্তা ডেভিড মিলারকে দিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়। আগামী জাতীয় সংসদ চলাকালীন সময়ে যারা বাঁধা প্রদান করবে, নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টা করবে, ভোটারদের উপর আক্রমণ করবে, ভীতি প্রদর্শন করবে, ভোট জালিয়াতি করবে, ভোট রিগিং করার চেষ্টা করবে অর্থাৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করবে তাদের ব্যাপারে মার্কিন ইমিগ্রেশন নতুন এক ভিসা সতর্ক বার্তা দিয়েছে। যারা এ কাজে জড়িত থাকবেন তাদের প্রত্যেকের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল করা হবে। তাদের পরিবার স্ত্রী-পুত্রের ভিসা থাকলে তাও বাতিল করা হবে। একই ভাবে বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে সেটা তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এ ব্যাপারে তারা নাক গলাতে চায় না। এমন ঘটনার পর বিএনপি থেকে উল্লাস প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পক্ষে কথা বলেছে। সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করেছে। তারা মনে করে তারা জয়ী হয়েছে মার্কিন এই বার্তায়।

ইতিমধ্যে মির্জা ফখরুল বলেছেন, সরকারের সুর নাকি নম হয়ে গেছে। এটি বিএনপির স্বস্তির জায়গা বলে তারা মনে করছে। তাই দেশে-বিদেশে বিএনপির নেতাদের লাফালাফি একটু বেড়ে গেছে। কিন্তু তারা বোধ হয় শুনেনি, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে সরকারের অধীনে নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, এটি নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। এটি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। 

সুতরাং স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনের দাবীকে সমর্থন করে না। সুতরাং আমি মনে করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিসা নীতি বাংলাদেশ নিয়ে যারা প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত তাদের জন্য একটি আগাম হুশিয়ারি। যারা ১৯৭৫ সালে এদেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জাতির পিতাকে খুন করেছিল, জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে খুন করেছিল, যারা ২০০৪ এ ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা করেছিল, যারা ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানি করেছিল, যারা আওয়ামী লীগের ৪ জন এমপিকে হত্যা করেছিল, যারা ২৪ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর জীবন কেড়ে নিয়েছিল তাদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা। 

শেয়ার করুন: