![রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: কারো কি কিছ্ইু করার নেই? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: কারো কি কিছ্ইু করার নেই?](https://www.nobojugusa.com/media/imgAll/2022August/fight-of-bakhmu-2303041803-2303050530.jpg)
প্রতিকী ছবি
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্তি হলো। ইতিমধ্যেই যুদ্ধের ভয়াবহতায় ইউক্রেন ধবংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। হাজারো বৃদ্ধ-শিশু, নারী-পুরুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বিস্তীর্ণ ভূমি। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ তাদের সজানো সংসার ফেলে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। শরনার্থীদের চাপ সইতে না পেরে পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের জনগণ প্রতিবাদ মিছিল করছে। এদিকে রাশিয়ারও বিপুল জানমালের ক্ষতি হয়েছে। প্রতি নিয়ত তা বেড়েই চলেছে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর স্যাংশনে পড়ে তারা এখন দিশেহারা।
এই যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ব। কিছু কিছু দেশ আগাম দুর্ভিক্ষের অশনি সংকেত দিচ্ছে। কারণ বিশ্বের প্রায় ৬০ ভাগ জ্বালানি ও খাদ্য রফতানিকারক এই দুই দেশ। আজ মনে হচ্ছে সা¤্রাজ্যবাদী উসকানি, অস্ত্র বিক্রেতাদের দাবার ঘুটি হয়ে যুদ্ধ দামামায় মানবতা পদদলিত। জাতিসংঘ আজ ঠুটো জগন্নাথ। নখদন্তহীন বাঘে পরিনত হয়েছে। রাশিয়া আক্রমণের এক বছর পুরো হওয়ার আগের দিন ১৪১টি দেশের সমর্থনে একটি রেজুলেশন পাশ হয় যে অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে। এ ধরনের রেজুলেশন আগে আরও দুই বার নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
এই রেজুলেশনের বিরুদ্ধে রাশিয়া, বেলরুশ, নর্থ কোরিয়াসহ সাতটি দেশ ভোট দেয় এবং চীন, ভারত, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশসহ বত্রিশটি দেশ ভোট দানে বিরত ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো এ ধরনের রেজুলেশন যদি কার্যকর না হয় তবে কি অন্য কিছু অর্থাৎ দ্বি-পক্ষীয় অথবা সুপার পাওয়ার দেশ গুলোর সমন্বয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া যায় না? তাদের এইরূপ ছেলে খেলার কারনে এখন জাতিসংঘের প্রয়োজন আছে কি না সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পোল্যান্ডে ন্যাটোর বৈঠকে যোগ দিলেন। সেখান থেকে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে তিনি দুই জন সাংবাদিক একটি মেডিক্যাল টিম এবং কয়েকজন সিক্রেট সার্ভিসের লোক নিয়ে ইউক্রেনে এক দু:সাহসিক যাত্রা করেন। সেখান থেকে গাড়ি ও ট্রেনসহ রাতের আধারে নয় ঘন্টার জার্নি শেষে যুদ্ধ বিধ্বস্ত কিয়েভ শহরে পৌঁছেন এবং সোজা প্রেসিডেন্ট হাউসে গিয়ে জেলোনেস্কির সাথে আলাপ করে পাঁচঘন্টা অবস্থান করেন। সেখানে ছোটখাট একটা উচ্চ পর্যায়ের সমাবেশে বক্তৃতায় বলেন, এ যুদ্ধ ইউক্রেনকে আরও মর্যাদাবান, নিরাপদ ও শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দৃড়তার সাথে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। তিনি আবারও জানান দেন আমরা ইউক্রেনের সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। তখন ইউক্রেনের স্বজন হারা মানুষের দু’ চোখ বেয়ে অশ্রু ধারা পড়ে প্রেসিডেন্ট জেলোনেস্কির কপালে অনিশ্চিতয়তার ছায়া।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কখনোই চিন্তিত বা ভীত মনে হয়নি বরং তাকে প্রানোচ্ছল ও হাস্যজ্জ্বল মনে হচ্ছিল। কিয়েভ ছাড়ার পর প্লেন থেকে যখন খবর প্রকাশ করেন তখন বিভিন্ন রাষ্ট্র্র প্রধানদের কপালে হাত রক্ত হিম হওয়া অবস্থা। সবাই বিস্মিত-হতবাক। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জনগনকে প্রেরণা দেওয়ার জন্য তিনি নিজেই যেন ‘কমান্ডার ইন চিফের’ ভূমিকা পালন করলেন। এই খবর প্রকাশের সাথে সাথে চীন ঘোষনা দেয় প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং সফরে যাবেন। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও বসে নেই। তিনিও ২১ শে ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টের ভাষনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশল গত পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউস্টার্ট’ স্থগিতের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, পশ্চিমারা ইউক্রেন থেকে সরে না এলে প্রয়োজনে তিনি পরমানু অস্ত্র ব্যবহার করবেন। ঘোষণা শুনে সবাই একটু নড়েচড়ে বসে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থ্যনি ব্লিনকেন বলেন, এই চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে দাঁড়ানো পৃথিবীর জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। এটা সত্যি ই দায়িত্বহীন ও দুর্ভাগ্যজনক। তাদের সাথে যে কোন সময়ে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি।
এভাবেই আজ হুমকি পাল্টা হুমকি পরমানু অস্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে বিশ্ব পরাশক্তিগুলো এমন ভাবে একটা আঞ্চলিক সমস্যার মাধ্যে ঢুকে পড়েছেন। এ থেকে পরিত্রানের ভাবনায়ই অস্থির পৃথিবীর শান্তি প্রিয় মানুষ। সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে আজ বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে আধুনিক বিশ্ব ভরপুর। মানবতার কল্যানময় আবাসস্থল। মানুষকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিরোশিমা, নাগাসাকির ভয়াবহতার চিত্র মানুষের মন থেকে এখনো মুছে যায়নি। আর এখন এই পরমানু যুদ্ধের ভয়াবহতার ভার এ পৃথিবী নিতে পারবে না।
মানবজাতি ও পৃথিবীর অস্থিস্তই খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুতরাং এই মরণব্যাধি খেলার পথ পরিহার করে সকলের অস্তিত্ব রক্ষা মানবকুলের প্রশ্নে সকলকেই সংঘাতের পথ পরিহার করে শান্তির আলোচনায় বসতে হবে। আলোচনায় শত্রুকে বন্ধু বানানো যায় বিশ্ববাসীকে জয় করা যায়। এজন্য বৃহৎ পরাশক্তি গুলোকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষের এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: রাজনীতিক ও সাবেক ছাত্রনেতা।