ছবি: সংগৃহীত
অধিকাংশ বাড়ি ক্রেতা বছরের পর বছর সঞ্চয় করেন যেটিকে তারা বাড়ি কেনার সবচেয়ে বড় খরচ বলে মনে করেন : ডাউন পেমেন্ট বা এককালীন প্রাথমিক জমা। কিন্তু বাড়ি কেনার প্রক্রিয়ায় এটিই আপনার দেওয়া শেষ চেক বা পেমেন্ট নয়।
প্রকৃতপক্ষে বাজেট নষ্টকারী বিষয়গুলো হলো সেই খরচগুলো যা আপনি আগে থেকে আঁচ করতে পারেন না; যেমন ক্লোজিংয়ের সময় প্রদেয় ফি অথবা লেন্ডার বা ঋণদাতার চাহিদা অনুযায়ী প্রিপেইড খরচগুলো।
এই খরচগুলো সহজে নজরে পড়ে না কারণ এগুলো বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ভাগ করা থাকে এবং প্রচলিত খরচগুলোর ( যেমন এজেন্টের ফি) মতো এগুলো নিয়ে খুব একটা আলোচনাও হয় না।
তাই আমরা রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কোন বিষয়গুলো ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয়। তাদের পরামর্শ ছিল সরাসরি: ক্যাশ টু ক্লোজ (বাড়ি হস্তান্তরের সময় প্রদেয় নগদ অর্থ)-এর বাইরেও বাড়তি বাজেট রাখুন।
বরং এমনভাবে বাজেট তৈরি করুন যা ক্লোজিংয়ের দিন এবং আপনার মালিকানার প্রথম বছরের যাবতীয় খরচ মেটাতে পারে। বাজেটে যা যা অন্তর্ভুক্ত করবেন তা নিচে দেওয়া হলো।
১. ডাউন পেমেন্টের বাইরে ক্লোজিং কস্ট ‘ক্রেতারা প্রায়ই মোট ক্লোজিং কস্টকে একটি প্যাকেজ বা বান্ডেল হিসেবে মূল্যায়ন করতে ভুল করেন, তারা কেবল ব্যক্তিগত ফি-গুলো দেখেন। এর মধ্যে রয়েছে ঋণদাতার ফি, টাইটেল ইনস্যুরেন্স, এসক্রো, রেকর্ডিং ফি, প্রিপেইড ট্যাক্স এবং প্রিপেইড হোম-ওনার্স ইনস্যুরেন্স,’ বলেন ‘ হোম বায়িং নেটওয়ার্ক’-এর প্রতিষ্ঠাতা রবি ভেলামপ্যালি।
বান্ডেল বা সামগ্রিক হিসাবের ব্যাপারে তিনি ঠিকই বলেছেন। ক্লোজিং কস্টের আলাদা চার্জগুলো বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে খুব ছোট মনে হতে পারে- যেমন ০.৫% অরিজিনেশন ফি বা ৩০ ডলারের ক্রেডিট রিপোর্ট চার্জ। কিন্তু এগুলো খুব দ্রুত বড় অংকে পরিণত হয়, বিশেষ করে যেহেতু এগুলো সব একই সময়ে দিতে হয়; ঠিক তখনই যখন আপনার জমানো অর্থ ডাউন পেমেন্ট দিতে গিয়ে প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
ফ্রেডি ম্যাকের তথ্য অনুযায়ী, একটি বান্ডেল হিসেবে ক্লোজিং কস্ট সাধারণত বাড়ির ক্রয়মূল্যের ২% থেকে ৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
একটি ৪,০০,০০০ ডলারের বাড়ির ক্ষেত্রে এটি দাঁড়ায় প্রায় ৮,০০০ থেকে ২০,০০০ ডলার। মনে রাখবেন, এটি একটি আসবাবপত্র কেনারও আগের খরচ। আপনার ঋণদাতা একটি ‘ক্যাশ-টু-ক্লোজ’ অনুমানের মাধ্যমে এই ব্যয়গুলো বুঝতে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন। শুধু মনে রাখবেন, আপনার বাজেট যেন এখানেই শেষ না হয়ে যায়।
২. ট্রান্সফার ট্যাক্স এবং ফি কনডো (বিশেষ করে কো-অপ) ক্রেতাদের জন্য দ্বিতীয় ক্যাটাগরির কিছু খরচ রয়েছে যেগুলোর সাথে লেন্ডার বা ঋণদাতার কোনো সম্পর্ক নেই; এগুলো হলো মালিকানা হস্তান্তরের কারণে সৃষ্ট ট্যাক্স এবং বিল্ডিং চার্জ। যেসব এলাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি, সেখানে এই ফি-গুলো আপনার মেরামত বা বাসা পরিবর্তনের বাজেটের সমান হতে পারে।
যখন কোনো সম্পত্তির মালিকানা বদল হয়, তখন শহর বা স্টেট কর্তৃপক্ষ ‘ট্রান্সফার ট্যাক্স’ ধার্য করে। সব জায়গায় এই ট্যাক্স থাকে না, আর এর হার এবং কে এই ট্যাক্স পরিশোধ করবে (ক্রেতা না বিক্রেতা), তা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নিউ ইয়র্কে স্টেট ট্রান্সফার ট্যাক্স সাধারণত বিক্রেতা পরিশোধ করেন, তবে এটি আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়। নতুন অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই খরচ ক্রেতার ওপর চাপিয়ে দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এই ট্যাক্স কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে একটি উদাহরণ ধরা যাক : আপনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে ৫,০০,০০০ ডলার দিয়ে একটি কনডো কিনলেন। শহরের ‘রিয়েল প্রপার্টি ট্রান্সফার ট্যাক্স’ অনুযায়ী ৫ লাখ ডলার বা তার কম মূল্যের ওপর ১% ট্যাক্স দিতে হয়, যা অতিরিক্ত ৫,০০০ ডলার। এর সাথে স্টেট আরো ০.৪% ট্যাক্স যোগ করে, যা আরও ২,০০০ ডলার। অর্থাৎ কোনো বিল্ডিং-ফি ছাড়াই আপনার বাড়তি খরচ হলো ৭,০০০ ডলার। মনে রাখবেন, দাম ৫ লক্ষ ডলার ছাড়িয়ে গেলে শহরের ট্যাক্স রেট বেড়ে ১.৪২৫% হয়ে যায়।
এছাড়া বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ (কো-অপ বোর্ড) নিজস্ব ট্রান্সফার ফি নিতে পারে। কিছু অ্যাসোসিয়েশন একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা নেয়, আবার কেউ বিক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে শতাংশ হিসেবে চার্জ করে। কিছু বিল্ডিং আবার ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল’ হিসেবে এক থেকে তিন মাসের কমন চার্জ (যেমন- সার্ভিস চার্জ) অগ্রিম নিয়ে নেয়। যদি মাসিক চার্জ ৬০০ ডলার হয়, তবে আপনাকে শুরুতেই অতিরিক্ত ৬০০ থেকে ১,৮০০ ডলার পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে এই খরচগুলো আপনার বাজেটে ১০,০০০ ডলার বা তার বেশি যোগ করতে পারে।
৩. তাৎক্ষণিক মেরামত প্রথম মর্টগেজ কিস্তি দেওয়ার অনেক আগেই আপনার বাড়িটি আপনার কাছে নগদ টাকা দাবি করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই মেরামতগুলো শখের নয়, বরং বাধ্যতামূলক—যেমন নিরাপত্তা বা বিমা সংক্রান্ত সমস্যা, যা ঠিক না করলে বাড়ি হস্তান্তর বা ‘ক্লোজিং’ আটকে যেতে পারে। কারণ, অধিকাংশ ঋণদাতা বড় ধরনের ত্রুটি (যেমন ছাদের সমস্যা বা কাঠামোগত ত্রুটি) থাকা বাড়িতে ঋণ দিতে চায় না।
যখন এমনটি ঘটে, তখন মেরামত করা ক্লোজিংয়ের একটি শর্ত হয়ে দাঁড়ায়, যার খরচ ক্রেতা, বিক্রেতা বা উভয়কেই বহন করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ক্রেতাদের কাছে নগদ জমানো টাকা কম থাকায় তারা বিক্রেতার কাছ থেকে ছাড় বা ‘ক্রেডিট’ আশা করেন। তাই আপনি যদি সম্পূর্ণ নতুন বা ত্রুটিহীন বাড়ি না কেনেন, তবে ক্লোজিংয়ের টাকার বাইরেও মেরামতের জন্য একটি আলাদা ফান্ড বা রিজার্ভ রাখুন।
৪. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়ার সময় থেকেই রক্ষণাবেক্ষণ বা মেইনটেন্যান্সের জন্য তহবিল বরাদ্দ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। রক্ষণাবেক্ষণকে হুটহাট আসা কোনো খরচ হিসেবে না দেখে এটিকে মাসিক বাজেটের অংশ হিসেবে ভাবা উচিত।
‘ফ্যানি মে’-এর একটি নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছর বাড়ির মূল্যের ১% থেকে ৪% রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ হতে পারে। নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে এই হার কম এবং পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে বেশি হয়। একটি ৪,০০,০০০ ডলারের বাড়ির জন্য এটি বছরে প্রায় ৪,০০০ থেকে ১৬,০০০ ডলার- বা মাসে প্রায় ৩৩৫ থেকে ১,৩৩৫ ডলার। এটি কেবল নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ; কোনো বড় দুর্ঘটনা (যেমন ওয়াটার হিটার বা ডিশওয়াশার নষ্ট হওয়া) ঘটার আগের হিসাব।
৫. মালামাল স্থানান্তর বা মুভার্স ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি যে খরচের কথা ভুলে যান তা হলো মুভার্স বা মালামাল সরানোর খরচ। পেশাদার মুভার্স ভাড়া করার খরচ বাড়ির আকার, দূরত্ব এবং আসবাবপত্রের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। আপনি যদি নিজের উদ্যোগে সরাতে চান, তবুও প্যাকিং সামগ্রী এবং শেষ মুহূর্তের লজিস্টিকসের জন্য বাড়তি কিছু টাকা হাতে রাখা জরুরি।
উপসংহার: ডাউন পেমেন্টের বাইরেও বাজেট রাখুন উপরে বর্ণিত ৫টি খরচের সাধারণ মিল হলো এদের সময়। এই খরচগুলো ঠিক তখনই সামনে আসে যখন আপনার হাতে টাকার টান থাকে- অর্থাৎ অফার গৃহীত হওয়ার পর, ক্লোজিংয়ের সময় এবং মালিকানার প্রথম কয়েক মাসে।
এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় হলো আগে থেকে পরিকল্পনা করা। আপনার লেন্ডারের কাছ থেকে বিস্তারিত ‘ক্যাশ-টু-ক্লোজ’ অনুমান সংগ্রহ করুন, বিল্ডিংয়ের ফিগুলোর লিখিত তালিকা নিন এবং মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও বাসা পরিবর্তনের জন্য প্রথম বছরের একটি আলাদা রিজার্ভ ফান্ড গড়ে তুলুন।

















