ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশের ঢাকার বাসিন্দা জাহিদ হাসানকে (২৯)। তিনি অনলাইন মার্কেটপ্লেস পরিচালনা করে বিভিন্নজনকে ভুয়া পরিচয়পত্র দিতেন। এর মধ্যে আছে পাসপোর্ট, সামজিক নিরাপত্তা কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের ডিজিটাল টেমপ্লেট।
বিনিময়ে নিতেন বড় অংকের অর্থ। ডিস্ট্রিক্ট অব মন্টানা অ্যাটর্নি অফিস থেকে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অ্যাটর্নি কার্ট আলমে জানিয়েছেন, উক্ত অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মন্টানা ডিষ্ট্রিক্টে নয়টি ফেডারেল অভিযোগপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ভুয়া পরিচয়পত্র বিক্রিতে ব্যবহৃত এসব মার্কেটপ্লেসের তিনটি ডোমেইন জব্দ করার কথাও ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ছয়টি ভুয়া পরিচয়পত্র হস্তান্তরের অভিযোগ, দুটি ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহারের অভিযোগ এবং একটি সামাজিক নিরাপত্তা জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। খবরটি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রের ১ থেকে ৮ নম্বর ধারার আওতায়- ভুয়া পরিচয়পত্র হস্তান্তর বা ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদ- হতে পারে। ৯ নম্বর ধারায় উল্লিখিত সামাজিক নিরাপত্তা জালিয়াতির অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদ- হতে পারে। প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার জরিমানা এবং ৩ বছর সুপারভাইজড রিলিজ-এর বিধান রয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০২১ সাল থেকে অন্তত ২০২৫ সাল পর্যন্ত জাহিদ হাসান বাংলাদেশভিত্তিক একাধিক অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করতে এর নাম ছিল ‘টেকট্রিক’ এবং ‘ইগিফট গার্ড স্টোর বিডি’। এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি সরকার ইস্যুকৃত ভুয়া পরিচয়পত্র ও অন্যান্য নথির ডিজিটাল সংস্করণ বিক্রি ও হস্তান্তর করতেন। এর মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড এবং মন্টানা অঙ্গরাজ্যের ড্রাইভিং লাইসেন্স। এসব ভুয়া পরিচয়পত্র সাধারণত ব্যাংক, অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ডিজিটাল মুদ্রা প্ল্যাটফর্মে প্রতারণামূলক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর ক্রেতারা বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করে পণ্য কিনতে পারতেন। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের একটি টেমপ্লেট কিনতে লাগত প্রায় ১২ ডলার। সামাজিক নিরাপত্তা কার্ডের টেমপ্লেট কিনতে লাগতো ৯.৩৭ ডলার এবং মন্টানা ড্রাইভিং লাইসেন্সের টেমপ্লেট কিনতে লাগতো ১৪.০৫ ডলার।
অভিযোগ অনুযায়ী, চার বছরে ‘টেকট্রিক’-এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪০০ জনেরও বেশি গ্রাহক থেকে জাহিদ হাসান মোট ২৯ লাখ ডলারের বেশি আয় করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, ১৩ মে ২০২৫ তারিখে জাহিদ হাসান ‘টেকট্রিক’ ও ‘ই গিফটকার্ড স্টোর বিডি’-এর মাধ্যমে মন্টানার বোজম্যান শহরের এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিটকয়েনে অর্থ গ্রহণ করেন এবং ওই ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট, সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড এবং মন্টানা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভুয়া টেমপ্লেট সরবরাহ করেন বা সরবরাহের চেষ্টা করেন। তদন্তের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জাহিদ হাসানের পরিচালিত ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তিনটি ডোমেইন জব্দ করেছে। সেগুলো হলো: িি .িঃবপযঃৎববশ.পড়স,িি .িবমরভঃপধৎফংঃড়ৎবনফ.পড়স এবংিি .িরফঃবসঢ়ষ.পড়স।
বর্তমানে এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে একটি সরকারি বার্তা দেখা যাচ্ছে। এই মামলার প্রসিকিউশন পরিচালনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারি অ্যাটর্নি বেনজামিন হারগ্রোভ। তদন্তে যুক্ত ছিল এফবিআইয়ের বিলিংস ডিভিশন ও সল্ট লেক সিটি সাইবার টাস্ক ফোর্স। তারা এফবিআইয়ের আন্তর্জাতিক কার্যক্রম বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-এর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছে। উল্লেখ্য, অভিযোগপত্রে উত্থাপিত অভিযোগগুলো এখনো প্রমাণিত নয়। আইন অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হবেন।

















