একটি ফটোগ্রাফিক ইনস্টিটিউট করার স্বপ্ন আক্তার হামিদ খানের
আক্তার হামিদ খান একজন ফটোগ্রাফার। তিনি আলো এবং ছায়াকে পুঁজি করে তৈরি করেন নানা ধরনের শৈল্পিক ইমেজ। যাকে আমরা সংক্ষেপে বলতে পারি ফটোগ্রাফি। একই সঙ্গে তিনি একজন ফটোসাংবাদিকও। সম্প্রতি তিনি আবারো পুরস্কৃত হয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে। সম্প্রতি এক স্বাক্ষাতকারে জানিয়েছেন তার স্বপ্নে কথা।
নবযুগ: আপনি ফটোগ্রাফার এবং ফটোসাংবাদিক। আপনার কাছ থেকে আমারা জানতে চাই ফটোগ্রাফি আসলে কী?
আহাখা: আমি মনে করি, ফটোগ্রাফি মানে হচ্ছে লাইট অ্যান্ড শেডোকে কাজে লাগিয়ে ইমেজ তৈরি করা। আগে সেই ইমেজটা ক্রিয়েট হতো কেমিক্যাল এর উপর এখন সেটা হয় ইলেক্ট্রনিক্যালি, ডিজিটালি, ইমেজ সেন্সর ব্যবহার এর মাধ্যমে। ফটোগ্রাফি শব্দটা এসেছে গ্রীক শব্দ ‘ফোজ’ এবং ‘গ্রাফোস’ থেকে, গ্রীক ভাষায় যার অর্থ হলো আলো দিয়ে ছবি আঁকা।
নবযুগ: আপনার ফটোগ্রাফির বিশেষত্ব কী?
আহাখা: আমি সাধারানত আমার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে জীবন এবং প্রকৃতী’কে ধরার চেষ্টা করি। লাইফ অ্যান্ড ন্যাচার। আমার ছবিতে মানুষ, প্রাণী বা জীবন না থাকলে আমার ভালো লাগে না। প্রকৃতিও আমাকে খুব টানে।
নবযুগ: এটা কি আপনার পেশা নাকি শখ?
আহাখা: আগে এটা আমার শখ ছিল, নেশা ছিল, যত দিন যাচ্ছে ততই আমার পেশা হয়ে উঠছে। বলতে পারেন নেশা থেকে পেশা।
নবযুগ: আপনার পেশা কী?
আহাখা: আমার পেশা আগে অন্য কিছু হলেও এখন আমার পেশা এবং নেশা শুধুই ফটোগ্রাফি।
নবযুগ: এত শখ থাকতে আপনি কেন ফটোগ্রাফি বেছে নিলেন?
আহাখা: ফটোগ্রাফি আমার শখ কারন আমি দেখেছি একমাত্র ফটোগ্রাফিই মানুষকে একসঙ্গে অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয়। একটা ফটোগ্রাফ একটা মানুষকে একই সঙ্গে মানুষের কথা মনে করিয়ে দেয়, স্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়, সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, কিছু অনুভুতির কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই আমি মনে করি অনেক কথা বলার চাইতে একটা ফটোগ্রাফ অনেক বেশি শক্তিশালী। একটা ছবি অনেক কিছু বলে দিতে পারে। একটা ছবি অনেক মানুষকে আন্দোলিত করতে পারে। একটা ছবি অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে পারে।
নবযুগ: ফটোগ্রাফির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসলে কী কী?
আহাখা: তিনটা জিনিস ফটোগ্রাফির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, এক, লাইট। লাইট ছাড়া ফটোগ্রাফি হবে না। দুই, সাবজেক্ট। যেকোনো ফটোগ্রাফির জন্য আগে সাবজেক্ট দরকার। তারপর দরকার কম্পোজিশন। কম্পোজিশন ছাড়া ফটোগ্রাফি হয় না। কম্পোজিশন ছাড়া সেটা সাধারন ছবি থেকে যায়। ছবি এবং ফটোগ্রাফ এর মধ্যে পার্থক্যই হলো কম্পোজিশন। জোসেফ নিসাফোর নিয়েপস (ঔড়ংবঢ়য ঘরপল্কঢ়যড়ৎব ঘরল্কঢ়পব) ছিনে পৃথিবীর প্রথম ফটোগ্রাফার। তিনি ছিলেন একজন ফ্র্যাঞ্চ সায়েন্টিস্ট। ১৮২৬ সালে তিনি জানালা দিয়ে বাইরের ছবি তোলেন সেটাই ছিল পৃথিবীর প্রথম ছবি। তখন থেকেই ডকুমেন্টেশনের নতুন অধ্যায় উম্মুক্ত হয়। তখন ফটোগ্রাফিকে বলা হতে “যবষরড়মৎধঢ়যু”। ১৯৫৭ এ এসে সেটা ডিজিটাল হয়।
নবযুগ: কী ধরনের ছবি আপনার প্রিয়?
আহাখা: ছবির মধ্যে যেকোনো একটা লেয়ার ডিফোকাসড হলে আমার খুব ভালো লাগে।
নবযুগ: আপনি একজন ফটোসাংবাদিকও। আবার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আপনার ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন আপনার কেমন লাগে?
আহাখা: আমার প্রদর্শনী খুব বড় ভাবে যে হয়েছে সেটা আমি মনে করি না। তবে আমার পুরস্কারের সংখ্যা কম না। কিছু দিন আগে আমেরিকাতে আমার একটা প্রদর্শনী হয় সেটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। আর আমি মূলত এখন প্রিন্টের চাইতে ওয়েব ভার্সনে বেশি কাজ করি। রেডিও ত্রিতাল বাংলা ইউএসএর হয়ে আমি কাজ করছি বেশ কিছু দিন। তাদের ওয়েব নিউজের জন্য আমি বেশি কাজ করেছি। আমি মনে করি সাংবাদিকতার জন্য অনেকগুলো লেখার চাইতে একটা ছবিই অনেক সময় যথেষ্ট।
নবযুগ: আপনার সামনের পরিকল্পনা কী?
আহাখা: আমার সামনের পরিকল্পনা একটা ফটোগ্রাফি ইন্সটিটিউট করা, যেখানে অনেক তরুণ তরুণী তাদের স্বপ্নের মতো কাজ করতে পারবে, ফটোগ্রাফির মাধ্যেমে তাদের পছন্দের সাবজেক্টগুলোকে তুলে আনতে পারবে। আমার আরেকটি স্বপ্ন হলো, নতুন ফটোগ্রাফারদের কাজগুলোকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরা।
আমরা চাই আপনার স্বপ্ন সফল হোক। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আহাখা: আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের পেছনের মানুষদেরও ধন্যবাদ।