শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

এক গানেই জাফরিনের বাজিমাত

নবযুগ রিপোর্ট

আপডেট: ২১:৪০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

এক গানেই জাফরিনের বাজিমাত

নিউইয়র্কে ড্রামা সার্কেলের অনুষ্ঠান গান পরিবেশন করছেন জাফরিন

‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে

ও সেতো মুখ খুলেনি

সুর শুধু সুর তুলেছে

ভাষা তো দেয় নি’। বাংলা ভাষাবাসি মানুষের মুখে মুখে থাকা গানটি গেয়ে এবার নিউইয়র্ক প্রবাসীদের সত্যিই মন ছুঁয়ে দিলেন জাফরিন আবেদীন। আনুষ্ঠানিকভাবে নিউইয়র্কের সংগীতাঙ্গনে অভিষেকের দিনই এক গানেই বাজিমাত করে দিলেন তিনি।  গত ৩১ জুলাই নিউইয়র্কের উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে উপস্থিত অসংখ্য দর্শক গান শুনে করতালি দিয়ে অভিবাদনও জানিয়েছেন জাফরিন আবেদীনকে। ড্রামা সার্কলের অনুষ্ঠানে সেদিন আলোর ঝরণার মধ্যে  ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে, ও সেতো মুখ খুলেনি, সুর শুধু সুর তুলেছে, ভাষা তো দেয় নি’ গানটি গেয়ে সুরের মুর্চ্ছনা ছড়িয়েছে বাজিমাত করে দেয় জাফরিন আবেদীন। দর্শকরা রীতিমতো তার গানে উচ্ছ্বসিত ভুলেননি এবং ভবিষ্যতে নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জাফরিন আবেদীনকে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

জাফরিন আবেদীনের জন্ম ঢাকায়। মনিজা রহমান গার্লস হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি এবং লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে  স্নাতক  (ইংরেজি) পাশ করেছেন তিনি। ইন্সপিরেসন ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি থেকে নিয়েছেন ডিপ্লোমা ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর ডিপ্লোমা।

জাফরিন আবেদীন সাপ্তাহিক নবযুগকে বলেন, ‘আমার যখন ছয়/সাত বছর বয়স তখন আব্বা জাপান থেকে প্রথম আমাকে একটা কিবোর্ড কিনে দেন। আমার এখনো মনে আছে সেই কিবোর্ডে আব্বা আমাকে একটা গান তোলা শেখান। আমার জীবনের প্রথম তোলা রবীন্দ্র সংগীত “পুরানো সেই দিনের কথা”।

তিনি বলেন, ‘ আমার বয়স যখন প্রায় আট বছর তখন আব্বা আমার জন্য হারমোনিয়াম নিয়েছিলেন। নয় বছর বয়সে আমার বাবা আমার জন্য একজন সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ দেন। আমার প্রথম সঙ্গীত শিক্ষকের নাম ছিল মিন্টু বিশ্বাস। প্রায় এক বছর তার কাছে গান শিখেছি। কিন্তু পারিবারিক কিছু কারণে বেশি দিন গান চালিয়ে যেতে পারিনি।’

জাফরিন আবেদনী বলেন, ‘আমি নিজে বাসায় হারমোনিয়াম এর সাথে আমার গানের চর্চা চালিয়ে যাই। তারপর অনেক বছর পর যখন কলেজে পড়া শেষ করি তখন ধানমন্ডির বাফাতে রবীন্দ্র সংগীতে ভর্তি হই। যখন বাফার দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থী ছিলাম তখন পড়াশোনার কারণে আমাকে বাফায় যাওয়া বন্ধ করতে হয়। আব্বা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থাকার কারণে লেখাপড়া ও গান একসাথে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে গানের প্রতি ভালোবাসার কারণে আমি সব সময় গান গাইতে চেষ্টা করে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার প্রথম স্টেজ শো করেছিলাম ২০০০ সালে ধানমন্ডির মুক্তমঞ্চে যখন বাফায় ছিলাম। সেই থেকে ঘরোয়া নানা অনুষ্ঠানে গান করেছি। এখনও সময় পেলে গান গাই। আসি গাইতে পছন্দ করি রবীন্দ্র সংগীত, বাংলা আধুনিক, হিন্দি আধুনিক।’

জাফরিন আবেদীন বলেন, ‘নিউইয়র্কের খুব পরিচিত দুই মুখ, আমাদের খুব ঘনিষ্ট পারিবারিক বন্ধু আবীর আলমগীর ও কান্তা আলমগীর প্রথমে আমাকে আবার গান শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেন। আমার স্বামী তানভীর আজহার এবং আবীর ভাই ও কান্তার অনুপ্রেরণা নিয়ে আমি আবার গান গাইতে শুরু করি ২০২১ সালে “ড্রামা সার্কল” এর পহেলা বৈশাখের একটি লাইভ প্রোগ্রামে। রবীন্দ্র সংগীত “তোমার খোলা হাওয়া” গান দিয়ে আমার নিউইয়র্কে গানের যাত্রা শুরু হয়। সেখান থেকেই “ড্রামা সার্কল” টির সাথে যুক্ত হই। আর সবর্শেষ গত ৩১ জুলাই কুইন্স প্যালেসে ড্রামা সার্কল এর স্টেজেই গান গাওয়ার সুযোগ হয়। আর তখনি গেয়েছি, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে, ও সেতো মুখ খুলেনি, সুর শুধু সুর তুলেছে, ভাষা তো দেয় নি’। গানটি শেষ করার পর অনেক দর্শক আমাকে বলেছেন, আমি সত্যিই তাদের মুন ছুঁয়ে দিয়েছি। সেদিন মঞ্চ থেকে নেমে দর্শকদের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি তাতে গানকে ভবিষ্যত সঙ্গী করার প্রত্যয় নিয়েছি। পরিচিতজন এতোদিন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একনিষ্টভাবে যুক্ত কিংবা বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার অনরোধ করলেও তা এড়িয়ে গেছি বাস্তবতার কারণে। কিন্তু ভাবছি এখন থেকে মঞ্চে নিয়মিত গাইবো। কারণ দর্শকরা আমাকে যে ভালোবাসা সেদিন দেখিয়েছে তা আমাকে সত্যিই দারুণ অনুপ্রেরণা জোগাবে। ডাক পেলে বা সুযোগ পেলে এখন থেকে নিয়মিত মঞ্চে গাইবো।

জাফরিন আবেদীন বলেন, ‘আমার স্বামী তানভীর আজহার, একজন সাংবাদিক এবং আমাদের দুটি সন্তান, একটি মেয়ে জায়ানা আজহার ও একটি ছেলে জায়ান আজহার।’

৩১ জুলাইয়ের কুইন্স প্যালেসের মঞ্চে ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে, ও সেতো মুখ খুলেনি, সুর শুধু সুর তুলেছে, ভাষা তো দেয় নি’ গান শুনে দর্শক রফিকুল ইসলাম নবযুগকে বলেন, জাফরিন যে এত সুন্দর গান করে জানতাম না। তিনি সত্যিই আমাদের সবার মুন ছুঁয়ে দিয়েছেন। অপর দর্শক জুলিয়া মার্সিয়া বলেন, ‘জাফরিনের গানে আমি রীতিমতো মুগ্ধ। নিউইয়র্কের সংস্কৃতিক অঙ্গনে জাফরিন নিয়মিত হলে আমরা অনেক ভালো ভালো গান শুনতে পারবো তার দরদী এবং মায়াবী কন্ঠে।’

শেয়ার করুন: