ছবি: সংগৃহীত
গত ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন উত্তর আমেরিকা ইনকের উদ্যোগে এবং সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় নিউইয়র্কে “শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস” উপলক্ষে এক স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রোববার সন্ধ্যায় কুইন্স প্যালেস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সেই সুরে সুরে মিলনায়তন যেন মুহূর্তেই ফিরে যায় একাত্তরের উত্তাল দিনে। এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা পর্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তারা আত্মত্যাগের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেন, যা একটি জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি জুগিয়েছে। বক্তারা বলেন, প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস ও চেতনা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাবিনা শারমিন নিহার, সাধারণ সম্পাদক মীর কাদের রাসেল এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক এহসান জুয়েল -এর উপস্থাপনায়, অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এ কে আখতার হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আরা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক তামান্না শবনম পাপড়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফতেহ নুর বাবু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এস আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সরকার এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুর রহমান।
এছাড়া বিশেষ বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোল্লা মনিরুজ্জামান ও স্বপন বড়ুয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আকতার আহমেদ রাশা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা মুহাম্মদ আবদুল আজিজ নঈমী, সাপ্তাহিক বাঙালি পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান হোসাইন কবির।
অনুষ্ঠানের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্বে মুক্তিযুদ্ধোত্তর সম্মর্ধনা জানানো হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার ও গীতিকার তাজুল ইমাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবু চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা খুরশিদ আনোয়ার বাবলু এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হাসান কিসলুকে। তাঁদের উপস্থিতি ও সম্মাননা প্রদান পুরো মিলনায়তনে গভীর শ্রদ্ধা ও নীরব গর্বের আবহ সৃষ্টি করে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে মুক্তনীড় ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন করেন ম্যাগাজিনটির প্রধান সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান বকুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি সাবিনা শারমিন নিহার, সাধারণ সম্পাদক মীর কাদের রাসেল এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক এহসান জুয়েল।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহযোগিতা করেন ফারজিন রাকীবা। প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহাম্মদ আবদুল আজিজ নঈমী ও আকতার আহমেদ রাশা। নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে আয়োজিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় গানে অংশ নেন আলভান চৌধুরী, জারিন মাইশা ও রুদ্রনীল দাশ রুপাই এবং নৃত্য পরিবেশন করেন ফাসির কবির কাব্য, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সবশেষে মহিতোষ তালুকদার তাপসের পরিচালনায় পরিবেশিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ও দেশাত্মবোধক সঙ্গীত নিয়ে বিশেষ পরিবেশনা “দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা”। তবলায় সঙ্গত করেন স্বপন দত্ত এবং মন্দিরায় শহীদ উদ্দিন। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন কে সি মঙ এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সায়েম।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত আসে যখন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার ও গীতিকার তাজুল ইমাম পরিবেশন করেন তাঁর কথা-কবিতা ও গান “মন বিবাগী ভাব তরঙ্গে”। তবলায় সঙ্গত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবু চৌধুরী। এ পরিবেশনা যেন সময়কে থামিয়ে দিয়ে দর্শকদের নিয়ে যায় স্মৃতি, আত্মত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের গভীর আবেশে।
সবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাবিনা শারমিন নিহারের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। আয়োজকরা জানান, প্রবাসে বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে ভবিষ্যতেও এ ধরনের স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
তুষারপাত সত্ত্বেও মিলনায়তন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। প্রবাসজীবনের ব্যস্ততা, দূরত্ব ও প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি প্রমাণ করে যে ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের টান কখনো দুর্বল হয় না। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় এক গভীর আবেগঘন, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও স্মরণীয় আয়োজনে।

















