 
										ছবি: সংগৃহীত
আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র যারা চালান তাদের অসততা, অশিক্ষা, অনীহা, পক্ষপাতদুষ্টতা, আনাড়িপনা, আর লাগামহীন দুর্নীতির বলি যে কেউ, যেকোনো সময়, যে কোনোভাবে হতে পারেন। সুতরাং ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সবাই এক মহা আতঙ্ক সঙ্গী করেই যেন প্রতি প্রভাতে বের হন। আর যে ঘরে ফিরতে পারবেন, সে নিশ্চয়তা রাষ্ট্র দেয় না বা দিতে ব্যর্থ।
প্রতিদিনই এমনিভাবে রাষ্ট্র কর্তৃক খুনের ঘটনা আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয় কিংবা সহ্য করতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় না, এমন একটি দিনও কি পার করতে পারে  আমার প্রিয় বাংলাদেশ? মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রামে রাস্তায় নামে কিন্তু বেঁচে আর ফেরে না! এমনি করেই প্রতিনিয়ত হত্যাযজ্ঞ চলে প্রকাশ্যে। আর হত্যাকারী রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের সমস্ত অব্যবস্থা। রাষ্ট্র আগুনে পোড়ায়, পানিতে মারে, সড়ক দুর্ঘটনার নামে প্রতিদিন মানুষ হত্যা করে। বহু বছর ধরে হত্যার এই নির্বিচার উৎসব চলছে তো চলছেই। একটি নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ আসাদ এবং তার পরিবার কি জানতো মেট্রোরেলের বেয়ারিং প্যাড তার জীবন এভাবে কেড়ে নেবে? এটা কোন কথা! এমন মৃত্যু কেন প্রতিদিন সহ্য করতে হবে? এর কোনো প্রতিকার হবে না? নাকি এসব হত্যাকে নিছক দুর্ঘটনা, দুর্ভাগ্য বলে হালালি কান্ড চলতেই থাকবে?
উন্নত বিশ্বের সব দেশের মতো এই নিউইয়র্ক শহরে শত বছরের পুরনো ট্রেন ব্যবস্থা চালু আছে, পাতালে ও মাটির উপরে। যার উপর দিয়ে এবং নিচে দিয়ে মানুষ গাড়ি সবই চলছে চব্বিশ ঘন্টা। বলাবাহুল্য বাংলাদেশের মেট্রো রেলের যে দূরত্ব ও সংখ্যা, এখানে তার শতগুণ বেশি ট্রেন চলে। তারপরও এমন অপঘাতে মৃত্যু সহসা শোনা যায় না। অতি সামান্য যা ঘটে ওগুলোকে বরং দুর্ঘটনা বলা চলে। এখানে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা দুর্নীতিমুক্ত বলা চলে। সড়ক, আকাশপথ ও জলপথের বিষয়েও এরা সবকিছু খুব শক্ত হাতে ব্যবস্থাপনা করে। মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম ও সচল রাখতে এরা মরিয়া বলেই মানুষ এখানে অকাতরে মরে না। রাষ্ট্রের যে কারো অবহেলা ও অসততায় এমন কিছু ঘটলে কেউই রেহাই পায় না। জবাবদিহিতার বাইরে কেউ না এখানে। অনেকে হয়তো ভাবছেন ঢাকায় মেট্রো রেলের নিচে পড়ে যে হতভাগার মৃত্যু হল বা রাস্তায় যারা মরে, আগুনে যারা পুড়ে ছাই হয়, এদের হত্যাকারী রাষ্ট্র কি করে হয়? উত্তর সোজা রাষ্ট্রের অনিয়ম, উশৃংখলতা, দুর্নীতি, প্রতিদিন এত এত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাই রাষ্ট্রই এখানে হত্যাকারী। আসুন একে-ওকে দায়ী না করি। এ আমল সে আমল না বলে যে যার জায়গা থেকে শোধরাযই বা পাল্টাই। তবেই যদি রাষ্ট্র পাল্টায়। তবেই যদি সরকার ও রাজনীতি পাল্টায়। না হলে কিন্তু পাল্টাবে না ভাগ্য। পরিত্রাণ পাবে না গোটা জাতি এবং পরিত্রাণ পাবনা আমরা কেউই।
 লেখক: অভিনেতা। 
 
 
				
















