
এখন যুদ্ধ হবে ভালোবাসা আর দেশপ্রেমের: ড. জাফর মাহমুদ
বাংলাদেশি শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐহিত্য সংরক্ষণের প্রত্যয় নিয়ে নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে দু’দিনব্যাপী পঞ্চম বাংলাদেশ সম্মেলন। শনি ও রোববারের ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। সম্মেলনে তিনি বলেন, এখন বিশ্বায়নের যুগ। দূরে বসেও আপন হওয়ার যুগ। এই যুগে কোনো বিভক্তি নয়, চাই ঐক্য। এখন যুদ্ধ হবে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বাংলাদেশ সম্মেলনের আয়োজক আলমগীর খান আলমের সভাপতিত্বে দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী পবন দাস বাউল ও তার দল। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সেলিম চৌধুরী, প্রতীক হাসানসহ নিউইয়র্কে বসবাসকারী বিশিষ্ট বাংলাদেশি শিল্পীরা।
প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে ড. আবু জাফর মাহমুদ আরো বলেন, আমেরিকার বুকে বাংলাদেশের নামে এই সম্মেলন আমাকে নয় শুধু গোটা বাংলাদেশি সমাজ ও আমাদের নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। এর আয়োজকরা যেভাবে একতার ঢেউ তুলে চলেছে আমি তাকে স্বাগত জানাই। যখন আমেরিকায় বাংলাদেশিদের বিভক্ত রূপ দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন স্থানে ফোবানা’র ছয়টি অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাদের ভাই ও বন্ধুরা, তারাও আমাদের আপনজন, এভাবে বাংলাদেশের বিভক্ত রূপ দেখিয়ে কী আনন্দ পেয়েছেন আমি জানি না। যেভাবে রাজনীতিতে আমাদের বিভক্ত করা হয়, এক গ্রুপ দিয়ে আরেক গ্রুপকে হত্যা করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়, সেভাবেই আমরা বিভক্ত হয়ে পড়ছি। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সম্মেলন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তার অধিনায়কত্বে যুদ্ধ করে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলাম। অথচ যুদ্ধের রাজনীতিতে তাকে হারিয়ে দেয়া হয়। আমরা হেরে যাই।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আগরতলা থেকে হেলিকপ্টার যোগে যখন কুমিল্লায় গিয়ে ভারতীয় জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেন, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তাকে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত করা হয় ও সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। এটা হচ্ছে যুদ্ধের রাজনীতি। এই যুদ্ধে আমরা হেরে গেলাম। আমরা আর আমাদের জেনারেলকে পাইনি। তিনি বলেন, জেনারেল আপনি নেই, আমি আবু জাফর মাহমুদ এখন জেনারেল। আপনার নেতৃত্বের শক্তি ধারণ করি। আমরা আগামীর যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের চেয়ারম্যান ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী নুরুল আজিম, সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এমডি আব্দুর দিলীপ এবং সদস্য সচিব ও শোটাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রিয়া ডান্স একাডেমির সৌজন্যে নৃত্য পরিবেশন করেন প্রবাসে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন পবন দাস বাউল, কণ্ঠশিল্পী প্রমি তাজ, রায়হান তাজ, সেলিম ইব্রাহীম, নীলিমা শশী, চন্দ্রা রায়, শামীম সিদ্দিকী, শাহ মাহবুব, শারিন সুলতানা, বাঁধন ও আফতাব জনি।
দ্বিতীয় দিন কাব্য জলসার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে ও বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত কবি কামাল চৌধুরী। দ্বিতীয় দিন সঙ্গীত পরিবেশন করেন উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী ড. কামরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান বকুল, ত্রিনিয়া হাসান, দীপ্তি , মিতু ও কৃষ্ণা তিথি।
আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও মেয়র এরিক এডামস এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান, শাহা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিও শাহা জে চৌধুরী ও বাংলাদেশ সম্মেলনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান সেলিম এবং লস এঞ্জেলসের প্রিয় মুখ মমিনুল হক বাচ্চু।