মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

হামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও স্থাপনায় 

ধানমন্ডি ৩২: জাদুঘর থেকে ধ্বংসস্তূপ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ধানমন্ডি ৩২: জাদুঘর থেকে ধ্বংসস্তূপ

ছবি: সংগৃহীত

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত বুধবার রাত ৮টা থেকে গতকাল বৃহম্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র), ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ভাঙার কাজ বন্ধ থাকলেও দিনভর ওই বাড়ি ঘিরে ছিল বিক্ষুব্ধ ও উৎসুক জনতার ভিড়।

ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গত বুধবার রাতে ধানমন্ডির ওই বাড়ি ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বুধবার রাতেই ক্রেন, এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়। রাতে যুক্ত হয় একটি বুলডোজার।


বুধবার সন্ধ্যা থেকে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের পর রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি ক্রেন আনা হয়। এরপর সেখানে আনা হয় একটি এক্সকাভেটর। মাঝরাত থেকে শুরু হয় বাড়ি ভাঙার কাজ। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে বাড়ি ভাঙার কাজে একটি বুলডোজারও যুক্ত হয়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আরেকটি এক্সকাভেটর আনা হলে আগের এক্সকাভেটর ও বুলডোজার সরিয়ে নেওয়া হয়। সর্বশেষ গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত নীল রঙের ওই এক্সকাভেটর দিয়েই ভাঙার কাজ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হচ্ছে বাড়ির পূর্ব অংশ। সকালে সেখানে হাজারখানেক বিক্ষুব্ধ ও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। তাঁদের কেউ কেউ জটলা পাকিয়ে শেখ হাসিনা ও স্বৈরাচারবিরোধী নানা স্লোগান দেন। কাউকে কাউকে নিজেদের মুঠোফোনে ভাঙা বাড়ির ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করতে দেখা গেছে।
গতকাল বৃহম্পতিবার ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভাঙার কাজ যখন চলছিল, তখন ওই বাড়ির পেছনে (উত্তর পাশে) থাকা ছয়তলা একটি ভবনেও ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ মানুষ। ওই সময় ভবন থেকে যে যাঁর মতো বইপত্রের পাশাপাশি স্টিল, রড, লোহা ও কাঠের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে থাকেন। কেউ কেউ শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রকাশিত বইপত্র আগুনে পুড়িয়ে দেন। সকাল ১০টার দিকে স্টিল ও লোহার কাঠামো ভবন থেকে ভেঙে ভেঙে কয়েকজনকে নিচে ফেলতে দেখা যায়। নিচে থাকা কয়েকজন এগুলো রিকশায় করে অন্যত্র সরিয়ে নেন। তাঁদের অনেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ।
আল আমিন নামের এক ব্যক্তি লোহার কিছু কাঠামো নিচ্ছিলেন। এসব নিয়ে কী করবেন, জানতে চাইলে বলেন, ‘বিক্রি করে দিমু। সেই টাকায় ভালোমন্দ খামু। মুরগি পাইলে মুরগি, গরুর মাংস পাইলে গরুর মাংস কিনে খামু। এ ছাড়া আর কিছুই না।’
সকাল ১০টার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়ির সামনের একটি নারকেলগাছ উপড়ে ফেলা হয়। তখন সেখানে উপস্থিত লোকজনের অনেকেই গাছ থেকে ডাব ছিঁড়তে হুড়োহুড়ি করেন। এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ থাকলেও দুপুরের দিকে রিকশায় করে সেখানে মাইক নেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা ওই মাইকে স্বৈরাচারবিরোধী নানা স্লোগান দেন। স্লোগানের ফাঁকে ফাঁকে কেউ কেউ বক্তব্যও দেন।
সুধা সদনের চিত্র: ধানমন্ডি-৫ এ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ‘নিরাপত্তা না থাকায়’ সেই আগুন নেভাতে যায়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল সকালে ভবনটি থেকে যে যেভাবে পারে, জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকেও সেখানে দেখা যায়নি।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে ভবনের দোতলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। নিচতলার কক্ষের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তোশক, লেপ এসব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কাচের টুকরা পড়ে আছে অনেক স্থানে। বিভিন্ন তলার জানালার কাচ পড়ে যাচ্ছে। বাড়িটির বিভিন্ন স্থানে বই পড়ে আছে। অনেক বই পুড়ে গেছে। বাড়িটির সামনে ফ্রিজ, খাট, সোফাসহ নানা সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নিচতলা থেকে চারতলার বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে আগুন ও ভাঙচুরের চিহ্ন দেখা গেছে। কোথাও কোথাও টাইলস খুলে ফেলা হয়েছে। পোড়া গন্ধ চারদিকে।
ওই এলাকায় দায়িত্বরত ধানমন্ডি সোসাইটির নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার পর ১০-১২ জন এসে সুধা সদনে আগুন দেন। আগুন ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লোকেরা এসে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আশপাশের ভবনের বাসিন্দারা এসে পানি দিয়ে নিচতলার আগুন কিছুটা কমিয়েছেন।

শেয়ার করুন: