শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ

পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামছে আওয়ামী লীগ, চ্যালেঞ্জ বিএনপির

মেসবাহ শিমুল, ঢাকা অফিস 

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পূর্ণ শক্তি নিয়ে নামছে আওয়ামী লীগ, চ্যালেঞ্জ বিএনপির

ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার রাজনীতির মাঠে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিএনপির দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচীর পর এবার সরব হয়েছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ। আজ শুক্রবার রাজধানীতে সর্বকালের বৃহত ছাত্র সমাবেশের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ। এর আগে পুরো আগস্ট মাস জুড়ে ঢাকাসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।

এদিকে আজ সেপ্টেম্বর ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপিও সারাদেশে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। সরকার পতনের এক দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করলেও চলতি মাসের মধ্যেই আরেকটি মহাসমাবেশ করার কথা ভাবছে বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত রাজনীতির বাইরের খেলায় দেশে সরকার পরিবর্তনের একটি গঞ্জন চালু থাকলেও বিএনপি তাদের মাঠের শক্তিকে ধরে রাখতে চাইছে। তাই তৃলমূলের কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ঢাকায় আরেকটি বৃহত গণসমাবেশকেই বেছে নিয়েছে দলটি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আজ সেপ্টেম্বর ৪৬ বছরে পা রাখছে বিএনপি। প্রতিষ্ঠার পর্যায়ে এসে দলটির সামনে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই বলে দলটির নেতারা বলেছেন। বিশেষ করে বিগত দেড় দশক ধরে সরকারের জুলুম-নির্যাতনে দলটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন সবচেয়ে বেশি উজ্জীবীত। সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে দলের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে মূলত তৃণমূলই। তাই হাইকমান্ডও তৃণমূলের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন করছে।

সূত্র জানায়, সরকারের পদত্যাগ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনেরশেষ ধাপেনামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এই আন্দোলন শুরুর পরিকল্পনা করছে দলটি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। তবে গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির তিক্ত অভিজ্ঞতায়সেই আন্দোলনজমানোই এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, দলটির অনেক নেতার অভিমত, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো নরম কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেওশক্ত কর্মসূচিতে তাদের সেভাবে পাওয়া যায় না। এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে হাইকমান্ডকে। যদিও অবস্থান কর্মসূচিরব্যর্থতাকাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে তাৎক্ষণিক কিছু সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় দল। এর ইতিবাচক ফলও পেতে শুরু করেছে বলে দাবি নেতাদের। বিএনপি প্রত্যাশা করছে, আন্দোলনে দাবি আদায়ের মধ্য দিয়ে জনগণের রাজনৈতিক ভাগ্য বদলানোর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এবার আন্দোলনে জেতাটাই একমাত্র লক্ষ্য। কারণ, এবার বিএনপিকে ছাড়া সরকার যদি নির্বাচন করতে পারে, তাহলে দলটি আরো সংকটে পড়তে পারে। বিষয়টি বিএনপির  নেতৃত্বও বিবেচনায় নিচ্ছে বলে দলটির নেতাদের অনেকে বলছেন। তাই আগামী দিনে আন্দোলন সফল করাই বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য . আব্দুল মঈন খান বলেন, রাজনীতি এমন একটি জিনিস যেখানে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ থাকে। বিএনপি গত ৪৫ বছর ধরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই রাজনীতি করে এসেছে। আজকে যে চ্যালেঞ্জ সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জটি ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চ্যালেঞ্জ। কাজেই আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য শান্তিপূর্ণ এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করে যাচ্ছি।

এদিকে বিএনপির সরকার বিরোধী কর্মসূচী পথ হারিয়েছে এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, অতীতের মতোই বিএনপির সরকার পতনের স্বপ্ন দিবা স্বপ্নে পরিণত হবে। আওয়ামী লীগ এবারও জনগণের ভোটে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে সরকার গঠন করবে। সাংগঠনিক শক্তিতে এগিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক শক্তির ওপর ভর করে দেয়া বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচী জনগণের সমর্থণ না পেয়ে রাজপথেই মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে। অচিরেই তাদের আন্দোলনের দাফন হবে। আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামলে বিএনপি পালাবার পথ খুঁজে পাবে না বলেও মন্তব্য করছেন দলটির অনেক নেতা।

শেয়ার করুন: