
ছবি: সংগৃহীত
৬টি মার্কিন শহরে নগদ ক্রেতারাই আবাসন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মর্টগেজ (বন্ধকী) সুদের হার ৬ শতাংশের উপরে স্থির থাকায় পুরোপুরি নগদ প্রস্তাবগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় থাকছে। বিশেষ করে বাজারের দুটি বিপরীত প্রান্তে তথা সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং বিলাসবহুল সেগমেন্টে নগদের রাজত্ব চলছে।
রিয়েলটরডটকমের নগদ লেনদেনের নতুন রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে সারা দেশে বিক্রি হওয়া সব বাড়ির প্রায় এক তৃতীয়াংশই সম্পূর্ণ নগদে পরিশোধ করা হয়েছিল, যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ০.৬ শতাংশ কম।
কোভিড-১৯ মহামারির চরম সময়ে নগদ লেনদেন সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল, যখন ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে ছিল এবং অনেক ক্রেতা বিডিং যুদ্ধ জেতার উপায় হিসাবে পুরো নগদ অফার দিতে বাধ্য হয়েছিল।
কারণ হলো, নগদ ক্রেতারা সাধারণত দ্রুত চুক্তির টেবিলে আসতে পারে এবং মূল্যায়ণ বা অর্থায়ন সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা এড়িয়ে যেতে পারে—যা বিক্রেতাদের জন্য দ্রুততম সময়ে চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব।
পাশাপাশি, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মর্টগেজ হার বাড়তে শুরু করলে, ধনী ক্রেতাদের জন্য উচ্চ ধার নেওয়ার খরচ এড়ানোর একটি উপায় হিসাবে নগদ অফারগুলো আবির্ভূত হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, অঞ্চল ভেদে সম্পূর্ণ নগদ লেনদেন নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় এবং এটি দ্বিতীয়-বাড়ি এবং কম দামের মেট্রোগুলোতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, যেখানে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই নগদে কেনেন।
রিয়েলটরডটকমের জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক গবেষণা বিশ্লেষক হান্না জোনস বলেন, ‘তাদের এই অবিচল উপস্থিতি আবাসন চাহিদাকে চালনা করা সম্পদের ঘনত্ব এবং আজকের উচ্চ-ব্যয়ের আবাসন বাজারে মর্টগেজ-নির্ভর ক্রেতাদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ—উভয়কেই তুলে ধরে।’
আজকের দিনে সম্পূর্ণ নগদ লেনদেনগুলো ২০০০ সালের মাঝামাঝি হওয়া মহামন্দার পরের বছরগুলোর মতো দেশব্যাপী জনপ্রিয় না হলেও অর্থায়ন করা অফার এবং নগদ অফারের মধ্যে পছন্দ থাকলে অনেক বিক্রেতা এখনো নগদ ক্রেতাকেই বেছে নেন।
টারবো টেন্যান্টের মার্কেটিং ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন স্টিভেন্স রিয়েলটরডটকমকে জানান, মর্টগেজ পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা অবস্থায় একবার তিনি এক সম্পূর্ণ নগদ ক্রেতার কাছে হেরে গিয়েছিলেন।
২০২৪ সালের বাড়ির বিক্রি নিয়ে রিয়েলটরডটকমের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই বছর যারা সম্পূর্ণ নগদে পেমেন্ট করেছিল, সেই বিনিয়োগকারীদের অংশীদারিত্ব সামগ্রিক নগদ বিক্রির অংশের প্রায় দ্বিগুণ ছিল।
দ্বিতীয় বাড়ি খুঁজছেন এমন ক্রেতারা, বিশেষত জনপ্রিয় উপকূলীয় অবকাশ যাপনের বাজারগুলোতে, প্রায়ই সম্পত্তিগুলো সরাসরি ক্রয় করে থাকেন।
ধনী এবং বয়স্ক ক্রেতারা তাদের নি¤œ-আয়ের, তরুণ সমকক্ষদের তুলনায় নগদ অফার দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
জোনসের মতে, এর কারণ হলো ধনী এবং বয়স্ক গৃহ ক্রেতারা দীর্ঘদিনের বাড়ির মালিক হন এবং তাদের হাতে সঞ্চিত ইকুইটি থাকে যা তারা মর্টগেজ না নিয়েই পরবর্তী বাড়ি কেনার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
সম্পূর্ণ নগদ বাড়ির ক্রয় বাজারের দুটি বিপরীত প্রান্তে কেন্দ্রীভূত। ১,০০,০০০ ডলারের নিচে বিক্রি হওয়া সম্পত্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নগদে পরিশোধ করা হয়েছে, যেখানে ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি দামের ৪০% এরও বেশি সম্পত্তি ছিল নগদ লেনদেন।
বাজারের উচ্চ প্রান্তে, ২ মিলিয়ন থেকে ৫ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে দামের অর্ধেকেরও বেশি বাড়ি নগদে বিক্রি হয়েছে, অন্যদিকে ৫ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়ন ডলারের সীমার ৬০ শতাংশেরও বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ নগদ লেনদেন ছিল।
বিশ্লেষকের মতে, ‘এটি দাম এবং নগদ লেনদেনের মধ্যে একটি ইউ-আকৃতির সম্পর্ক তৈরি করে, যা উচ্চ প্রান্তে সম্পদ-চালিত কেনাকাটা এবং নি¤œ প্রান্তে ক্রেডিট/আয় বাধা, অর্থায়নের অভাব বা বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি নির্দেশ করে।’
সম্পূর্ণ নগদ লেনদেনের ভৌগোলিক দিকটি দেখলে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থায়নবিহীন বিক্রির অংশীদারিত্ব নিয়ে ছয়টি মেট্রো শহর বিশেষভাবে নজর কেড়েছে।
একটি জনপ্রিয় বিলাসবহুল এবং দ্বিতীয়-বাড়ির বাজার হিসাবে, মিয়ামি ৪৩ শতাংম সম্পূর্ণ নগদ লেনদেন নিয়ে দেশের নেতৃত্ব দিয়েছে।