রোববার, ০৫ মে ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

রাজনৈতিক শিষ্টাচার

কাজী জহিরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১৫ জুলাই ২০২৩

রাজনৈতিক  শিষ্টাচার

ফাইল ছবি

- আচ্ছা, তুমি কি সবই লিখে ফেলো নাকি?

- বুঝলাম না। সবই লিখি মানে?

- এই যে নতুন একটা লেখা শুরু করেছ, সংলাপ, সারাদিন যা বলি, সবই লেখো?

- আরে ধুর সব লিখলে তোমার কী অবস্থা হবে সেটা কী আমি বুঝি না?

- আহা, খারাপ কথাগুলো যেন শুধু আমি একাই বলি, নিজেরগুলো তো আর লিখবে না, নিজেকে দেবতা বানিয়ে রাখবে আর আমাকে বানাবে ভিলেন। আজকাল তোমার সাথে কথা বলতে ভয়ই হয়, কোন কথা আবার লিখে ফেলো।

- মনে হয় এতোদিনে একটা কাজের কাজ করতে পেরেছি। স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণের, স্যরি স্ত্রীকে না, স্ত্রীর স্বাধীন জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণের একটা ব্যবস্থা করা গেছে।

- (চুপ)

- কী ব্যাপার কিছু বলছো না যে।

- একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম, থাক আর বললাম না।

- ঠিক আছে, ওটা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দাও। চলো একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলি। তোমার কী মনে হয়, নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসে ওই কথাটা কেন বললেন?

- সত্যাগ্রহ?

- হ্যাঁ, এটা যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাসযোগ্য নয় যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের বা ভারতবাসীর সমর্থন আদায়ের জন্য কাউকে অনশন করতে হয়েছিল।

- ভারত সরকার তো প্রথম থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছিল, তাহলে কাকে কী বিষয়ে রাজী করানোর জন্য মোদি অনশন করেছেন, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। এখন তো প্রশ্ন উঠতে পারে মোদি হয়ত সমর্থন দানে ভারতকে নিবৃত্ত করার জন্য অনশনে বসেছিলেন?

- অথবা মোদির রাজ্য সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। যদি তা হয়ও, তাতে কী এসে যায় যখন কেন্দ্র সমর্থন দিয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাদের পাশে ছিল।

- বিষয়টি সত্যিই হাস্যকর। মোদিকে নিয়ে ট্রল হচ্ছে খুব তাই না?

- হ্যাঁ, দেখেছো তুমি?

- আমি তো ফেইসবুকে নেই, তবে অনেকেই মেসেঞ্জারে ছবি পাঠায়।  দেখলাম আগুন আবিস্কার থেকে শুরু করে সব বড় বড় আবিস্কারই  মোদি করেছেন।

- হা হা হা, আমিও দেখেছি ওটা। শোনো মোদির এই অসত্য ভাষণ নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত খুব ভালো একটি লেখা লিখেছেন। তার রচনায় আছে, মনমোহন সিং লিখিত বিবৃতিতে এই মিথ্যাচারকে চ্যালেঞ্জ  করে বলেছেন, মোদির উচিত হবে এই মিথ্যাচারের জন্য ভারত বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

- একটা বিষয়ের আমি প্রশংসা করি, ভারতের জনগণ এবং মিডিয়া সরকার প্রধানের যে কোনো অসত্য ভাষণ প্রত্যাখ্যান করে অনায়াসেই প্রতিবাদ জানাতে পারে।

- একটি দেশে যদি গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকে তাহলেই কেবল এই পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

- তা তো বটেই, যদিও গণতন্ত্রের কারণেই কট্টরপন্থী একটি সাম্প্রদায়িক দল ক্ষমতায় আসতে পেরেছে এবং দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আছে।

- এখন ভারতের অধিকাংশ মানুষ যদি সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ধারণ করে, সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই তারা ক্ষমতায় দেখতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। সাংবিধানিকভবে ভারত একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বটে কিন্তু জনসমর্থনের দিক থেকে কট্টর সাম্প্রদায়িক দেশ।

- এটা খুব দুঃখজনক।

- এবং এটা সাময়িক। এখানেও কী শাদা আধিপত্যের দোহাই দিয়ে একজন বাজে লোক ক্ষমতায় এসেছিল না, কিন্তু মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে তাকে বিদায় করে দিয়েছে।

- ভারতের জনগণ তো তাকে দুবার নির্বাচিত করলো।

- যদি আবারও করে তাহলে বুঝতে হবে ভারতবাসী মূলত সাম্প্রদায়িকতারই জয়গান করে।

- এটা পৃথিবীর জন্য একটি মন্দ দৃষ্টান্ত হবে।

- সুখরঞ্জনের লেখাটি মোদির সফর প্রসঙ্গে হলেও বেশ কিছু শিক্ষনীয় বিষয় আছে। মনমোহন সিং বলেছেন, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে মোদি দম্ভ করে বলেছিলেন গান্ধী পরিবারকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলবেন। তিনি মোদিকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। আরো বেশ কিছু বিষয় আছে এই রচনাটিতে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা  ঘোষণা করলে বিরোধী শিবির থেকে অটলবিহারি বাজপেয়ী বলেছিলেন, আপনি দেবী দূর্গা। আপনি এক অসাধারণ কাজ করেছেন। বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সংসদে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এই ঘটনার পর তিনি প্রথম ফোন কলটি পান বিরোধী নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে।  ফোন তুলতেই সোনিয়া গান্ধী জানতে চান, আপনি কেমন আছেনকোথায় আছেন? যখন বিরোধী নেতা বাজপেয়ী খুব অসুস্থ, রাজীব গান্ধী তখন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন। যাওয়ার আগে বাজপেয়ীকে প্রধানমন্ত্রী ফোন করে বলেন, আপনি খুব অসুস্থ আপনার ভালো চিকিৎসা দরকার। চিকিৎসার জন্য আমি আপনাকে আমার সঙ্গে নিউইয়র্কে নিয়ে যাব। রাজীব গান্ধী তাকে নিউইয়র্কে এনে চিকিৎসা করান। কথাটি কিন্তু রাজীব গান্ধী গোপন  রেখেছিলেন, নিজের মহানুভবতা দেখাতে কখনোই তা প্রকাশ করেননি। মৃত্যুর পর তার স্মরণসভায় বাজপেয়ী এটি প্রকাশ করেন। সোনিয়া গান্ধী  যে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ীর কুশল জানতে  চেয়েছিলেন, এটি তিনি সে বছরই জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নীতিগতভাবে আমাদের মধ্যে যত বিভেদই থাক, আমরা ভারতবাসী হিসেবে এক এবং ঐক্যবদ্ধ। দেশের গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সার্বভৌমত্ব আমাদের সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।

- কি অসাধারণ গণতান্ত্রিক চর্চা।

- বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আচরণ এই চর্চা থেকে খানিকটা দূরে সরে যাচ্ছে যদিও কিন্তু দেশের মূল অবকাঠামোগুলোতে গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা তাকে বেশি দূরে যেতে দেবে না।

- রাজনৈতিক আলাপ থাক। এবার জোকস শোনাও। দ্য জোকস অব দ্য  ডে।

- আজ একটা মজার জোক শোনাই। বলো তো কাবাডি কেন আমাদের জাতীয় খেলা?

- কারণ এটা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি থেকে উদ্ভুত খেলা।

- একদম ঠিক বলেছ। এই খেলায় একজন লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়, অন্যরা সবাই মিলে তার পা টেনে ধরে যাতে সে কিছুতেই লক্ষ্যে পৌঁছুতে না পারে। এটাই হচ্ছে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি।

- হি হি হি...

শেয়ার করুন: