বুধবার, ০১ মে ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ভারতবর্ষের প্রথম বাঙালি মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ

জয়নাল হোসেন

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ৩ জুন ২০২৩

ভারতবর্ষের প্রথম বাঙালি মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ

ছবি: মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ (অবসরপ্রাপ্ত)


মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ, যিনি হতে পারতেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান কিংবা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তিত্ব। বাংলাভাষাভাষীদের নিকট তারকাসদৃশ্য এই জেনারেল সম্পর্কে আমরা অনেকেই তেমন কিছুই জানি না বা জানার সুযোগও পাই না। ঈর্ষার শিকার হয়ে ইতিহাস থেকে বিস্মৃত হয়ে যাওয়া মহান এই মানুষটি হচ্ছেন ভারতবর্ষের প্রথম বাঙালি মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ।

মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ ১৯০৩ সালের ১৭ই মার্চ আসামের সাংস্কৃতিক শহর জোড়হাটের এক  সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাঙালি হওয়ায় বাংলাদেশকে ভালবেসে করাচির আবাস ছেড়ে এসে ঢাকার অদূরের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কাছে বুড়িগঙ্গার তীরে নিরিবিলি পরিবেশে বাড়ি নির্মাণ করে জীবনের শেষ চৌদ্দটি বছর কাটিয়ে গেছেন তিনি।

মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদের পিতা বিচারপতি স্যার আবদুল মজিদ ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। বিচারপতি আবদুল মজিদ সিআইই ১৯১৯ সালে আসামের গভর্নরের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। ইশফাকুল মজিদের অগ্রজ এনামুল মজিদ ছিলেন একজন আইসিএস অফিসার। তাঁর বোন বেগম জোবায়দা আতাউর রহমান ছিলেন আসামের প্রাদেশিক আইন সভার (বিধানসভা) স্পিকার। ভারতের প্রখ্যাত আইনজীবী, খ্যাতিমান রাজনৈতিক সমাজকর্মী পশ্চিমবঙ্গের মেদনীপুরের জমিদার ব্রিটিশ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিচারপতি স্যার আবদুর রহীমের (১৮৫৭-১৯৫২) কন্যাকে বিয়ে করেন মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ। স্যার আবদুর রহীমের আরেক জামাতা হলেন অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসাবে খ্যাত ব্যারিস্টার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

আসামের গুয়াহাটি কটন কলেজে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করে ১৯২২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের স্যান্ডর্হাস্ট রয়েল মিলিটারি কলেজে (ঞযব জড়ুধষ গরষরঃধৎু অপধফবসু ঝধহফযঁৎংঃ ) যোগ দেন। এখানে উল্লেখ, ১৯১৮ সাল পর্যন্ত স্যান্ডর্হাস্ট রয়েল মিলিটারি কলেজে কেবল ব্রিটিশ নাগরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। কিন্তু ১৯১৮ সালে প্রথম দুজন ভারতীয় ক্যাডেট স্যান্ডর্হাস্টে প্রশিক্ষণের জন্যে নির্বাচিত হন। ইশফাকুল মজিদ ছিলেন চৌকস মেধাবী। তিনি স্যান্ডর্হাস্টে দ্বিতীয় ক্যাডেট এবং বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ছিলেন প্রথম। ইশফাকুল মজিদের পর আর কোনো বাঙালি ক্যাডেট ব্রিটিশ এই মিলিটারি কলেজে

প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাননি। ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুনে ১৯৩২ সালে প্রথম ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি চালু হওয়ার পর স্যান্ডর্হাস্টে ভারতীয়দের প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯২৪ সালের ১০ই জুলাই ইশফাকুল মজিদ সফলতার সাথে প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ব্যাচের ১৮ জন ছিলেন ব্রিটিশ এবং ইশফাকুল মজিদসহ মাত্র (তিন) জন ছিলেন ভারতীয়।

কমিশনপ্রাপ্ত ইশফাকুল মজিদ ১৯২৪ সালের ২৯ আগস্ট লিংকনশায়ার রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নের অফিসার হিসেবে লখনৌ রাণীক্ষেতে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি হায়দ্রাবাদ রেজিমেন্টে যোগ দেন এবং তার চাকরির বেশির ভাগ সময় এই রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। অবশ্য তিনি কখনো কখনো ১০/২৯তম হায়দারাবাদ ১১/১৯তম হায়দরাবাদ রেজিমেন্টে সাময়িকভাবে সংযুক্ত থেকে বেনারস ডিমাপুরে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯২৫ সালে লেফটেন্যান্ট এবং ১৯৩৩ সালে ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিনি আগ্রায় কুমায়ুন রেজিমেন্ট (পূর্বতন হায়দারাবাদ রেজিমেন্ট) সেন্টারের কমান্ড্যান্ট নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি আগ্রায় সেন্ট্র্রাল কমান্ড হেডকোয়ার্টার জেনারেল জিওফ্রি স্কুলের স্টাফ অফিসার নিযুক্ত হন। এরপর তিনি কলকাতায় ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টার্সের অ্যাসিটেন্ট অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসাবে বদলি হয়ে আসেন। ইশফাকুল মজিদ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে ভারতের বাইরে ইরাক সিঙ্গাপুরে চাকরি করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সময়ের সেনাপ্রধান জেনারেল কেএস থিমায়া পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় গভর্নর লে. জেনারেল আযম খান হায়দ্রাবাদ রেজিমেন্টে ইশফাকুল মজিদের সহকর্মী ছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক ব্যক্তিকে জরুরিভিত্তিতে এবং সাময়িকভাবে সেনাবাহিনীতে সৈনিক অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে তাদেরকে ক্ষতিপূরণসহ অব্যাহতি দেওয়া হয়। ইশফাকুল মজিদকে রি-সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তিনি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা এবং আসামের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সৈনিকদের পুনর্বাসনের জটিল কাজ দক্ষতার সাথে পালন করেন। ১৯৪৬ সালে সামরিক অফিসার হিসেবে ইশফাকুল মজিদ কলকাতায় সংঘটিত ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তহয়ে ভারত পাকিস্তান হওয়ার সময় পন্ডিত জওহরলাল নেহরু সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল কোদানদেরা মদপ্পা কারিয়াপ্পা চেয়েছিলেন ইশফাকুল মজিদ যেন ভারতে থেকে যান কিন্তু তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর আহবানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানে যোগদান করেন। পাকিস্তানে তিনি দশম ইনফেন্ট্রি ব্রিগেড ৫১তম ব্রিগেডের অধিনায়কত্ব করেন। এরপর তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং ৯৪ ইনফ্রেন্টি ডিভিশনের জিওসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চাকরিতে মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ (১৯০৩-১৯৭৬) ছিলেন সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ উপমহাদেশীয় (এদেশীয়) অফিসার। চাকরিতে তাঁর দুই বছরের জুনিয়র হলেও জেনারেল আইয়ুব খান (১৯০৭-১৯৭৪) ১৯৫১ সালের ১৭ই জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল স্যার ডগলাস গ্রেসির মেয়াদ শেষে পাকিস্তানের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন। বাঙালি মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদকে ঈর্ষাবশত পাকিস্তানের এদেশীয় প্রথম সেনাপতি হতে দেননি পাকিস্তানের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ইস্কান্দার আলী মির্জা (১৮৯৯-১৯৬৯) তার পরামর্শেই প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদকে ডিঙ্গিয়ে চাকরিতে দুবছরের জুনিয়র মেজর জেনারেল আইয়ুব খানকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করেন। অথচ সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ইস্কান্দার আলী মির্জা নিজেও ছিলেন বাংলা ভাষাভাষী এলাকার মানুষ। মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ পাকিস্তানের প্রথম সেনাপ্রধান নিয়োজিত হলে পাকিস্তানের ইতিহাস অন্যরকম হতেও পারতো। অবশ্য আইয়ুব খানের প্রতি অন্যায্য আনুকূল্যের খেসারত মেজর জেনারেল ইস্কান্দার আলী মির্জা তাঁর জীবদ্দশায়ই দিয়ে গেছেন।

একই সময়ে আরেকটি ঘটনা ঘটে যাওয়ায় মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদের পেশাদার সামরিক জীবনের অবসান ঘটে। ১৯৫১ সালের প্রথম দিকে সন্দেহভাজন সোভিয়েত ইন্ধনে মেজর জেনারেল আকবর খান, মাক্সবাদী কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান সাজ্জাদ জহিরের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সরকারকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীতে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা দানা বাধতে থাকে। দেশের রাজধানী করাচিতে হলেও সামরিক সদরদপ্তর ছিল রাওয়ালপিন্ডি। সে কারণে ইতিহাসে সে ষড়যন্ত্ররাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্রনামে খ্যাত। অভ্যুত্থানকারীদের মতের পেছনে ছিল,

. লিয়াকত আলী খানের সরকার ছিল দুর্নীতিবাজ অযোগ্য।

.পাকিস্তানে ব্রিটিশ আর্মি অফিসার রাখা দেশের নিরাপত্তার প্রতি ঝুঁকি এবং নিজ দেশের আর্মি অফিসারদের প্রমোশনে সমস্যা দেখা দেবে।

. কাশ্মির সমস্যাকে যথাযথভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়া।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৯৫১ সালের মার্চ মাসে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বেতার ভাষণে ঘোষণা করেন, প্রধান সেনাপতি জেনারেল আইয়ুব খানের সাহায্যে তিনি একটি সম্ভাব্য সেনা অভ্যুত্থান বানচাল করতে সমর্থ হয়েছেন। অভ্যুত্থানকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও সেনাপ্রধান আইয়ুব খানের কারসাজিতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদকেও অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার তদন্তেই মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ নির্দোষ প্রমাণিত হন।রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্রমামলার আসামীদের পক্ষে আইনী সহায়তা দান করেন মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদের ভায়রা ভাই মেদনীপুরের সন্তান ব্যারিস্টার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ এর প্রতিক্রিয়ায় দুঃখ ক্ষোভে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে চলে আসেন।

অবসর গ্রহণের পর থেকে কয়েক বছর তিনি পাকিস্তানের রাজধানী শহর করাচিতে বসবাস করেন। তিনি ১৯৬২ সালে করাচি ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসেন ঢাকায়। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার পাশে বুড়িগঙ্গার তীরে একটি বাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে তিনি বসবাস করা শুরু করেন। আসামের জোড়হাটের কৃতিসন্তান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ অবশেষে আস্তানা গাড়েন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকার অদূরে নিরিবিলি পরিবেশে বুড়িগঙ্গার তীরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়।

বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের ঘটনাবলী নিয়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রকাশিত শ্বেতপত্রে মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, শেখ মুজিবুর রহমান প্রাক্তন সামরিক কর্মচারীদের তালিকাভুক্ত করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইশফাকুল মজিদ অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে নিয়োগ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের সময় স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রস্তুতিপর্বে সর্বস্তরের বাঙালি সৈনিকগণ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত ২৩শে মার্চ ১৯৭১ সালের সবগুলি পত্রিকায় দেখা যায়, ২২ মার্চ সোমবার জেনারেল মজিদ কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে প্রাক্তন সৈনিকদের একটি দল বায়তুল মুকাররম থেকে মার্চ করে শহীদ মিনার পর্যন্ত যান এবং সেখান থেকে জেনারেল মজিদ কর্নেল ওসমানীসহ কয়েকজন প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে তাঁকে একটি তরবারি উপহার দেন। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের কালরাতের পরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী জেনারেল মজিদকে বন্দি করে মার্শাল সদর দপ্তরে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীকে কৌশলে বন্দি করার ব্যাপারে সহযোগিতা করা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলার সাক্ষি হওয়ার জন্যে তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু দেশপ্রেমিক এই বয়োবৃদ্ধ জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা পাক সামরিক বাহিনীর নির্যাতন সহ্য করে পাকিস্তানের পক্ষে সহযোগিতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে তাকে কারাগারে বন্দি থাকতে হয়। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে তিনি মুক্তি লাভ করেন। পাকিস্তানী সেনাদের হাতে আটক না হয়ে ভারতে যেতে সক্ষম হলে হয়তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কর্নেল আতাউল গণি ওসমানির পরিবর্তে তিনিই প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করতেন।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তরফ থেকে তাকে উঁচু পদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়, কিন্তু বয়স এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে তিনি নিজে কোনো দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্দি থাকাকালে তাঁর উপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের ফলে তার শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৭৬ সালের ৩১শে মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকে ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

দেশের সামরিক, সামাজিক রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাওয়া অসামান্য এই বাঙালি বীরের কোনোও রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বীকৃতি না থাকার কারণে দেশবাসীর কাছে মেজর জেনারেল ইশফাকুল মজিদ দুঃখজনকভাবে আজ বিস্মৃত এক জেনারেলের নাম হয়ে আছে।

শেয়ার করুন: