শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ইঞ্জিন না ল্যান্ডিং গিয়ার, সমস্যা কোথায়? দুর্ঘটনায় উঠে আসছে চার কারণ

বিমান দুর্ঘটনা, কাঁদছে ভারত 

নবযুগ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ১৩ জুন ২০২৫

বিমান দুর্ঘটনা, কাঁদছে ভারত 

ছবি: সংগৃহীত

২৪২ জনকে নিয়ে অহমদাবাদের মেঘানিনগরের বসতি এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেঙে পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমান। এক জন ছাড়া বাকি সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। বিমানবন্দরের নিকটবর্তী ডাক্তারদের একটি হস্টেল ভবনে গিয়ে ধাক্কা মারে বিমানটি। যার ফলে হস্টেল এবং তার আশপাশেও অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভেঙে পড়ার পরমুহূর্তেই প্রচ- শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ধরে যায় বিমানে। স্থানীয় হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলছে। বিমানটি অহমদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিমানে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমানকর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন পাইলট। এই বিমানে ১৬৯ জন ভারতীয় ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া ছিলেন ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক, সাত জন পর্তুগিজ নাগরিক এবং এক জন কানাডার নাগরিক। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিল অহমদাবাদের পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বিমানের ভেঙে পড়ার মুহূর্তে প্রচ- শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে। অনেকেই ভেবেছিলেন ভূমিকম্প হচ্ছে। ঘটনাস্থলে লাশের স্তূপ জমে গিয়েছে। মৃতদের অনেককে শনাক্তই করা যায়নি। লাশ শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার বন্দোবস্ত করেছে গুজরাত প্রশাসন। বিজে মেডিক্যাল কলেজে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের খবরাখবরের জন্য জনস্বার্থে চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী অহমদাবাদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ছিলেন। লন্ডনে কন্যার কাছে যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিআর পাটিল। টাটা গোষ্ঠীর তরফে দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর তথ্য অনুযায়ী, অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে ব্রিটেনের এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ (এএআইবি)। তারা জানিয়েছে, ভারতের নেতৃত্বেই এই তদন্ত হবে। তবে তাতে সহযোগিতার জন্য একটি তদন্তদল মোতায়েন করা হচ্ছে।
অহমদাবাদের দুর্ঘটনায় এক জন মাত্র বেঁচে গিয়েছেন। বিমানটির ইকনমি ক্লাসের ১১এ আসনে বসেছিলেন ওই যাত্রী। নাম বিশ্বকুমার রমেশ। অহমদাবাদের পুলিশ কমিশনার জিএ মালিক সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানান, বিমানের একমাত্র জীবিত যাত্রী রমেশই। পুলিশ তাঁকে খুঁজে পেয়েছে। আপাতত তিনি হাসপাতালে রয়েছেন। ঘটনাস্থলের ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, রমেশ হাঁটছেন। কয়েক জন মিলে তাঁকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে খুব বেশি চোট তাঁর লাগেনি। কী ভাবে এমনটা সম্ভব হল, অনেকেই তা ভেবে পাচ্ছেন না। এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
ইতিমধ্যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের একধিক ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। যেগুলি দেখে বিমান দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। ঘটনার পর প্রথম যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে, তাতে দেখা যায়, যাত্রা শুরুর পর লোকালয়ের উপর বেশ নীচ দিয়েই উড়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। কিছুটা এগোনোর পরেই তা আচমকা নীচের দিকে নামতে শুরু করে। তার পর একটি ভবনে ধাক্কা খেয়ে বিমানটি ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন জ্বলে ওঠে। বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, আগুনের শিখা আকাশের অনেক উঁচু পর্যন্ত উঠে যায়। এর পর সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে এসেছে বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। তাতে দেখা গিয়েছে, ওড়ার কিছু ক্ষণ পরেই বিমানটি বাঁ দিকে হেলে পড়তে থাকে। একই সঙ্গে বিমানের লেজের অংশটি নীচের দিকে নামতে থাকে। এই ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। বিশেষজ্ঞেরা প্রায় সকলেই একটি বিষয়ে একমত, বিমান ভেঙে পড়ার আসল কারণ জানা যাবে ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার করা গেলে। এই মুহূর্তে তাই দুর্ঘটনার নিশ্চিত কারণ বলা সম্ভব নয়। তবে কী ঘটে থাকতে পারে, বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় তেমন চারটি কারণ উঠে আসছে।
কী কী কারণ
প্রথমত, এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে বিমানটির ভার এবং সেই সংক্রান্ত গণনায় ত্রুটি। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ওড়ার সময়ে যাত্রী, মালপত্র-সহ বিমানের ওজন কত হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রত্যেক বিমানের নির্দিষ্ট ভারবহন ক্ষমতা থাকে। কিন্তু অনেক সময়ে বিমান ওড়ার মুখে এই ওজনের হিসাবে গোলমাল করে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা। তখন বিমানটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যে কোনও বিমানের আকার, গঠন অনুযায়ী তার ভারবহন ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। বিমানের মধ্যে যাত্রীদের কোথায় বসানো হবে, কোন দিকে কত যাত্রী বসলে বিমানের সামনের এবং পিছনের দিকের ভারসাম্য বজায় থাকবে, বিমান ওড়ার আগে তা হিসাব করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেই হিসাবে ভুল হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বিমান বিশেষজ্ঞ বন্দনা সিংহ জানিয়েছেন, বিমানটি যে ভবনে ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে তার একটি চাকা আটকে গিয়েছিল। ওজনের হিসাবে ভুল হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার। বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই মনে করছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি থাকতে পারে। হতে পারে, ল্যান্ডিং গিয়ারটি বিমান ওড়ার পর ঠিক মতো বন্ধ হয়নি। এই ল্যান্ডিং গিয়ারই বিমানের ভার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিমান ওঠানামার সময় রানওয়ের সংস্পর্শে আসে ল্যান্ডিং গিয়ার। এখান থেকে বিমানের চাকা বেরিয়ে আসে। ফলে বিমানের গতিও ল্যান্ডিং গিয়ারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানে গোলমালের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তৃতীয় কারণ হিসাবে অনেকে বলছেন, মাটি ছাড়ার পরেই বিমানের উপরের দিকে ওঠার ক্ষমতা (লিফ্ট) কমে এসেছিল। একসময় এই ক্ষমতা একেবারেই শেষ হয়ে আসে। তখন বিমানটিকে আর ভাসিয়ে রাখতে পারেননি পাইলট। ভিডিয়ো দেখে অনেকে বলছেন, রানওয়ে ছাড়ার পর বিমানটি মাঝপথে সামান্য গোঁত্তা খেয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। লিফ্ট কমে যাওয়ার কারণেই এমন ঘটেছে। চতুর্থত, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। সেটি ভেঙে পড়ার আগে সর্বোচ্চ ৩২২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে পৌঁছোতে পেরেছিল। যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। ওই সময়ে বিমানের গতি আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। কোনও কারণে বিমানের ইঞ্জিন শক্তি হারিয়ে ফেলে। তার ফলে দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল।
কী বললেন প্রধানমন্ত্রী
অহমদাবাদের দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘অহমদাবাদের দুর্ঘটনা আমাদের সকলকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। এই শোক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যাঁরা এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আমি তাঁদের সমবেদনা জানাচ্ছি। মন্ত্রীদের সঙ্গে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।’’
কী ঘটে থাকতে পারে ককপিটে
বিমান অহমদাবাদের মাটি ছাড়ার পরপরই ‘মে ডে কল’ পাঠিয়েছিলেন পাইলট। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে পাঠানো সেই বিপদবার্তায় কাজ হয়নি। বিমানটির সঙ্গে এটিসি যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আর যোগাযোগ করা যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানটি প্রয়োজনীয় গতিতে পৌঁছোতে পারছে না দেখে, নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠতে পারছে না দেখে ককপিটে পাইলটেরা শেষ চেষ্টা করেছিলেন। হাতল টেনে ধরে বিমানটির নাকের অংশ তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।
বিজয় রূপাণীর মৃত্যু
লন্ডন গ্যাটউইকগামী বিমানটিতে গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বিজয় রূপাণী ছিলেন। তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লন্ডনে কন্যার কাছে যাচ্ছিলেন তিনি। ২০১৬ থেকে ২০২১সাল পর্যন্ত রূপাণী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন। তাঁর বৃহত্তর পরিবারের একটা অংশ কলকাতাতেও থাকে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ চত্বরে রূপাণীর তুতো ভাইয়ের দোকান আছে। রূপাণীর মৃত্যুর খবরে সেখানেও নেমেছে শোকের ছায়া।
এক মিনিটও সময় পাননি পাইলট
মাটি থেকে ৬২৫ ফুট মাত্র উঠতে পেরেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। সেখান থেকেই এটিসি-কে পাঠানো হয়েছিল বিপদবার্তা। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি মিনিটে ৪০০ ফুট গতিতে নীচে নেমে আসছিল। তার পরেই লোকালয়ে ভেঙে পড়ে। পাইলটের হাতে এক মিনিটও সময় ছিল না। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যদি বিমান ৩৫ হাজার ফুট উপরে থাকত, তা হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কিছুটা সময় পেতেন পাইলট এবং ক্রু সদস্যেরা। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।
বরাতজোরে
অহমদাবাদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির ইকোনমিক ক্লাসের ১১এ নম্বর আসনে ছিলেন বিশ্বকুমার রমেশ। তিনি বেঁচে বেরিয়েছেন ওই বিমানের ধ্বংসস্তূপ থেকে। অহমদাবাদ পুলিশ এই খবর নিশ্চিত করেছে। রমেশ আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কী ভাবে তা সম্ভব হল, কী ভাবে রমেশ বেঁচে গেলেন, এখনও স্পষ্ট নয়। খুব বেশি চোটও লাগেনি তাঁর। তিনি বলেছেন, ‘‘সব কিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটেছিল, বুঝতেই পারিনি। যখন জ্ঞান ফেরে, উঠে দেখি, চারদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে রয়েছে লাশ। ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। উঠে দাঁড়ানোর পরেই পালাতে শুরু করেছিলাম আমি। সেই সময় কেউ একজন আমাকে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দেন। তার পর ওই অ্যাম্বুল্যান্সে করেই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’’
হস্টেলে বিপর্যয়
বিমানবন্দরের অদূরে বিজে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসের উপর ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ জন ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত আরও অনেকে। প্রাণে বাঁচার জন্য তিনতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপও দিয়েছেন এক জন। ঘটনার পরের কিছু ছবিতে হস্টেলের ক্যান্টিনের, যেখানে আবাসিকেরা খাবার খান, বিধ্বস্ত চিত্র দেখা যাচ্ছে। দেখা গিয়েছে, বহু বেঞ্চ ভেঙে পড়ে রয়েছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে থালায় সাজানো খাবার। মেস তছনছ হয়ে গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে দেওয়ালও। অনেকেই সেই সময়ে খাচ্ছিলেন।
কী বললেন অমিত শাহ
বৃহস্পতিবার অহমদাবাদের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানান, উদ্ধারকাজ প্রায় সম্পূর্ণ। প্রায় সব দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দেহ শনাক্ত করার কাজ চলছে। ১.২৫ লক্ষ লিটার জ্বালানি পুড়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিতে। অত্যধিক তাপমাত্রার কারণেই কাউকে বাঁচানোর সুযোগ পাওয়া যায়নি। বিমানের একমাত্র জীবিত যাত্রী রমেশের সঙ্গেও শাহ দেখা করেছেন।

শেয়ার করুন: