শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

নিউইয়র্কের ১১১তম মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রাইমারি ২৪ জুন

কোমো-মামদানি কী সমানে সমান!

নবযুগ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭:২২, ২০ জুন ২০২৫

কোমো-মামদানি কী সমানে সমান!

ছবি: সংগৃহীত

আর মাত্র চারদিন পর অর্থাৎ ২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনের অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি। এ প্রাইমারিতে যিনি জয়ী হবেন, এ বছরের নভেম্বর মাসের ৪ তারিখে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে তিনিই হবে বিশ্বের রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্কের নগর পিতা। নিউইয়র্ক সিটি মূলত একটি ডেমোক্রেট সিটি এবং রিপাবলিকান পার্টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তাদের প্রার্থীর জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির দিন যত ঘনিয়ে এগিয়ে আসছে, ডেমোক্রেট প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা তত কঠিন হচ্ছে বলে মনে করছেন ডেমোক্র্যাট ভোটাররা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ভোটাররা রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও তরুণ অভিবাসী নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য জোহরান মামদানিকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাইমারিতে লড়াই হবে সমানে সমান। সব হিসেব-নিকেশ হচ্ছে এই দুই প্রাথীকে ঘিরেই। 
যুক্তরাষ্ট্রে যত বাংলাদেশির রয়েছেন, এর সিংহভাগই নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করেন। বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভোট নির্বাচনে বড় ভূমিকা না রাখলে মুসলিম ভোট হিসাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশিদের বড় একটি অংশ মামদানিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন। অন্যদিকে একটি অংশ অভিজ্ঞ হিসাবে কোমোর পক্ষে কাজ করছেন। ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাইপর্বে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বয়সের ব্যবধান অনেক। অ্যান্ড্রু  কোমোর বয়স ৬৭ বছর। জোহরান মামদানি ৩৩।
নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নরের সন্তান এবং নিজেও গভর্নর হওয়া  কোমোর কর্মজীবন বিস্তৃত। ২০১১ সালে নিউইয়র্কের গভর্নর হওয়ার আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী এবং নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতাকে পূঁজি করে তিনি মেয়র হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে তরুণ জোহরান মামদানির শক্তি তারুণ্য। মুসলিম হিসাবেও তিনি অগ্রভাগে রয়েছেন।
কোমো তাঁর নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন, তার মধ্যে আছে- শহরের ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করা এবং ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো। এমনকী নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক সিটির ন্যুনতম মজুরি ২০ ডলার করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতি নিউইয়র্কবাসী ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে  কোমোর শিবিরের পক্ষ থেকে করা জরিপে দেখা গেছে, ৬০০ ভোটারের মধ্যে চালানো জরিপে তিনি ১২ পয়েন্টে এগিয়ে। তাঁর পক্ষে ৫৬ শতাংশ ও মামদানির পক্ষে ৪৪ শতাংশ সমর্থন জানিয়েছেন।
এই সময়ে ৪ জুন প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম টিভি বিতর্ক হয়, আর ৫ জুন জনপ্রিয় কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ মামদানিকে তাঁর প্রথম পছন্দ হিসেবে ঘোষণা করেন। এসময়ে  কোমোর সমর্থক একটি সংগঠন টিভি ও মেইলে বিজ্ঞাপন চালিয়ে বলছে, মামদানি নাকি কর বৃদ্ধি করতে ও পুলিশ বিভাগের বাজেট কমাতে চান।
কম্পট্রোলার পদে জাস্টিন ব্রেনান এবং মার্ক লেভিনের মধ্যে হচ্ছে ভোটাভুটি। আর পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে লড়ছেন জুমানে উইলিয়ামস ও জেনিফার রাজকুমার।
এছাড়াও সিটির ৫১ জন কাউন্সিলরকে নির্বাচন করতে ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। গত সপ্তাহে অ্যাসেম্বলিম্যান মামদানি, সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার এবং সাবেক আইনপ্রণেতা মাইকেল ব্লেক একে অপরের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। যা সিটির নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও এর আগে স্টেট সিনেটর জেসিকা রামোস ক্যুমোকে সমর্থন দেন। র‌্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং সিস্টেমের মাধ্যমে প্রার্থীদের জোট এবং ক্রস এন্ডোর্সমেন্টের আরেকটি নতুন ঘটনার সাক্ষী হচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটির ভোটারার।
এদিকে, গত সপ্তাহে প্রাক্তন মেয়র মাইক ব্লুমবার্গ ক্যুমোকে সমর্থন করছেন এবং ক্যুমোর সমর্থনকারী একটি সুপার প্যাককে ৫ মিলিয়ন ডলার দান করেছেন।ক্যুমোর নির্বাচনী প্রচারক দল জানিয়েছে যে, তারা ক্রস-এন্ডোর্সমেন্টে অবাক হননি এবং তারা এখনও বিশ্বাস করেন যে, নিউইয়র্ক সিটি পরিচালনার জন্য ক্যুমোর সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে।
‘ডেটা ফর প্রগ্রেস’ ৩০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ৮১৯ ডেমোক্র্যাট ভোটারের মধ্যে জরিপ চালায়। এতে দেখা গেছে, ভোটের শুরুর দিকে কুমো ৭ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলেও ধাপে ধাপে ভোট গণনার (র‌্যাঙ্কড চয়েস) শেষে কুমো ৫১-৪৯ ব্যবধানে মামদানির চয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই জরিপে মার্জিন অব এররও (কিছুটা ভুলত্রুটি) থাকতে পারে। কারণ, দুজনের মধ্যে ব্যবধান খুবই কম। মামদানির সমর্থক হিসেবে পরিচিত ‘নিউইয়র্কারস ফর লোয়ার কস্টস’ সুপার পিএসি এবং ‘ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি’-এর জাতীয় পিএসির পক্ষ থেকে ‘ডেটা ফর প্রগ্রেস’এর মাধ্যমে এই জরিপ চালানো হয়েছে।
ফলাফল বলছে, মামদানির দারিদ্র্য আর ধনীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি অনেক ভোটারকে আকর্ষণ করছে, বিশেষ করে যাঁরা বাসস্থানসংকট ও দাম বাড়ার বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত। অবশ্য অনেকেই বলছেন, মামদানি তুলনামূলকভাবে তরুণ ও তাঁর অভিজ্ঞতা কম।
নিউইয়র্কারস ফর লোয়ার কস্টসের মুখপাত্র বিল নাইডহার্ড এক বিবৃতিতে বলেন, এই জরিপ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, নিউইয়র্কের মানুষ এখন জোহরান মামদানির মতো এমন একজন মেয়র চান, যিনি জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো নিয়ে ভাবেন। তাঁরা কেলেঙ্কারিতে জড়ানো অ্যান্ড্রু কুমোর মতো এমন একজন ব্যক্তিকে চান না।
অন্যদিকে কুমোর শিবিরের পক্ষ থেকে করা জরিপে দেখা গেছে, ৬০০ ভোটারের মধ্যে চালানো জরিপে তিনি ১২ পয়েন্টে এগিয়ে। তাঁর পক্ষে ৫৬ শতাংশ ও মামদানির পক্ষে ৪৪ শতাংশ সমর্থন জানিয়েছেন। এই সময়ে ৪ জুন প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম টিভি বিতর্ক হয়, আর ৫ জুন জনপ্রিয় কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্তেজ মামদানিকে তাঁর প্রথম পছন্দ হিসেবে ঘোষণা করেন।
 

শেয়ার করুন: