শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

লালশাপলার মেলা

যেনো অদৃশ্য শিল্পীর তুলিতে আঁকা জীবন্ত স্বর্গভূমি

শিউল মনজুর

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

যেনো অদৃশ্য শিল্পীর তুলিতে আঁকা জীবন্ত স্বর্গভূমি

ছবি: সংগৃহীত

যখন ডিবির হাওরে পৌঁছি তখন ঘড়ির কাটা নয় ছুঁই ছুঁই। মনে হচ্ছে দেরি হয়ে গেছে, তারপরেও গাড়ি থেকে নামার পর হালকা পাতলা কুয়াশা আবরণে আচ্ছাদিত ডিবির হাওর দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। বলা যায় প্রাণটা ভরে গেলো, লালরঙের ও হালকা গোলাপী আভার চাদরে যেনো পুরো হাওর ডেকে আছে। যতদূর চোখের দৃষ্টি পৌঁছে ততদূর যেনো এক গোলাপী ¯িœগ্ধতা, জলের উপর ভাসমান ফুলের আনন্দসাগর। এরই মধ্যে মাঝে মাঝে গলা লম্বা করে মাছ শিকার ও পোকামাকড়ের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে, উড়ে বেড়াচ্ছে শাদা বকের দল। সেই সাথে আছে অতিথি পাখিদের আনাগোনা, দেশি পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। মনে হচ্ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনাবিল আনন্দ চারপাশে খেলা করছে। যে কোন পর্যটককে ডিবি হাওর যে মুগ্ধ করবে তা নিশ্চিত। আবার অতিদূরে প্রতিবেশি দেশের সীমান্তে সারিসারি উচুউচুু সবুজবনের পাহাড় যেনো ছবির মতো আঁকা। সবকিছু মিলিয়ে গোটা পরিবেশটা যেনো অদৃশ্য শিল্পীর তুলিতে আঁকা জীবন্ত স্বর্গভূমি।

অতঃপর, তিনটি নৌকাভাড়া করে, আমরা বেড়াতে আসা ১৬ জন সদস্য হাওর ঘুরে ঘুরে দেখি চারদিকে শাপলার হাসিমাখা জীবন। মাঝি জানালো, মাঘ পেরুলে শাপলা আর ফুটবে না। মূলত শীতের দুমাস থেকে তিনমাস পর্যন্ত এই হাওরে দলে দলে শাপলা ফুটে। এবং এই তিনমাস পর্যটকদের আনাগোনাও থাকে প্রচুর। এ সময়টা এলাকাটিতে উৎসবের আমেজ থাকে। তারপর বসন্ত আসলে ধীরে ধীরে হাওরের শাপলাগুলো যখন ঝরে যায় তখন এই গ্রামখানি আবারো উৎসবহীন নির্জনতায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। প্রায় ঘন্টাখানিক বিলের চারপাশে ঘুরাঘুরি করার পর ঘাটে ফিরে আসলে বেলা তখন এগারটার মতো। নৌকা থেকে নামতে নামতে বারবার মনে হচ্ছিল, আরো কিছুক্ষণ থাকি আরো কিছুক্ষণ থাকি। কিন্তু আমাদের সকালের নাস্তা তখনো খাওয়া হয়নি। আমরা সকলেই জানি যে, ভোরের কোমল আলোয় শাপলা ফুল ফোটে আবার সময় বাড়ার সাথে সাথে ঝিকিমিকি রোদের তাপমাত্রায় শাপলারা মুখ লুকিয়ে নেয়। শাপলাবিলের এমন নান্দনিক দৃশ্য দেখার জন্যই, সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে ভোরের দিকে যাত্রা শুরু করি এবং সিলেট সীমান্তের এই ডিবির হাওর নামক গ্রামে অর্থ্যাৎ শাপলাবিলে আসি। দলের সকল সদস্যরা এমন সৌন্দর্য অবলোকন করে ভীষণ ভীষণ আনন্দিত। আসলে, এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে আমাদের বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল, সেই বিখ্যাত গানের কথা, প্রতুল মুখোপাধ্যায় এর গান- ‘আমি একবার দেখি, বারবার দেখি, দেখি বাংলার মুখ’।

শীতে, সিলেটে বেড়াতে গেলে, আপনিও ডিবির হাওরে লালশাপলার মেলা দেখে আসতে পারেন। সিলেট শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে, জৈন্তাথানায় অবস্থিত ডিবির হাওর। অনেকেই আবার বলে লালশাপলার বিল। বলা যেতে পারে জাফলং এর নিকটবর্তী। কার অথবা লাইটেস এর মতো গাড়িতে প্রায় চল্লিশ মিনিটের রাস্তা। বাসে ঘণ্টাখানেক। তবে যাবেন অবশ্যই ভোরে। শাপলার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ওটাই শ্রেষ্ঠ সময়।

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক, মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র।

শেয়ার করুন: