শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

বিদেশী ঋণ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি দেশ বিরোধীতা

সামছুদ্দীন আজাদ,সহ সভাপতি-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৩০ জুলাই ২০২২

বিদেশী ঋণ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি দেশ বিরোধীতা

ফাইল ছবি

আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ-বিশ্লেষক রয়েছেন যারা বিএনপির মত সরাসরি সরকার বিরোধীতায় জড়ান না। কিন্তু নানাভাবে সরকারের সমালোচনা করেন। অথচ সরকারের কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ড তাদের চোখে পড়ে না। একটি নড়বড়ে অর্থনৈতিক কাঠামোকে বর্তমান সরকার যে একটি মজবুত ভিত্তি দিয়েছেন সেটি তাদের মাথায় ঢোকে না। কি জানি হয়তো ঢুকলেও সেটি স্বীকার করে নিয়ে তার প্রশংসা করা হয়তো তাদের চরিত্রে নেই।

আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশের প্রায় সবগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও হবে আকাশ ছোঁয়া। গত তিন বছর শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশে^র জন্য একটি ভয়ঙ্কর সময় ছিল। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সারা বিশে^ যখন কোভিড-১৯ এর মত ভয়াবহ মহামারি শুরু হলো- সারা বিশ^ হয়ে উঠলো একটা মৃত্যুপুরি। সারা বিশে^ বিশ^ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হলেও বাস্তবে ১ কোটির অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখ যখন এই লেখাটি নিউইয়র্কে বসে লিখছি ঠিক এমন সময়টাতেও কোভিড-১৯ তার স্বরূপ পরিবর্তন করে আবারও আঘাত হেনেছে বিশ^ব্যাপী। প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় মানুষের মৃত্যুর খবর ভেসে আসে। শেষ পর্যন্ত টিকা আবিস্কারের ফলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মৃতের সংখ্যা কমলেও এখনও মৃত্যুশূন্য একটা দিনও যায়নি এই বিশে^। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশকেও মোকাবেলা করতে হয়েছে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা। এমনকি দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখার জন্য নিতে হয়েছে নানামুখী কঠিন ও সময় উপযোগী পদক্ষেপ।

যেমনঃ- ব্যাবসায়ীদের সরকার দিয়েছে বিশেষ প্রণোদনা যাতে করোনাকালীন সময়ে কোন অবস্থায় গার্মেন্ট শিল্প বন্ধ না হয়, রফতানি বন্ধ না হয়, শ্রমিক কর্মচারিরা যাতে নিরাপদ থাকে, তাদেরকে টিকা প্রদানসহ বিশেষ নিরাপত্তায় রেখে এই শিল্পকে চালু রাখা হয়েছে ফলে আমাদের বৃহত্তর এই শিল্প একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। সারা বাংলাদেশের কর্মজীবী, শ্রমজীবী, নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষকে করোনাকালীন দেয়া হয়েছে নগদ আর্থিক সুবিধা যা তাদের মোবাইলের টেলিফোনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি সরকারি টিকা কেনার জন্য আগাম অর্থ দিয়ে রেখেছিল যাতে সঠিক সময় বাংলাদেশের মানুষ টিকা পেতে পারে। সেজন্য ভারত, আমেরিকা, চীন থেকে সরকার যথাসময়ে টিকা সরবরাহ পেয়েছে তাছাড়া এই তিন দেশ উপহার হিসেবেও আমাদের দেশকে অনেক টিকা পাঠিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ টিকা পেয়েছে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় মৃত্যুর ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে মানুষ রক্ষা পেয়েছে। অর্থাৎ সরকার সতর্ক ছিল, আন্তরিক ছিল বলে এমন বিপদ থেকে জনগণ রক্ষা পেয়েছে। এমনকি সরকার তৃতীয় ডোজ বুস্টার ডোজ পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে জনগণের জীবন রক্ষার জন্য।

যেখানে সারা বিশ^কে হিমশিম খেতে হয়েছে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে। একবার যদি মৃত্যুর মিছিল এই আমেরিকায়, ব্রাজিল, ইউরোপের দেশগুলো, ভারতে পর্যন্ত দেখি আর যদি বাংলাদেশের সাথে তুলনা করি তাহলে অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার কথা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, বাংলাদেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ যারা শ্রদ্ধা করার মত তাদের মুখে কোনও প্রশংসা শুনিনি যে শেখ হাসিনা অন্তত এই বিশাল কাজটি করেছেন। প্রশংসার বদলে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন তারা। একই সাথে যে সমস্ত মেগাপ্রকল্পগুলো সরকার করছেন-সারা দেশে ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন, সড়ক ও জনপদের উন্নয়ন, বড় বড় ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ, চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণ, মেরিণ ড্রাইভ নির্মাণ, উড়াল সেতু নির্মাণ, ঢাকা শহরে মেট্রোরেল নির্মাণ, সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন নির্মাণ, পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, রাশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতায় রূপপুরের পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তিন নম্বর টার্মিনাল যা এ যুগের সবচেয়ে আধুনিক একটি টার্মিনাল, এমনকি মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর মত চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো শেখ হাসিনা করে গেছেন এদেশের জন্য। তার মাথার মধ্যে এমন চিন্তাগুলি ছিল বলেই তিনি এসব বিশালাকারের প্রকল্পগুলো করতে পেরেছেন। আর এসব করতে গিয়ে আমাদেরকে নির্ভর করতে হয়েছে বিদেশী ঋণের উপর।

আমরা তো প্রথম বিশে^র শিল্পোন্নত কোন দেশ নই। আমরা হলাম তৃতীয় বিশে^র কৃষি নির্ভর একটি দেশ। কোনো মতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই ছিল আমাদের নিয়তি। আমাদের কোন অর্থ ছিলনা যা দিয়ে আমরা নিজেরাই সব উন্নয়ন কর্মকা- করতে পারি সুতরাং বিদেশী ঋণ, অনুদান অথবা বিনা সুদে, স্বল্প সুদে যে কোন শর্তে ঋণ নিয়েই আমাদের উন্নয়ন কর্মকা- করতে হয়। সরকার তার সক্ষমতা হিসেব করেই তো বিদেশী ঋণ গ্রহণ করে। যাতে চুক্তি অনুযায়ী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা যায়। স্বাধীনতার পর থেকে এই সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের যত বিদেশী ঋণ আছে সব ঋণের কিস্তি সময় মত পরিশোধ হয়েছে আর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তো এ ব্যাপারে অধিক সচেতন। তা সত্ত্বেও আমাদের দলবাজ অর্থনীতিবিদ, কিছু বিদেশী দালাল যারা বিদেশীদের এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে বসে কাজ করছে তারা সব সময় এই ঋণের বিরোধীতা করছেন, উন্নয়ন কর্মকা-ের বিরোধীতা করছেন, সরকারের উন্নয়নকে নিরুৎসাহিত করছেন, সরকারকেও ভয় দেখাচ্ছেন। সরকার বিদেশী ঋণের ফাঁদে পড়েছেন, ঋণ পরিশোধ না করলে দেশ দেউলিয়া হবে, শ্রীলংকার মত অবস্থা হবে এসব নেতিবাচক মন্তব্য সব সময় পত্র-পত্রিকা-টেলিভিশনের পর্দায় বলে বেড়াচ্ছেন। নেতিবাচক মন্তব্য করে প্রবন্ধ লিখে, দেশের মধ্যে দেশ বিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী বিএনপি-জামাতকে খুশি করার চেষ্টা করে। সরকারের বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক আবহ তৈরির চেষ্টা করে।

ওদের কেউ কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। তাদের পরিবারের কোন সদস্যও দেশের জন্য জীবন দেয়নি। আজ স্বাধীনতার ৫১ বছর পর দেশ যখন উন্নত সমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে তখন তাদের গাত্রদাহ্ শুরু হয়ে গেছে। এখন তো তাদের দেশ বিরোধী অবস্থান নিয়েও এদেশের কোন ক্ষতি করতে পারবে না এবং তারা এইটুকু জানে শেখ হাসিনা কোন দিন কারো কাছে নতি স্বীকার করতে জানে না। ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে তিনি এদেশ পরিচালনা করছেন। আর তিনি ভাল করেই জানেন, কারা এদেশের শত্রু আর কারা এদেশের বন্ধু।

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লিখতে হচ্ছে দেশে এবং বিদেশে যারা আওয়ামী ঘরানার লেখক আছেন তারা কোনদিন জামাত-বিএনপি দেশ বিরোধী দালাল অপশক্তির বিরুদ্ধে কিছু লিখেন না। শুধু নিজের ঢোল নিজে পেটান আর তদবীর করে রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। আমাদের সকলের উচিৎ সরকারের সমস্ত উন্নয়ন কর্মকা- জনসমক্ষে তুলে ধরে সরকারের সফলতার প্রশংসা করা। কিন্তু আমরা তা করিনা বলে দেশ বিরোধী অপশক্তি দিন দিন শক্তি সঞ্চয় করছে।
 

শেয়ার করুন: