শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ঢাকার চিঠি

পাকিস্তান-বরিশাল ও প্রধানমন্ত্রী বচন 

মেসবাহ শিমুল, ঢাকা অফিস

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ৫ নভেম্বর ২০২২

পাকিস্তান-বরিশাল ও প্রধানমন্ত্রী বচন 

ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎই ঢাকায় পাকিস্তান প্রসঙ্গ প্রকট হয়ে উঠলো। দেশটির সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গুলি করা হয়েছে। লংমার্চের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আততায়ীর তিনটি গুলিতে এখন হাসপাতালের বিছানায় ইমরান খান। ঢাকায় বিভিন্ন ভাবেই ঘুরেফিরেই পাকিস্তান প্রসঙ্গ আসেই। সেটি সরকারের তরফ থেকে যেমন আসে তেমনি আসে ক্রিকেটের মাঠ থেকেও।

যেমন এদিন বিকেলেই সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে খেলায় পাকিস্তানের দর্শক ছিলো প্রচুর। সেই সময় সাবেক কিংবদন্তী ক্রিকেটার ইমরান খানের ওপর হামলার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে থাকবে না সেটি হয় না। তাইতো দেশের বিভিন্ন মহলে তাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি যেভাবে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন সেটি অবশ্য প্রায়ই দিনই আমাদের নজরে আসে। তাকে নিয়ে, তার রাজনীতি নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়। চায়ে টেবিলে ইমরানের ক্যারিশমা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে। 

ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) যেমন দিনদিন দেশটির শাসকদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠছে ঠিক তেমনটি ঘটছে দেশের ভেতরেও। বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করছে। সমাবেশগুলোতে বিপুল লোকসমাগম হচ্ছে। সরকার বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু তাতে ফল আসছে না। এমনকি সমাবেশের আগে দুইদিন পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হলেও লোক সমাগম আরো বেশি হচ্ছে। 

খুলনার পর এবার বরিশালে গণসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। শনিবার দক্ষিণের বিভাগীয় এ শহরে সমাবেশ। তবে দুইদিন গণপরিবহন বন্ধ থাকবে এমন ঘোষণার কারনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সেখানে দলটির নেতাকর্মীরা ভিড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে যখন স্টেশ বানানো হচ্ছিল তখন বেলসপার্ক ময়দান অনেকটাই ভরে গিয়েছে। বিভিন্ন ভাবে তারা আসছেন আশপাশের জেলাগুলো থেকে। সঙ্গে চিড়ামুড়ি আর গুড়সহ শুকনো খাবার নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের এই যুদ্ধ সত্যিই রাজনীতিতে অন্যরকম কিছুর আভাস দেয়। আগামীর দিনগুলো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বা যাচ্ছে সে বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা করতে পারেন বোদ্ধারা। 

পাকিস্তানে অর্থনৈতিক দূরাবস্থা চলছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। দ্রব্যমূল্য যে পর্যায়ে যাচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষের অবস্থা দিন দিন খারাপ বৈ ভালো হবে বলে মনে হয় না। এই অবস্থায় বিএনপি তাদের সমাবেশে মোট যে চারটি দাবি তুলছে তার মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ একটি বড় ইস্যু। যে ইস্যুর সঙ্গে আমার মত সাধারণ চাকরীজীবীও সহমত পোষণ করে। তাই তাদের সমাবেশগুলোয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে বহু সাধারণ মানুষ যোগ দিচ্ছে বলে দলটির নেতারা দাবি করছেন। 

পাকিস্তানে তেহরিক ই ইনসাফ সাধারণ মানুষের বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণিকে আকৃষ্ট করছে অর্থনৈতিক দূরাবস্থা ও সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপণ করে। আমাদের দেশেও একই চিত্র দেখা যায়। সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি আর অপচয়ের কারনে দেশের অর্থনীতি আজ হুমকির মুখে এমন একটি কথা আজকাল সাধারণ মানুষের মুখেও শোনা যাচ্ছে। এটি যদি বিএনপি ব্যাপকহারে বিএনপি ছড়িয়ে দিতে পারে তাহলে এদেশেও লং মার্চ কিংবা এ ধরণের বৃহত কোনো কর্মসূচী দেখা যেতে পারে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির ভেতর-বাইরে যে খেলার খবর পাওয়া যায় তাতে মাঠের বাতাসের প্রবল ধাক্কা লেগে যদি সরকার কিংবা বিরোধী রাজনীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসে তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

ইস্যু আছে আরো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে বলেছেন বিএনপি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তবে খালেদা জিয়াকে আবারো জেলে পাঠানো হবে। এ ধরণের বক্তব্য ইতোপূর্বে কমবেশি এসেছে। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং সারাদেশে বিএনপির গণসমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রেক্ষিতে তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে কী বোঝাতে চাইছেন বিষয়টি অনেকেরই জানার আগ্রহ। তাহলে কি সামনে বিএনপির জন্য আবারো কোনো চ্যালেঞ্জ আসছে না কি সেটি সরকারের দিকেই ঘুরে যাচ্ছে এ বিষয়টি স্পস্ট নয়। তবে তার এমন বক্তব্য নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে আদালতের এখতিয়ারাধিন বিষয়কে এভাবে প্রকাশ্যে বলাটা কতোটুকু শোভনীয় তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। অনেকে এ বক্তব্যকে বিএনপির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করছেন। 
 

শেয়ার করুন: