শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ঢাকার চিঠি

সব মন খারাপের খবর 

মেসবাহ শিমুল, ঢাকা অফিস 

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

সব মন খারাপের খবর 

ঢাকার চিঠির লেখক: মেসবাহ শিমুল

মার্কিন মুলুকের আমার প্রবাসী ভাই-বোন বন্ধুরা। ব্যস্তময় এই প্রবাস জীবনে দেশের একটি ভালো খবর জানার ইচ্ছাকে কোনোভাবেই পূরণ করতে পারছি না বলে শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এই বঙ্গভূমিতে গেল সপ্তাহে যা ঘটেছে তার প্রায় সবটুকু দু:সংবাদ। তাই এই চিঠিও শুরু করছি যথারীতি মন ভারী করা খবর দিয়ে। 

বুধবার রাতে ৩০ টাকায় একটি রিকশা ঠিক করে বাসার দিকে আসছিলাম। রিকশাওয়ালার বাড়ি গাইবান্ধা। আমি জানতে চাইলাম, গাইটা কি এখনো বান্ধাই আছে? নাকি ছাড়া হইছে। এতো বছর বান্ধা অবস্থায় থাকে কেমনে? রিকশাওয়ালা খোকন। বললো-সেটাই মামা, নামটা একটু মজার তাই না? এরপর বেশ কথা হলো। দুপুর কি দিয়া ভাত খাইছো? বললো- তেলাপিয়া মাছ’। ইলিশ মাছ খাও না কয় সপ্তাহ? কয় সপ্তাহ। ছয় মাসেও খাই না। তেলাপিয়া তাই কিনতে পারি না,আর ইলিশ...। গরুর গোশতো খাই বছরে একবার। ঈদের সময়। এরপর কথায় কথায় যা জানা গেলো তা বেশ বেদনার। বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চার বছর আগে মাস্টার্স শেষ করেছে খোকন। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল একই বর্ষের ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী। সেই থেকে দুই বাড়ির কোনোটিতেই ঠাঁই নেই।

তেজগাঁওয়ের একটি কোম্পানিতে চাকরি করতো। কিন্তু মালিক এলাকার হওয়ায় বিয়ের কারনে চাকরিটা কেড়ে নিয়েছে। সেই থেকে অনেক কষ্ট করেছে। এই শহরে রাজমিস্ত্রি, ইট ভাঙ্গা,রংয়ের কাজ করেছে। সে সবে পোষায় না বলে এখন রিকশা চালায় খোকন। সেই আয়ে তার দুই বছরের বাচ্চা নিয়ে তিনজনের সংসারই চলে না। কিছুদিন আগেও গ্রামে মায়ের কাছে পাঁচশ-হাজার টাকা পাঠাতো কিন্তু সবকিছুর দাম বাড়ার পর এখন সেটিও বন্ধ হয়েছে। রিকশা থামিয়ে কথাগুলো বলছিলো আর আমার দিক থেকে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখে চোখের পানি আড়াল করতে চাইছিলো। আমি শুনেই যাচ্ছিলাম। বললো-আমার কি মনে হয় জানেন-আমার মতো গরীব ছেলের লেখাপড়া শেখাটাই ভুল হয়েছে। কাজ-কর্ম করতাম তাতেও বাবা-মায়ের উপকার করে আসতে পারতাম। আসলে জীবনে বাবা-মায়ের দোয়া দরকার আছে। খোকনের কথাগুলো আর নিতে পারছিলাম না। ৩০ টাকার ভাড়া একশো টাকার একটা নোট দিলাম। প্রথমে নিতে চায়নি। তারপর বুঝিয়ে বলার পর নিয়েছে। বাসায় চলে আসলাম। 

গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রীদের নানান কাহিনী নিশ্চয়ই আপনাদেরও জানা। পড়ালেখার বিদ্যাপীঠ ইডেন কলেজ অতীতে নানা ইস্যুতে আলোচনায় এসেছে। একটা সময় ছিলো ইডেনের ছাত্রীদের সহজে বিয়ে হতো না। তাদের নিয়ে নানা কল্প-কাহিনী প্রচলিত ছিলো। মাঝখানে সেসব কিছুটা মুছে যেতে বসেছিলো। কিন্তু সবকিছু কি আর সহজে ম্লান হয়। ছাত্রলীগ সেই পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনেছে। পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তোলা হয়েছে নেত্রীদের বিরুদ্ধে। নিজ দলের নেত্রীদের এ জন্য মারধরও করেছে বিক্ষুব্ধরা। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতেও।

এদিকে ইডেনে এ ধরণের অনৈতিক কাজের সমর্থনে বিভিন্নজনের পোস্ট ঘুরছে ফেসবুকেও। সেখানে যে ছাত্রলীগের নেত্রীরা সাধারণ সুন্দরী ছাত্রীদের দিয়ে দেহব্যবসা করায় সে বিষয়টিও জানা যাচ্ছে অনেকের পোস্টে। এইসব কাহিনী খুবর কষ্টের। বিশেষ করে যে সব ছাত্রী এমন বর্বরতার শিকার হয়েছেন কিংবা হচ্ছেন তাদের জন্য বিষয়টি সারা জীবনের কলঙ্ক। সতীত্বকে বিলিয়ে দিয়ে সারাজীবন কারো ঘরনী হয়ে থাকাটা যে কত বড় আত্মপ্রবঞ্চনার শামিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাই হোক এখনো ইডেন কান্ডের শেষ হয়নি। এমন ঘটনার পর যার ঘরে ইডেনের ছাত্রী রয়েছে মেয়ে, বোন কিংবা বউ হয়ে তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে সেটি অনুমেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বিশ্ব শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। ঠিক সেই সময়ে নিজের ছত্রছায়ায় থাকা এই ছাত্রসংগঠনের একটি ইউনিট যে শান্তি বিনাসী-নির্লজ্জ খেলা খেললো সেটি নি:সন্দেহে প্রধানমন্ত্রীর জন্যও কষ্টের। 

ছাত্রলীগের ছেলেরা অবশ্যই নিজেরা নিজেরা মারামারি করেনি এ সপ্তাহে। তবে বিপক্ষ ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটির নেতাদের পিটিয়েছে রাজপথে ফেলে। নতুন কমিটির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলো ফুলের তোড়া নিয়ে। পথিমধ্যে তাদের বেদম পিটিয়েছে ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা। 

এবার একটু ঢাকার বাইরে যেতে হচ্ছে। কেননা ঘটনাটি মর্মান্তিক। পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে হিন্দু পুন্যার্থীদের একটি ট্রলার ডুবিতে এ পর্যন্ত ৬৮ জনের সলিল সমাধি হয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে নৌকাটি অতিরিক্ত লোক নিয়ে ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। এসময় তীরে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলো। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অতিরিক্ত লোকের এই ¯্রােত ঠেকানো যায়নি। তাইতো মাঝ নদীতে ডুবে এই লাশের স্তুপ। নিকট অতীতে এতো বেশি সংখ্যক লোক পানিতে ডুবে মারা গেছে এমন নজীর নেই। 

লেখাটা ঢাকার চিঠি তাই ফিরে আসছি আবারো ঢাকায়। চিত্র নায়িকা বুবলি মা হবেন। ইতোমধ্যে খবর চাউর হয়েছে। তবে বাবা কে সেটি এখনো জানাননি তিনি। সংবাদ সম্মেলন করে নাকি তিনি জানাবেন সেটি। চিত্র নায়িকা বলে কথা- মা হবেন, আর বিশ্ববাসী জানবে না- সেকি হয়? তবে খবর হলো- বুবলির অনাগত সন্তানের বাবা নাকি আমাদের নাম্বার ওয়ান-সাকিব খান। কিছুদিন আগে অপুর ছেলেরও বাবা হয়েছিলেন। শুনলাম বুবলি আর শাকিব আমেরিকায় একসঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকেই মা হওয়ার সূত্রপাত। কিছুদিন আগে শাকিব দেশে ফেরেন। মিডিয়া পাড়ায় বুবলির মা হওয়ার খবর যতোটা না উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি উত্তাপ সম্ভাব্য বাবাকে নিয়েও। তবে ইতোমধ্যে শাকিবের বিষয়টি খোলসা হয়েছে। যদিও বুবলির মুখ থেকেই আসবে ফাইনাল খবর। জানি না শেষের খবরটি খুশির নাকি এতেও মন খারাপের কিছু রয়েছে। বাবা-মা হবে সেটা আনন্দের খবর। কিন্তু এটি নিয়েও কেন এমন রহস্য থাকবে? নাকি সিনেমা জগতের মতোই সবকিছুতে একটা রোমান্টিকতা থাকতে হবে। এটা কি রোমান্টিকতা নাকি অনাগত বাচ্চা আর দুই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য লজ্জা বিষয়টি জানতে ইচ্ছে করে। 

লেখক: ঢাকা অফিস প্রধান-নবযুগ। 
 

শেয়ার করুন: