শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

নিউইয়র্কে বাজিমাত  করা কে এই  মামদানি

নবযুগ রিপোর্ট

আপডেট: ১৬:৩১, ৭ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে বাজিমাত  করা কে এই  মামদানি

ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্ক সিটি নতুন একজন মেয়র পেল। তিনি ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। প্রথম মুসলিম মেয়র। কয়েক মাস আগেও রাজ্যের স্থানীয় রাজনীতির বাইরের মহলে তেমন পরিচিত ছিলেন না তিনি। অথচ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহরের মেয়র নির্বাচনে সাবেক গভর্নর অ্যানড্রু কুমোকে পরাজিত করেছেন। বার্তা সংস্থা এপির মতে, মামদানির এই বিজয় এক ঐতিহাসিক নির্বাচনী অভিযানের সমাপ্তি।

এই নির্বাচন ভোটকেন্দ্রে রেকর্ডসংখ্যক ভোটার টেনেছে। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও মহল্লা থেকে হাজারো স্বেচ্ছাসেবককে সংগঠিত করেছে এবং সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এই নগরনেতৃত্বের প্রতিযোগিতার দিকে। বর্তমান নিউইয়র্ক রাজ্যের অ্যাসেম্বলিম্যান মামদানি এখন শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র।
তিনি এ বছর জুনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে কুমোকে পরাজিত করেন। কোমো ২০২১ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে গভর্নর হিসেবে পদত্যাগ করেন। প্রাইমারিতে পরাজিত হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচনে থেকে যান। এরপর মামদানি নিরলস প্রচারণা চালান। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়া, বহু-ভাষিক প্রচার এবং কমিউনিটিভিত্তিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির এই জয় ডেমোক্রেট পার্টির জন্য একটি বড় শিক্ষা, যারা এখনো ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচনে পরাজয়ের ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করছে।
কে এই মামদানি?
জোহরান কওমে মামদানি একজন ৩৪ বছর বয়সী গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী। তিনি উগান্ডার প্রখ্যাত অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের পুত্র। উগান্ডার কাম্পালায় জন্ম নেয়া মামদানি সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে চলে যান। মেইনের বোউডয়িন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি আবাসন পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন, যেখানে নি¤œ-আয়ের পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ রোধে সহায়তা করতেন। ২০২০ সালের নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে তিনি কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়া অঞ্চল (৩৬তম জেলা) থেকে নির্বাচিত হন। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে তিনি বিয়ে করেন ২৭ বছর বয়সী সিরীয় শিল্পী রামা দুয়াজিকে, যিনি ব্রুকলিনে থাকেন। তার কাজ দ্য নিউ ইয়র্কার, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও ভাইস-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে অবস্থান
মামদানি যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম কণ্ঠস্বর, যিনি প্রকাশ্যে ইসরাইলের গাজায় যুদ্ধের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর এক্সে তিনি লিখেছেন, আমি সবসময় তথ্য ও ন্যায়ের ভাষায় স্পষ্ট থাকব: ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনআন্দোলনের সমর্থক। ম্যানহাটনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই আন্দোলনই আমার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু- যা অহিংসার দর্শনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাংবাদিক মেহেদি হাসানের এক সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যদি নিউইয়র্কে আসেন, তাহলে তিনি কী করবেন? মামদানির জবাব ছিল সরাসরি- ‘মেয়র হিসেবে আমি নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করব!’ তিনি আরও বলেন, এ শহর এমন এক জায়গা যেখানে আমাদের মূল্যবোধ আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। এখন সময় এসেছে আমাদের কর্মকা-ও তেমন হওয়ার। ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা’ স্লোগান থেকে নিজেকে দূরে না সরানোর জন্যও তিনি বিতর্কে জড়িয়েছেন। অনেক ইহুদি নেতা ও রক্ষণশীল ভাষ্যকার এই স্লোগানকে উসকানিমূলক ও ইহুদিবিদ্বেষী বলে সমালোচনা করেন। এর জবাবে ২০২৫ সালের জুনে দ্য বুলওয়ার্ক পডকাস্টে মামদানি বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে, যিনি ৯/১১-পরবর্তী আমেরিকায় বেড়ে উঠেছেন, আমি ভালোই জানি কীভাবে আরবি শব্দ বিকৃত করে অন্য অর্থে ব্যবহার করা যায়। এই স্লোগান সহিংসতার আহ্বান নয়- বরং বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে সংহতির বার্তা।
কুমোর প্রচারণা মামদানির মুসলিম পরিচয় ও ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থানকে লক্ষ্য করে তাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিযোগ তোলে। এর জবাবে মামদানি বলেন, এই শহর বা দেশে ইহুদিবিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। তিনি বারবার স্পষ্ট করেছেন, তার সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে- কোনো ধর্ম বা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়।
কীভাবে এখানে পৌঁছালেন?
২০২৫ সালের জুনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে কুমোকে ১৩ পয়েন্টে হারান মামদানি- মোট ভোট পান ৫৭৩,১৬৯। যেহেতু তিনি প্রথম রাউন্ডেই ৫০ ভাগ অতিক্রম করতে পারেননি, তাই র‌্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিংয়ের পরবর্তী ধাপে শেষ পর্যন্ত বিজয় নিশ্চিত হয়। কোমো পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকেন, বিশাল অর্থায়ন ও পরিচিতির জোরে প্রচারণা চালান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটারদের মন জয় করতে ব্যর্থ হন।
 

শেয়ার করুন: