শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

মন্ত্রিসভার শপথ, নতুন চ্যালেঞ্জ

ঢাকা অফিস

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪

মন্ত্রিসভার শপথ, নতুন চ্যালেঞ্জ

ফাইল ছবি

টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চমবারের মতো সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও শপথ নিয়েছেন। দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের। বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্যদিয়ে হওয়া নির্বাচনের পর বড় চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে পথচলা শুরু করছে নতুন সরকার। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয় নতুন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন ও গোপনীয়তার শপথ নেন।
প্রধানমন্ত্রী শপথ নেয়ার পর প্রেসিডেন্ট তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর নতুন ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে সরকার প্রধানের এক পাশে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং অন্য পাশে প্রেসিডেন্টের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা।

শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও ছিলেন প্রথম সারিতে। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও অংশ নেন শপথ অনুষ্ঠানে।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মসিউর রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মন্টিটাস্কি, ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনসহ রাষ্ট্রদূতরা শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন। শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের মাঠে চা চক্রে অংশ নেন অতিথিরা। শপথ অনুষ্ঠান শেষে নতুন মন্ত্রীদের দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে রেখেছেন।

এ ছাড়া নতুন দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়েই থাকবেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেই থাকছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আনিসুল হক আইন মন্ত্রণালয় এবং নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প মন্ত্রণালয়েই থাকছেন। আসাদুজ্জামান খান নতুন মন্ত্রিসভায়ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকছেন। মো. তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়েই দায়িত্ব পালন করবেন। মুহাম্মদ ফারুক খান, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন।

বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে দেয়া হয়েছে সমাজ কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। সাধন চন্দ্র মজুমদার আবারো খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী করা হয়েছে আবদুস সালামকে। বিদায়ী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন। র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ভূমি মন্ত্রণালয়, জাহাঙ্গীর কবির নানক, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, মো. আবদুর রহমান, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, মো. আবদুস শহীদ, কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। স্থপতি ইয়াফেস ওসমান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েই আবার দায়িত্ব পেয়েছেন। ডা. সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।  মো. জিল্লুল হাকিম, রেলমন্ত্রী হয়েছেন। জনপ্রশাসনের বিদায়ী প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মন্ত্রণালয়ের পুরো দায়িত্ব পেয়েছেন। নাজমুল হাসান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী, সাবের হোসেন চৌধুরী, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পুরো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।

প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে নসরুল হামিদ বিপু , বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বেই থাকছেন।  খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আগের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ই সামলাবেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন বিদায়ী প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেই থাকছেন জাহিদ ফারুক। সিমিন হোসেন রিমি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মো. মহিবুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, শফিকুর রহমান চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়,  রুমানা আলী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়,  আহসানুল ইসলাম টিটু, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২২টি আসনে জয় পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ৬২ আসনে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি করে আসন পায়। একটি আসনে জয় পায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। বুধবার ২৯৮ জন সংসদ সদস্য স্পিকারের কাছ থেকে শপথ নেন। সেদিনই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। উপনেতা করা হয় বেগম মতিয়া চৌধুরীকে। শেখ হাসিনা বুধবার বিকালে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে টানা চতুর্থ মেয়াদে তাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পান।

শেয়ার করুন: