শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

ঢাকার চিঠি

মোটরবাইকের গতিতে ধেয়ে আসে ‘মুসিবত’ 

মেসবাহ শিমুল, ঢাকা অফিস

প্রকাশিত: ২১:০১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

মোটরবাইকের গতিতে ধেয়ে আসে ‘মুসিবত’ 

ফাইল ছবি

ঢাকা মেডিকেলে একটি ছেলের জন্য বেডের ব্যবস্থা হয়েছে। গরীব বাবার ছেলে। সম্প্রতি একটি গ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে মোটর সাইকেল ভ্রমণে গিয়ে মারাত্মকভাবে দুর্ঘটনায় পড়ে। মুখ ও মাথা অনেকটা থেতলে গেছে। বেঁচে আছে এটাই আল্লাহর দয়া। এই অবস্থায় গরীব বাবার আর কিইবা করার ছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে নানামুখী সহায়তা শুরু হয়। তারপর ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউ ঘুরে এখন তার ঠাঁই হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। এতে কিছুটা হলেও নিস্তার পাচ্ছে গরীব ভ্যান চালক বাবা। যদিও চিকিৎসার একটি বড় যোগান বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া সহায়তা। 

সম্প্রতি বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখে গভীর রাতে ঢাকার সেগুনবাগিচা হয়ে খিলগওয়ের বাসায় ফিরছি। সঙ্গে আরেক সহকর্মী। কাকরাইল-নয়াপল্টন হয়ে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত আসতে অনেক মোটরসাইকেল দেখলাম। তাদের গতি আর ফুর্তি দেখে মনে হয় আর্জেন্টিনা নয় কাঁপ জিতেছে বাংলাদেশ। ফুটবলে প্রিয় দলের জয় মানেই হয়তো এমন আনন্দ। তবে গভীর রাতে এমন বাইক ছোটানো নিশ্চয়ই ঝুঁকিপূর্ণ। 

দেশে এখন নিত্যপণ্য কিংবা জনগণের ভোগান্তির মাত্রা ঠিক ওই দূরন্ত মোটর বাইকের মতো। ছুটছে তো ছুটছেই। এতে কেউ কেউ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। আবার কেউ দুর্ঘটনায় না পড়লেও খেই হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। দিনকে দিন সাধারণ মানুষের জন্য দিন গোজরানো কঠিন হয়ে পড়ছে। চাল-তেল-নুন থেকে শুরু করে সবকিছুরই দাম বাড়ছে। যদিও তাতে কর্তাদের তেমন কিছু করার আছে বলে মনে হচ্ছে না। 

সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সারা দেশে একের পর এক কমিটি আসছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে রাজনীতির মোটর বাইকের গতি এখন উর্ধমুখী। এই অবস্থায় সরকারের সবটুকু খেয়াল ক্ষমতার মসনদ। যেই মসনদে বসে প্রায় দেড় দশক দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে সেই মসনদেই থেকে যেতে চায় সরকার। এতে করে নাকি মানুষের সেবায় আরো গতি আসবে। হয়তো হতেও পারে। 

ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছে। দেশের সর্বোচ্চ শক্তিশালী একটি ব্যাংক বিতর্কের মুখে পড়ে রাতারাতি খালি হতে শুরু করে। যদিও সেটি ছিলো অনেকটা গুজব। এখন সেই প্রবণতা বন্ধ হয়েছে। মানুষ আগের মতই আস্থার সঙ্গে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করছেন। টাকা ডিপোজিট রাখছেন। 

এই যে মোটর বাইকের গতির চেয়ে বেশি বেগে যে গুজব ছড়ালো তাতে লাভ হলো কার? অনেক ক্ষুদ্র ডিপোজিটর ভয়ে ডিপোজিট তুলে নিয়ে বাড়িতে রাখেন। অনেকভাবে সেগুলোর ক্ষতিও হয়েছে। গ্রামে গ্রামে ডাকাতের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ডাকাতের সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা হয়। 

এই যে নিয়ন্ত্রণহীন একটি অবস্থা এর সঙ্গেও দেশের সার্বিক স্ট্যাবিলিটির সম্পর্ক রয়েছে। এই স্ট্যাবিলিটি মানেই সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনায় সরকারের সক্ষমতার। টানা দুই মেয়াদে সরকারে থেকেও যখন দেশে এই ধরণের পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তখন সেটি জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়ে সরকারের ঘাড়েই। 

বিএনপির মহাসচিব, জামায়াতের আমীরসহ অনেক বিরোধী নেতা এখন কারাগারে। তাদের নামে বিভিন্ন ধারার মামলা। নানা কিসিমের মামলা হলেও সংক্ষেপে এটাকে ‘রাজনৈতিক মামলা’ বলা হচ্ছে। এই মামলার গতিও দূরন্ত মোটর বাইকের মতো। বাড়ছে তো বাড়ছেই। কখন কার ঘাড়ে গিয়ে পড়ে আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। ঘাড়ে পড়লেই মুসিবত। যেই মুসিবতে রয়েছেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানও। তিনি কিছুদিন আগেও দেশের বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে বারবার এই ‘মুসিবত’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। জনগণের মুসিবত উদ্ধার হলেও এখন তিনি নিজেই মুসিবতে। এখান থেকে কিভাবে উদ্ধার হবেন সেটি হয়তো তিনিও জানেন না। 

দেশের নানাবিধ মুসিবত। এই মুসিবতের মধ্যে কার খবর কে রাখে। তারপরও ছেলেটির চিকিৎসার জন্য অনেকেই এগিয়ে এসেছেন সেটি অনেক বড় ব্যাপার। এভাবে যদি রাষ্ট্রীয় মুসিবত দূর হওয়ার কোনো সম্মিলিত উদ্যোগ থাকতো তাহলে হয়তো আমাদের সামগ্রিক মুসিবতের একটি আসান হতো। 
 

শেয়ার করুন: