বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

বিএনপি কি ভোটের আগেই ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা চায়?

শামসুদ্দীন আজাদ, সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৫ মার্চ ২০২৩

বিএনপি কি ভোটের আগেই ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা চায়?

ফাইল ছবি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ। পূর্ণ মেয়াদ পার করতে পারলে সরকারের ১৫ বছর পূর্তি হবে। এর আগে ৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ২০০১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। সরকার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে। বিএনপি দীর্ঘ ১৪ বছরের বেশী সময় ক্ষমতার বাইরে থেকে অনেকটা অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে।

তারা কোন আইন কানুন মানতে রাজী নয়। সংবিধান মানতে রাজী নয়, প্রয়োজনে তারা যুদ্ধাবস্থায় ফিরে যাবে, সংবিধান বদল করে ফেলবে। মোটামুটি বলতে গেলে নির্বাচনের আগেই তারা স্বরূপে আবির্ভাব হতে চায়, এর সাথে তাদের দেশী-বিদেশী কুশিলবদের সমর্থন চায় তাদের যে কোন অপকর্মের। এক কথায় বলতে গেলে বিএনপি আগামী ১২তম সংসদ নির্বাচনের আগেই ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো কোন ব্যাক্তি, কোন রাজনৈতিক দল অনেক কিছু চাইতে পারে। চাওয়াটা তার সাংবিধানিক অধিকার। তবে সেটা যেন যৌক্তিক চাওয়া হয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এখানে আইন-শাসন-বিচার বিভাগ রয়েছে। এখানে সংবিধান রয়েছে। এখানে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। একটি কার্যকর সংসদ রয়েছে। সুতরাং যে যাই করুক না কেন বা তার চাওয়া পাওয়া দাবী দাওয়া যাই থাকুক না কেন তা দেশের প্রচলিত আইন কানুন মেনেই চাইতে হবে।

প্রিয় পাঠক একবার ভেবে দেখুন বিএনপির মন মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? এটি কি কোন সুস্থ স্বাভাবিক রাজনৈতিক দলের লক্ষণ? তাই আমি আমার লেখার টাইটেলটা দিয়েছি বিএনপি কি ভোটের আগেই ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চায়? পৃথিবীর কোন মানুষ আইনের উর্ধ্বে নয়, কেবল বনের হিং¯্র প্রাণী ছাড়া বিএনপি যতই হুংকার ছাড়ক না কেন আর জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে যতই বেহায়াপনা অঙ্গ-ভঙ্গী করুক না কেন দিন শেষে যখন ঘরে ফিরে যেতে হয় তখন অবশ্যই ঘাঁড় সোজা করে ঘরে ঢুকতে হয়। ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র উপায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার আর কোন উপায় নেই। সরকার সাফ সাফ বলে দিয়েছে শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের যে কোন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল যদি ক্ষমতায় যেতে চায় তাকে সরকারের অধীনে থেকে নিয়ম-কানুন মেনে নির্বাচনে আসতে হবে। যেমনটি হয়েছিল ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। দেশবাসীর নিশ্চয় স্মরণ আছে এই একই বিএনপি গর্জন করে উঠেছিল ২০১৪ সালের নির্বাচন তারা হতে দিবে না। যেকোন মূল্যে প্রতিহত করবে। সরকার ও বিএনপির এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে যেকোন মূল্যে তারা নির্বাচন করবে। একে তো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যেমন রয়েছে, তেমনি অসাংবিধানিক অপশক্তির পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের আশংকা ছিল।

আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী নির্বাচনী মাঠে সরব ছিল। নির্বাচনী কেন্দ্রে তাদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মত, এমন অবস্থায় বিএনপিও মাঠে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মারমুখি হয়ে হয়। তারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখিয়ে আসছিল।  ভোট কেন্দ্রে বোমা হামলা করে ভোট কেন্দ্র জ¦ালিয়ে দিয়েছিল।  ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছিল, নির্বাচনী সামগ্রী বহনকারি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সব জিনিসপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিল। ৫ শর বেশী নির্বাচনী কেন্দ্র জ¦ালিয়ে দিয়েছিল। ভোট দিতে আসা সাধারণ মানুষকে মারধর করেছিল, পুলিং এজেন্ট, প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে, এমনকি একজন কলেজ শিক্ষক প্রিজাইডিং অফিসারকে গুলি করে হত্যা করেছিল তারা। এভাবে সারা দেশে বিএনপি একযোগে সহিংসতা আর অগ্নিসংযোগ করেছিল ২০১৪ সালে। কিন্তু কোন কিছুতেই সরকারকে তার অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। দেশে কিছু বিচ্ছিন্ন সহিংস ঘটনা বিএনপি করলেও সারাদেশে মানুষ সরকারি নিরাপত্তায় ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে, ভোট দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশাল জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত।

আবার যখন ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় এলো, বিএনপি যথারীতি ঘোষণা দিল তারা এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশ নিবে না, নির্বাচন হতে দেবে না, নির্বাচন প্রতিহত করবে। প্রয়োজনে সরকার উৎখাত করতে যা যা করা দরকার তাই করবে। কিন্তু আমরা কি দেখলাম শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশ নিল, সারাদেশে প্রার্থী মনোনয়ন দিল তবে অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে লক্ষ্য করেছি এক আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে সারা দেশ থেকে দলীয় প্রার্থী থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিল। আর সেই টাকা লন্ডনে বৃটিশ ভাইস রয়ের একাউন্টে জমা দিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার করার জন্য লবিষ্ট ফার্মে দেয়া হল। এরপরও আমরা দেখলাম এত অপপ্রচার, এত মিথ্যাচার, এত ষড়যন্ত্র করেও শেষ পর্যন্ত এই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। ভোট যথারীতি চলছিল, মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছিল, কোথাও কোন গন্ডগোলের ঘটনা হয়নি। দুপুর ১টার সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রেস কনফারেন্স করে বক্তব্য দেন ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে চললে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু দিন শেষে যখন দেখল বিএনপিকে তার অপকর্মের জন্য সারা দেশের মানুষ প্রত্যাখান করেছে। সাথে সাথে মির্জা ফখরুল ভোল পাল্টিয়ে বলা শুরু করলো নির্বাচনের ফলাফল মানি না। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। আরও আগ বাড়িয়ে বলা হল আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে রাখা হয়েছে।

তাদের ৬ জন সংসদ সদস্য বিজয়ী হয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিল, এমনকি সংরক্ষিত নারি আসনে, কেবল ১টি আসনও গ্রহণ করে নিল বিএনপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে সেই সংরক্ষিত আসনে সংসদে পাঠানো হল। দীর্ঘ ৪ বছর ৭ জন সাংসদ সংসদে যোগ দিল। সংসদে তাদের বক্তব্য ছিল বিভিন্ন বিতর্কে অংশও নিল একজন সংসদ সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের দেয়া বেতন ভাতা, গাড়ি-বাড়ি সহ সব সুযোগ সুবিধাও ভোগ করলো বিএনপির ৭ জন সাংসদ। এরই মধ্যে আবার যখন সংসদের দ্বাদশতম নির্বাচনের সময় এলো আবার বিএনপি স্বরূপে আবির্ভূত হলো। সহিংস রূপ নিয়ে মাঠে নামল, ডিসেম্বরের ১০ তারিখ সরকার পতনের ঘোষণা দিল এবং আমান উল্লাহ আমান সন্ত্রাসী কায়দায় আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গী দিয়ে ঘোষণা দিয়েছিল ডিসেম্বরের ১০ তারিখের পর থেকে হাসিনার কথায় দেশ চলবে না। দেশ চলবে নাকি খালেদার কথায়। এরই মধ্যে তাদের ৭ জন সাংসদ সংসদ থেকে পদত্যাগও করলেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে কিন্তু তারা গত ৪ বছর যে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে সেসব অর্থ কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে দেয়নি।

সরকার স্পষ্ট বলে দিয়েছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব। তার যে চিকিৎসা দরকার তা ইতিমধ্যে সরকারি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ডাক্তারেরা সনাক্ত করেছেন। তাকে চিকিৎসাও দিয়েছে। বিএনপি সেটা মানতে রাজি নয়। তারা তাকে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন। তার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি ছিল বিএনপির নাটক। বিএনপি বেমালুম ভুলে গেছে তাদের নেত্রী ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী তার থাকার কথা কাশিমপুর কারাগারে। কিন্তু সরকার তার বয়স, শারীরিক অবস্থার বিবেচনা করে মানবিক কারণে জেলে না রেখে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেন।

অথচ বিএনপি কোন আইন-কানুনের তোয়াক্কা করে না। তারা যা খুশি তা করতে চায় কিন্তু দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে যাওয়ার কোন ক্ষমতা যে বিএনপির নেই তা তারা বুঝেও না বুঝার ভান করছে। নিজেদের দেহের শক্তি ক্ষয় করিয়ে এবার বিএনপি দ্বারস্থ হয়েছে বিদেশী কূটনীতিকদের। রীতিমত কূটনীতিক পাড়ায় দৌড়ঝাপ, ডিনার, লাঞ্চ করে তাদের আনুকল্য পেতে মরিয়া দলটি। তাদের পরামর্শে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত রয়েছে।

সম্প্রতি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য জমা দিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার অপচেষ্টা করছে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন ডক্টর কামালের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান, ড. শাহদীন মালিক, আদিলুর রহমান, বদিউল আলম মজুমদার, রিজওয়ানা হাসান। এরা সবাই মার্কিন এজেন্ট। যারা সব সময় দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও ভুয়া লোক দেখানো। তারা আসলে নির্বাচনও চায় না। তারা চায় বল প্রয়োগে আর বিদেশীদের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার নিশ্চয়তা। সেই নিশ্চয়তা পেলে তারা ভোটের দাবী থেকেও সরে আসবে।

লেখক: প্রবাসী রাজনীতিক। 

শেয়ার করুন: