ছবি: সংগৃহীত
৫ নভেম্বর নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ভোর রাতেই পৃথিবী জেনে যায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর ট্রাম্প নিজেও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে আগাম জয়ের ঘোষণা দিয়ে তার ভক্তদের ও গোটা আমেরিকানদের অভিনন্দন জানান। তারপর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও নিয়মমত ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে ঘোষণা দেন। নির্বাচনের আগে বিজয়ের কৌশল হিসেবে কামালা ও ট্রাম্প একে অন্যের সমালোচনা করলেও জয় পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর কারো তেমন কোন উচ্চ বাচ্যতা লক্ষ্য করা গেল না।
ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দু'পক্ষই ভোটারদের সিদ্ধান্ত যার যার মত করে মেনে নিলেন। কেউ কোনো কারচুপির অভিযোগ তুললেন না, কোন মিথ্যা বা কাল্পনিক বিষয়াদিও তুললেন না। মারামারি, আগুন দেয়া, লুটপাট, দখলদারি এসবও ঘটলো না। জুতা মারো তালে তালে, হই হই রই রই-
কামালা বাইডেন গেলি কই, কামালার চামড়া তুলে নিব আমরা, একটা একটা ডেমোক্রেট ধর সকাল-বিকাল নাস্তা কর, এমনতর অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ স্লোগানও শোনা গেল না কোথাও। দুপক্ষই জনসমর্থন মন থেকে মেনে নেয়া ও শ্রদ্ধা করে বলেই এমনটি সম্ভব হয়। যারা বিজয়ী তারাও যেন তেমন উল্লাস করছে না বা কিছু বলছে না পরাজিতরা আরও মন খারাপ করবে বলে। এমনটাই এদের সামাজিক শিক্ষা।
পরদিন ছয় নভেম্বর যখন কাজে গেলাম পঞ্চাশ জনের মতো স্টাফ আছে আমাদের স্কুলে, কিন্তু কেউ নির্বাচন নিয়ে টু শব্দটি করল না। অথচ আমি জানি এদের মাঝে
জয়ী কিংবা পরাজিত দু’পক্ষই আছে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, নির্বাচন নিয়ে কর্মস্থলে পক্ষ-বিপক্ষ মতামত বা আলোচনা শিক্ষা বোর্ড ও স্কুল এডমিনিস্ট্রেশন থেকে বার বারই ইমেইল ও ট্যাক্স করে রিমাইন্ড করা হচ্ছিল। যতদূর জানি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও অনুরূপ ইন্সট্রাকশন ছিল শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার জন্য।
অন্যদিকে আমাদের বাংলাদেশে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতো পৃথিবীর বুকে উদাহরণসম। কারণ ভোট চুরি, ভোট বিহীন নির্বাচন হয়তো শুধু বাংলাদেশীই হয়। আবার এমন জঘন্য বা নষ্ট নির্বাচনে জিতেও বিজয়ীরা লুটতরাজ, খুন-খারাবি, অগ্নি সন্ত্রাস, দখল, রাহাজানি, ধর্ষন, মামলা, হামলা, গুম, জুলুম সবই করে পরাজিতদের উপর। এটাই আমাদের কালচার।
এছাড়া মাইনরিটিরা নির্যাতিত হয় দু’পক্ষ দ্বারাই। এ সব কিছুই আমাদের সবার জানা, যা রীতি বা নিয়মে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে যদি নিরপেক্ষ কোন সরকারের দ্বারা নির্বাচন সুষ্ঠু বা সঠিক হয়ও, তখনও পরাজিতরা সেটাকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং নির্বাচিতদের বা ওই নিরপেক্ষ সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবে। এটাও যেন এক অমোঘ নিয়ম।
বীর বাঙালি এক বিচিত্র জাতি। কে আমাদের বোধ, শিক্ষা, সততা, সহমর্মিতা, ভদ্রতা শিখিয়ে দেবে জানিনা? যদি না আমরা নিজেরা নিজেদের শুদ্ধ না করি তবে ট্রাম্প, বাইডেন, পুতিন, মোদি এদের গালি দিয়েই কি হবে আর এদের পদযুগলে ব্যারেল ভর্তি তেল মর্দন করেই বা কি হবে!
আমেরিকাও দুটি পার্টি বা দুই শিবিরে বিভক্ত, আমরাও বলা যায় তাই। কিন্তু ওরা জাতীয় স্বার্থে এক। আমাদের মত জঘন্যভাবে হানাহানি কাটাকাটি করে না। আমরা তো নিজের নাক কেটে হলেও পরের যাত্রা ভঙ্গ করি। ৫৩ বছরেও আমরা দুগ্ধ পোষ্য শিশুই রয়ে গেলাম! হে মহান প্রকৃতি আমাদের মনটা বড় করে দাও, প্রকৃতপক্ষেই আমাদের ভেতরটা সংস্কার করে দাও।
আমরা আর এভাবে বাঁচতে চাই না।
মুক্তি দাও প্রভু, কতিপয় দুর্বৃত্তদের জন্যে আমাদের সবার কেনো সহমরন হবে?!
লেখক: অভিনেতা।